॥ ওমর ফারুক ॥
সরকারি করণের পরও কাউখালী সরকারী ডিগ্রী কলেজের সকল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্দেশনা বহির্ভূতভাবে পরীক্ষার ফিস আদায় করা হচ্ছে। পরীক্ষার ফি থেকে রেহাই পাচ্ছে না উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরাও। এতে প্রত্যন্ত এ অঞ্চলের দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের মাথায় হাত পড়েছে। পরিবার থেকে ফিসের টাকা দিতে না পারায় অনেক শিক্ষার্থী টাকা ধার করে বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ফি আদায়ের মাধ্যমে তাদের শিক্ষা জীবন টিকিয়ে রেখেছেন।
১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কাউখালী সরকারী ডিগ্রী কলেজটি সরকারীকরণ করা হয় চলতি বছর থেকে। কিন্তু সরকারি করণের পরও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে টাকা আদায় করছে শিক্ষকরা। এই টাকার কোনো সঠিক হিসাবও রাখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন কলেজের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে কলেজে গিয়ে খবর নিয়ে জানা যায়, সকল শিক্ষার্থীকেই বাধ্য হয়ে ফিস আদায় করতে হচ্ছে। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. এজাহার এমন ফিস নেওয়ার বিষয়ে সরকারিভাবে কোন সার্কুলার নেই বলে স্বীকার করলেও ফিস আদায় করছেন বলে জানা। তিনি বলেন, কলেজ সরকারিকরন করা হলেও কলেজ চালাতে গেলে কলেজের অভ্যন্তিরন অনেক খরচ আছে যা আমরা সরকার হতে পাইনা। তাই আমরা ছাত্র/ছাত্রীদের কাছ থেকে এই টাকা নিয়ে থাকি।
২০২৩ সালে এই কলেজের একাদশ শ্রেণী হতে ৩৪৬ জন ছাত্র/ছাত্রী বার্ষিক পরিক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে-২০জন, মানবিক বিভাগে-২৩১জন এবং বাণিজ্য বিভাগে-৯৫জন। পাশাপাশি ডিগ্রী চুড়ান্ত পরিক্ষায় ৫১ জন ছাত্র/ছাত্রী অংশগ্রহন করতে যা”্ছ।ে শিক্ষার্থীরা জানায় একাদশ শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য প্রতি শিক্ষার্থী হতে ১৪৫০/- এবং উপ-বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে ফিস আদায় করা হচ্ছে। এদিকে আজ ২০ সেপ্টেম্বর হতে শুরু হওয়া ডিগ্রী পরিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রবেশ পত্র বাবদ ২০০০/- (দুই হাজার টাকা) করে আদায় করা হয়েছে।
কলেজে গেলে নাম প্রকাশে অন্চ্ছিুক অনেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা প্রত্যন্ত পাহাড়ী এলাকার গরীব অসহায় মানুষের সন্তান। আমাদের পিতা মাতারা কত কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে আমাদেরকে পড়ালেখা করার জন্য কলেজে পাঠিয়েছেন। আমরা একাদশ শ্রেণীর বার্ষিক পরিক্ষা দিব তাহলের আমাদের কাছ থেকে কেন পরীক্ষার ফিস পরীক্ষার ফিস ও সেশন ফি বাবদ ১৪৫০/- টাকা আদায় করা হচ্ছে।
ডিগ্রী পরিক্ষার্থী এক ছাত্রীর স্বামী মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, আমার স্ত্রী ডিগ্রী পরিক্ষার্থী তার প্রবেশ পত্র বাবদ কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০০০/-(দুই হাজার টাকা) ফিস নিয়েছেন। আমি এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলেজের শিক্ষকরা বলেন পরিক্ষার সময় কলেজের অভ্যন্তিরণ অনেক খরচ আছে সে জন্য এই টাকা নেয়া হচ্ছে।
এই প্রক্রিয়ায় একাদশ শ্রেণীর বার্ষিক পরিক্ষা এর নামে ৩৪৬জন ছাত্র/ছাত্রীর কাছ থেকে ৩ লক্ষ আশি হাজার টাকা আদায়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তার কোন সুদুত্তর তিনি দিতে পারেননি কেউ। শিক্ষক মো. আব্দুল গফুর ও শিক্ষক মো. বাদশা বলেন, আমরা উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে এই টাকা নিচ্ছি এবং আমাদের শিক্ষক/শিক্ষিকারা মিটিং করে রেজুলেশন করে একাদশ শ্রেণীর বার্ষিক পরিক্ষার ফিসের এই টাকা এবং ডিগ্রী পরিক্ষার প্রবেশ পত্রের এই টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এমন সিদ্ধান্তের রেজুলেশন খাতায় উপজেলা প্রশাসনের কেউ স্বাক্ষর করেছেন কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, না তারা কোন স্বাক্ষর করেননি।
বিষয়টি নিয়ে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কাউখালী সরকারি ডিগ্রী কলেজের সভাপতি সৈয়দা সাদিয়া নুরিয়া বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না, এখন যেহেতু বিষয়টি জানলাম, খোজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানান তিনি।