১৪ জানুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ৪০ বছর পূর্তি উদযাপন : প্রধান আকর্ষণ মাউন্টেন্ড বাউক প্রতিযোগিতা

681

p..2

আলমগীর মানিক, ১১ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : ৩৯ বছরে তিন পার্বত্য জেলায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির উন্নয়নে ১২শ’ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। দুর্গমতা, শিক্ষা, সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে যুগ যুগ ধরে উন্নয়নের ছোঁয়া বঞ্চিত পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা দেশের মুল ¯্রােতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করার লক্ষ্য নিয়ে স্বাধীনতার প্রথম দশকেই উন্নয়ন বোর্ড সৃষ্টি করা হয়। মাত্র চার দশকের পথ চলায় এই বোর্ড এখন পার্বত্য উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এমন তথ্য প্রকাশ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তরুন কান্তি ঘোষ। তিনি বলেন, পাহাড়ের অবহেলিত জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নের জন্যই এই প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়েছিল।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের গৌরবময় ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন উপলক্ষে বোর্ড গৃহীত বিভিন্ন অনুষ্ঠানসূচি সম্পর্কে অবহিত করার লক্ষ্যে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ভাইস চেয়ারম্যান এই তথ্য জানান। ভাইস সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৩৯ বছরে ১২’শ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার ৮১৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হলো, ৫ হাজার ৮৫০ মিটার সেচ নালা ও ১২২টি জলাধার নির্মাণের মাধ্যমে ১২ হাজার ২২০ একর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান। ৩১৯টি মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোড়া নির্ণাম ও সংস্কার। ১ হাজার ৫৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৫০টি ছাত্রাবাস ও বিজ্ঞানাগার নির্মাণ ও সংস্কার। ৫৭টি বাজার শেড, ৫৯টি যৌথ খামার নির্মাণ ও ৩ হাজার ৩’শ পরিবারকে ০৪ একর করে ভূমি প্রদান।

চিম্বুক, নীলাচল, মেঘলা, আলুটিলা, মাতাইপুখরীসহ বিভিন্ন স্থানে পর্যটন অবকাঠামো নির্মাণ। ৬১৫ কি.মি. রাস্তা, ৮১৪টি সেতু, ২ হাজার ৮৭১টি কালভার্ট ও ৫৪টি যাত্রী ছাউনী নির্মাণ। ৪টি ষ্টেডিয়াম, ১১টি অডিটোরিয়াম, ৩টি জিমনেসিয়াম ও ৯টি রেস্ট হাউজ নির্মাণ। ৪ হাজার পাড়া কেন্দ্র, ২২টি শিশু বান্ধব স্কুল প্রতিষ্ঠা ও ৪ টি আবাসিক বিদ্যালয় পরিচালনা। বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মেধাবী ও অস্বচ্ছল প্রায় ১৩ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা-বৃত্তি প্রদান। ২৩ হাজার ৮৩৫ একর জমিতে মিশ্র ফলের বাগান ও ১৩ হাজার ২’শ একর জমিতে রাবার বাগান সৃজন। এছাড়াও বর্তমানে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুর্গম পার্বত্য এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপন ও যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের এই উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে বলে তিনি সাংবাদিকদের অবহিত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তরুন কান্তি ঘোষ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপনে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, উন্নয়ন বোর্ডের ৪০তম প্রতিষ্ঠা বাষির্কী উপলক্ষে মাউন্টেন্ড বাইক প্রতিযোগিতা, র‌্যালী, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড: গওহর রিজভী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা এনডিসি।

উন্নয়ন বোর্ডের কর্ণফূলী হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ১৪ই জানুয়ারি সকাল ৮টায় মাউন্টেন্ড বাউক প্রতিযোগিতা- কাপ্তাই সুইডেন পলিটেকনিক্যাল ইনষ্টিটিউটি হতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর প্রধান কার্যালয় পর্যন্ত। সহযোগিতায় থাকবে বাংলাদেশ এ্যাডভেঞ্চার ক্লাব। সকাল নয়টায় বর্ণাঢ্য র‌্যালি- রাঙামাটি শৈল বিপনি বিতান হতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পর্যন্ত। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড ভবন প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর ফেস্টুন, বেলুন ও শান্তির প্রতীক কবুতর উড়ানো। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কেক কাটা। সকাল ১১ টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ভবন প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনা সভা। বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ভবন প্রাঙ্গণে আতশ বাজি ও ফানুস উড্ডয়ন। সন্ধা ৬টা ৩০ মিনিটে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ভবন প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য সচিব মো. নুরুল আলম চৌধুরী, সদস্য পরিকল্পনা- প্রীতি কান্তি ত্রিপুরা, সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের উপপরিচালক মো. জানে আলমসহ বোর্ডের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পাদনা- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান