গণবাদী তথ্যমন্ত্রী এবং মানবতাবাদী তথ্য সচিবকে ধন্যবাদ : তামাকের উৎপাদন, বিপনন নিষিদ্ধে নেতৃত্ব দিন

552

DSC_0126

 

আলী নিয়ামত- ৭ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : আইনমন্ত্রী, আইনমন্ত্রণালয়, স্বাস্থমন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে কথা উচ্চারণ করতে পারে না, কিংবা উচ্চারণ করতে সাহস পান না, তা অবলীলায় গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, এম.পি, গত ৫ জানুয়ারী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ইসি আয়োজিত তামাক ও মাদক বিরোধী কর্মশালায় জোরেশোরে বললেন প্রধান অতিথির ভাষণে। বলার অপেক্ষা রাখে না একজন গণবাদী নেতা সব সময়ই সকল প্রতিকূল অবস্থায়ই গণমানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটান এবং গণমানুষের আকাঙ্খা বাস্তবায়নের জন্য আমরণ লড়াই করে থাকেন।

তামাকের চাষ, উৎপাদন এবং বিপনন নিষিদ্ধ করার সময় উপযোগী বলিষ্ঠ আহ্বান জানালেন তিনি উপস্থিত সকল তামাক ও মাদক বিরোধী কর্মকর্তা ও গবেষক এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রী, সাংসদ, সচিব এবং কর্মকর্তাদের প্রতি। তার এ ঐতিহাসিক বক্তব্য বিশ্বময় আলোড়ন সৃষ্টি করবে, ধূমপান-মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী জাতীয় জোট:ক্যাট, ৫ বার জাতিসংঘের পদক প্রাপ্ত সংগঠন-আধূনিক জাতীয় সম্বনয় কমিটির মহাসচিব এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন সাংবাদিক ও লেখক ফোরামের সভাপতি হিসেবে এ কথা আমি জোর গলায় বলতে পারি। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সেদিন আরো বলেন, সরকারের দ্বৈত এবং বৈষম্যমূলক আচরণের জন্যেই বছরে ৬০ হাজার মানুষের জীবন হরণকারী আর ১০ লক্ষ মানুষের পঙ্গুত্ববরণকারী ধূমপান ও তামাকের প্রচলিত আইন (২০০৫, সংশোধিত ২০১৪) আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হচ্ছে না। তামাক চাষ বন্ধ, তামাকের উৎপাদন ও বিপনন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার আন্দোলনে আপনারা কেউ নামছেন না কেন? ধূমপান ও তামাক উৎপাদন এবং ব্যবসা আইনগতভাবে বৈধ রেখে ধূমপান ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। এ মৃত্যুঘাতী ও জাতীয় উন্নয়ন ধ্বংসকারী ধূমপান ও তামাক ব্যবসা থেকে সরকার প্রতিবছর ৫ হাজার কোটি টাকা আয়কর পায়। অথচ আধূনিক ও ক্যাট এর গবেষণা অনুযায়ী জানা যায় প্রতিবছর ধূমপানজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় হয় প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। আর ১০ লক্ষ মানুষের পঙ্গুত্ববরণ করার কারণে লক্ষ লক্ষ পরিবার কর্মহীন ও অসহায় হয়ে পড়ে। তাই সময় এসেছে আইনটির যথার্থ বাস্তবায়নে কঠোর হওয়া এবং পর্যায়ক্রমে একটি নির্দিষ্ট সময়ে তামাকের চাষ, উৎপাদন ও বিপনন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ নিলে তথ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অধিদপ্তরের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় তামাক ও মাদক বিরোধী সমন্বয় সেল এতে পূর্ণ সহযোগিতার হাত বাড়াবে।

উল্লিখিত অনুষ্ঠানের সভাপতি তথ্য সচিব মরতুজা আহমদ প্রশাসনের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়েও একই সুরে বললেন, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ধূমপান ও মাদকের টাকা ভূতে জোগায়। আর এ ভূতকে তাড়াতে ভূতের উৎস বা শক্তিকে আর বরদাস্ত করবো না। গণমাধ্যম তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মেনে না চললে শাস্তির ব্যবস্থা করবো। ইতোমধ্যেই এ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তথ্য সচিবের এই সাহসী বক্তব্য যা মানবতাকে সমুজ্জ্বল করেছে, আর তাকে অধিষ্ঠিত করেছে একজন মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে। স্পষ্টবাদী এই দুজন মন্ত্রী ও সচিবকে তাই আমরা জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ প্রেক্ষাপটে মন্ত্রী ও সচিবের অবগতির জন্য বলছি, ১৯৮৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বের প্রথম ধূমপান ও নেশা বিরোধী ছাত্র সংগঠন-স্টুডেন্টস অ্যান্টি স্মোকিং কমিটি সাস্ক গঠিত হয়। এই প্রতিবেদক সাস্কের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৮৬ সালেই সাস্কের সভাপতি হিসেবে আমি তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এবং বর্তমানের প্রধামন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে মতবিনিময় করি। সে সময় তিনি দেশের সকল স্কুল, কলেজ, মাদরাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ধূমপান ও মাদক বিরোধী কার্যক্রম ছড়িয়ে দেবার আহ্বান জানান। যা বাংলাদেশ টেলিভিশন সহ সকল গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত ও সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ২০১৬ সালে এসে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সেদিন একই উচ্চারণ করে বললেন, সকল স্কুল, কলেজ, মাদরাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ধূমপান ও মাদক বিরোধী কার্যক্রম চালাতে হবে এবং মন্ত্রী, সাংসদ, সচিব, শিক্ষক, অভিভাবক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী সহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আগে ধূমপান ও মাদক ছেড়ে দিতে হবে-তবেই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৪ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হবে। উল্লেখ্য, গণচীনের বেইজিং এ অনুষ্ঠিত ১৯৯৮ সালে ১০ম বিশ্ব ধূমপান মুক্ত সম্মেলনে (২৪-৩১ আগষ্ট, ১৯৯৮) বিশ্বের ১ম ধূমপান ও নেশা বিরোধী ছাত্র সংগঠনের সভাপতি এবং আধূনিক এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান সংগঠক হিসেবে আমাকে বিশেষভাবে চীন সরকার আমন্ত্রণ জানান। সে সময় শেখ হাসিনার সরকার একটি বিশেষ ফেলোশিপ দিয়ে উল্লিখিত সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান।

সম্মেলনে আমি “ধূমপান ও দারিদ্র্য দুই-ই বিশ্বের মহা শত্রু” শীর্ষক ইংরেজি ভাষায় একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করি। এতে তরুণদের মাঝে ধূমপান ও নেশা বিরোধী কার্যক্রম তুলে ধরার আহ্বান জানাই। সেই থেকে বিশ্বজুড়ে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক ধূমপান বিরোধী প্রচারণা জাতিসংঘ শুরু করে। আজকে তথ্যমন্ত্রীর আহ্বানে আমরা একই সুর ও বক্তব্য প্রত্যক্ষ করছি। বলার অপেক্ষা রাখে না সাস্ক, আধূনিক এবং ক্যাট বরাবরই তামাকের চাষ, উৎপাদন ও বিপননের সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি বরাবরই দাবী জানিয়ে আসছে। এ বিষয় নিয়ে একাধিকবার মানববন্ধন এবং মিছিল সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামের অবর্তমানে তাঁর অসমাপ্ত স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য নেতৃত্ব দিতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে গত বছর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোঃ নাসিমকে আমি আহ্বান জানিয়েছি। তিনি বলিষ্ঠভাবে বলেছেন স্যারের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। গত ৫ জানুয়ারী একই আহ্বান আমি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, এম.পি এবং তথ্য সচিব মরতুজা আহমদকে জানিয়েছি। তথ্য সচিব এতে সদয় সম্মতি প্রদান করে বললেন, আপনারা তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে খুব শীঘ্রই একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করুন।

এই সভাটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষেই অনুষ্ঠিত হতে পারে। যেখানে তথ্যমন্ত্রী, স্বাস্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। সেই সভা থেকেই উপরোক্ত প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য গোটা জাতিকে আহ্বান জানানো যেতে পারে। ধূমপান, মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলন এবং সাস্ক, আধূনিক ও ক্যাট এর সাথে বরাবরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন, আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাই এই আন্দোলনকে জোরদার করতে এবং প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ ও লক্ষ লক্ষ হাজার কোটি টাকার অপচয় রোধ করতে (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষায় ধূমপান করা মানে টাকা পোড়ানো) দলমত নির্বিশেষে সবাই এগিয়ে আসুন, এ আহ্বান জানিয়েই এ লেখা শেষ করছি।

লেখক- আলী নিয়ামত
সভাপতি- বাংলাদেশ উন্নয়ন সাংবাদিক ও লেখক ফোরাম ও
ধূমপান-মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী জোট ক্যাট।

পোস্ট- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান