পানীয় জলের তীব্র সঙ্কটে দীঘলছড়ি মোন পাড়ার দু’শতাধিক মানুষ

150

॥ অসীম চাকমা ॥

বিলাইছড়ি উপজেলাধীন ১ নং বিলাইছড়ি ইউনিয়নের দীঘলছড়ি মোন পাড়ায় সুউচ্চ পাহাড়ের মানুষ নিত্য ব্যবহার্য ও খাবার পানির তীব্র সংকটে রয়েছে। অন্তত ৪৫টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে পানীয় জলের তীব্র সঙ্কটে মানবেতর জীবন যাপন করছে। স্থানীয়দের মতে, এ পাড়ায় দুই শয়ে বেশি মানুষের বসবাস। সেখানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও রয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পানির জন্য হাকাকার করছে।

দীঘলছড়ি মোন পাড়ার কার্বারী কান্দারা চাকমা ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, পাড়াটি সমূদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উপরে যা বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলার সীমানার কাছাকাছি। তারা আরও জানান, এই মোন পাড়ায় একটি মাত্র কুয়া বা পানি নির্গত কূপ রয়েছে। তাও পাহাড় থেকে অনেক নীচে,সেখানে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে লাইনে দাড়িয়ে পানি সংগ্রহ করতে হয়। তাও কোন কোন সময় পাওয়া যায় না। বর্তমানে কূয়াটি একেবারে শুকিয়ে যাওয়ায় পানি পাওয়া যায় না আর । পাহাড় বা পাড়া থেকে মূল ঝর্ণায় পানি সংগ্রহ করতে হলে প্রায় এক থেকে দেড় কিলোমিটার নীচ থেকে হেঁটে পানি আনতে হয়। গোসলের পানি তো বাদ পান করার মত পানি পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। তাই জরুরী কোন সহযোগীতা না পেলে বড় অসুবিধায় পড়বে পাড়ার বাসীন্দারা। অনেক জনপ্রতিনিধি প্রতিশ্রতি দিলেও হয়তো দূর্গমতার কারণে এযাবৎ পানীয় জলের কোান প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি এই পাড়ায়। তাই তাদের জল বা পানির জন্য অপেক্ষা করতে হয় বৃষ্টি । অথবা পাহাড়ের ঢালে হেঁটে গিয়ে আনতে হয় অনেক দূর থেকে। এজন্য কষ্টের যেন শেষ নেই তাদের।

এ বিষয়ে পাড়ায় অবস্থিত দীঘলছড়ি মোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কালিদাস চাকমা জানান, প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে তীব্র গরমে কূয়ার পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। সবচেয়ে বেশি পানি সংকটে পড়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফলে দেখা দেয় নানা রোগের প্রাদূর্ভাব। চলতি বছরে কূয়ার পানি তীব্র গরমে একেবারে শুকিয়ে গেছে। এবং অন্য কূয়া থেকে পানি আনতে গেলে প্রায় ৩০০ ফুট নীচ থেকে আনতে হয়। এবং সেটি খাড়া ও গভীর খাদ হওয়ায় খুবই বিপদজনক। অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে পানি তুলতে হয়। সাক্ষী হিসেবে গুরিত্তং চাকমা নামে একজন ব্যক্তি সেখান থেকে পানি আনার সময় পড়ে গিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে কোনো ভাবে বেঁচে আছেন ।

১ নং বিলাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান এর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, উপজেলা পরিষদ হতে প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে, যদি অনুমোদন আসে তাহলে বাস্তবায়ন করা হবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রিপ্রেশ তালুকদার – এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি আমি জেনেছি, কিভাবে পানি সংকট সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যায় তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করবো।

প্রসঙ্গত, প্রতি বছর এই সময় বিলাইছড়ি উপজেলার বেশ কয়েকটি পাড়ায় বিশেষ করে মোন এলাকায় অবস্থিত পাড়াগুলো বেশি পানি সংকটে ভোগে। এবং প্রতি বছর এর তীব্রতা বাড়ছে। আগে বাগে বিহিত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ রুপ ধারন করবে। স্থানীয়দের ধারণা যত্রতত্র সেগুন বাগান সৃজন, ছড়া বা ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলন, অবাধে বয়স্ক ও পরিবেশ বান্ধব গাছগুলো কর্তন, জুম চাষ করার সময় নিয়ম না মেনে নির্বিচারে বড় গাছ ও পানি ধরে রাখার গাছগুলো কর্তন করার কারণে এই অবস্থা হচ্ছে।