॥ কবির হোসেন ॥
উন্নত জাতের আখ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার প্রান্তিক চাষীরা। উচ্চ ফলনশীল ফসল হিসেবে আখের যথেষ্ট সুনামও রয়েছে। কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় চাষীরা জানান- আখ চাষ করে অনেক চাষী স্বাবলম্বী হচ্ছেন কাপ্তাই উপজেলাতে। পাহাড়ের পাদদেশের সমতল জায়গাগুলোতে খুবই সুন্দর হয় আখের ক্ষেত।
৩৩ শতক জমিতে সরকারি সহযোগিতা এবং নিজস্ব অর্থায়নে আখ চাষ করে সফল হয়েছেন কাপ্তাইয়ের মৃণাল তঞ্চঙ্গ্যা। নিজের জমিতে অন্যান্য ফসল চাষ করলেও এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন আখ চাষ। বর্তমানে তাঁর ক্ষেতের আখগুলি বেশ পরিপক্ক। মৃণাল তঞ্চঙ্গ্যার আখ চাষের সফলতা দেখে স্থানীয় অনেক চাষী এখন আখের ক্ষেত করতে আগ্রহী হচ্ছেন বলে তিনি জানান। এলাকায় পানির সমস্যা না থাকলে এবং চাষীদের সরকারি সুযোগ সুবিধা দেয়া হলে এলাকবাসী উপকৃত হবেন । আখের উৎপাদন বাড়াতে পানির সরবরাহ সচল রাখতে হয়। আমাদের বারঘোনা তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ায় পানির সমস্যা প্রকট। কাপ্তাই উপজেলার ১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের বারঘোনা তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে আখের ক্ষেত। আখের সারিতে পথচারিদের চোখ আটকে যাচ্ছে। সব আখের ক্ষেতের ফসল এখন পরিপক্ক। তাই পাইকারী ক্রেতারাও ক্ষেত থেকে আখ কিনে নিতে ছুটে যাচ্ছেন চাষীদের দ্বারে দ্বারে।
আনুমানিক ৪০ শতক জমিতে ২৫ বছর ধরে আখ চাষ করে আসছেন বারঘোনার স্থানীয় বাসিন্দা রাইশ্যায়া তঞ্চঙ্গ্যা। বংশ পরম্পরায় তারা আখের ক্ষেত করছেন। তাঁর বাপ দাদা ও পুর্বপুরুষরা আখ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছিলেন। তিনি জানান, নিজস্ব অর্থায়নে বাজার থেকে ২০৮ জাতের আখের চারা কিনে চাষ শুরু করেন এবং তাতে খুব লাভবান হন। গত বছর পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আখ চাষ প্রকল্পের সহযোগীতায় আখের উন্নত জাত রঙবিলাশের চাষ শুরু করেন তিনি। এখন তাঁর ক্ষেতের আখ গুলো যথেষ্ট পরিপক্ক হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষেত থেকে আখ তোলা শুরু করেছেন। প্রতিবছর আখ চাষে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হলেও দ্বিগুন টাকা লাভ হয় বলে জানান জানান রাইশ্যায়া তঞ্চঙ্গ্যা।
বারঘোনার এলাকার আখ ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান ও কয়েজন ক্রেতা জানান- কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন অঞ্চলের পাহাড়ের পাদদেশে উৎপাদিত এসব আখের যথেষ্ট সুনাম ও খ্যাতি রয়েছে। দেশের অনান্য অঞ্চল থেকে এখানে আখের দামও অনেক কম। পাশাপাশি কাপ্তাইয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ার কারণে পাইকারী ক্রেতারা এই আখ ব্যবসা করে বেশ লাভবান হচ্ছে।
কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ বলেন, আখ আমাদের অর্থকরী ফসল। একসময় দেশে ধানের ফলন বৃদ্ধির জন্য আখ চাষ কমে এসেছিলো কিন্তু বর্তমানে আখ চাষে সুদিন ফিরে এসেছে। বর্তমানে আখ চাষ করে চাষীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। কাপ্তাইয়ের আখ চাষীদের আখের ক্ষেতের মধ্যে সাথী ফসল হিসেবে সরিষা বা অনান্য ফসল চাষাবাদে আগ্রহী করে তুলতে কাজ করছি। সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আখ চাষ প্রকল্পের মাধ্যমে কাপ্তাই উপজেলার আখ চাষীদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এতে আখ চাষীরা অনেকটা উপকৃত হয়েছে। অর্থকরী ফসল আখ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।