রাঙামাটি শহর ও কয়েকটি উপজেলায় পাহাড় ধস যোগাযোগ ব্যাহত ॥ ক্ষতিগস্ত ১৬পরিবার

122

॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥

গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা রাঙামাটি শহর এবং কয়েকটি উপজেলায় বেশ কিছু পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড় ধসের কারণে বাঘাইছড়ির সাথে সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১৬ পরিবার।

তবে সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে বাঁচাতে সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে প্রশাসন। ডিসি এসপির নেতৃত্বে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সকল ধরণের নৌ চলাচল।

আমাদের উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বলা হয়েছে- কাপ্তাইয়ের রাইখালী ইউনিয়নে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ পরিবার, আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৫৫ জন। চট্টগ্রাম রাঙামাটি সড়কের ঘাঘড়ায় পাহাড় ধসে যোগাযোগ ব্যাহতসহ সাপছড়িতে অপর একটি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি বসতবাড়ি। খোদ রাঙামাটি শহরের অন্তত দুইটি জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। জুরাছড়িতে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জুমের ফসল এবং অতিবর্ষণে পানিতে তলিয়ে গেছে আমন। বিলাইছড়ি ও কাপ্তাইয়ে গাছ উপড়ে পড়েছে। বিলাইছড়ির শালবাগানে পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়েছে একটি বসতঘর, তবে কোনো প্রাণহানি রক্ষা পেয়েছে বাসিন্দারা। কাউখালী উপজেলার দু’টি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে প্রায় ৮০জন ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে।

রোববার দুপুরে বাঘাইছড়ি উপজেলার মারিশ্যা দিঘীনাল সড়কের ১৬ কিলোমিটার দুই টিলা এলাকায় পাহাড় ধসে সড়কের উপর পড়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
সম্ভাব্যভ ক্ষাত থেকে নাগরিকদের জানমাল রক্ষায় বর্ষণের দ্বিতীয় দিন থেকেই আগাম সতর্কতামুলক প্রচারণাসহ নানামুখি উদ্যোগ নেয় জেলাপ্রশাসন। রাঙামাটি শহরের ঝূকিপূর্ন বসতিগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার প্রশাসনের উদ্বর্তন কর্মকর্তাগণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের সাথে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। জেলা শহরের ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে ঝূকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের এনে রাখা হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে খাবার বিতরণসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।

শনিবার এক জরুরী নোটিশে কাপ্তাই হ্রদে সকল প্রকার নৌ-যান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করেন জেলাপ্রশাসক মোশাররফ হোসেন খান।

এদিকে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার জানান, রাতে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে একটি গাছসহ পাহাড়ের মাটি ধ্বসে পড়ে। আমরা সাথে সাথেই সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সড়ক বিভাগকে জানাই। খাগড়ছড়ি সড়ক বিভাগের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাটি সরানোর কাজ শুরু করেছে। তিনি জানান, এই সড়কের ১৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ১০টি পয়েন্টে পাহাড় ধসের ঝুঁকি আছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাল পতাকা টানিয়ে সড়কে যাতায়াতকারীদের সতর্ক করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অন্তত চার হাজার পরিবারের ১৫ হাজার সদস্য জীবনের ঝূঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে। এই নাগরিকদের নিরাপদ রাখতেই গলদঘর্ম হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে জেলাসদরসহ উপজেলাগুলো সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে প্রশাসন, পুলিশ, সেনা সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকরা।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাতে টানা তিনদিনের ভারী বৃষ্টি আর বজ্রপাতে রাঙ্গামাটিতে ঘটে যায় স্মরণকালের পাহাড় ধসের ঘটনা। ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় পাঁচজন সেনাসদস্য, নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে শহরের মানিকছড়িতে একটি সেনা ক্যাম্পের নিচে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের উপর ধসে পড়া মাটি অপসারণ করতে গিয়ে পুনরায় পাহাড় ধসের মাটি চাপা পড়ে নিহত হন ওই ক্যাম্পের দুই কর্মকর্তাসহ পাঁচ সেনাসদস্য। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মানিকছড়ি শালবাগান অংশে ১০০ মিটার রাস্তা সম্পূর্ণ ধসে গিয়ে দীর্ঘ ৯দিন সারা দেশের সাথে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে।