লাভজনক হওয়ায় তিন পার্বত্য জেলায় হলুদ চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের

295

॥ মো.রাকিবুর রহমান ॥

পার্বত্যাঞ্চলের কৃষিতে লাভজনক একটি ফসল হলো হলুদ। এঅঞ্চলের কৃষকরাও হলুদ চাষে আগ্রহী। পাহাড়ের মাটিও হলুদ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। হলুদ মসলা জাতীয় খাদ্য। প্রায় অধিকাংশ রান্নার তরকারিতে এই উপকরণটি ব্যবহার হয়ে থাকে। হলুদের চাহিদা ও বাজার দর বেশ চড়া হওয়ার কারণে পার্বত্যাঞ্চলের কৃষকদের কাছে এই মসলা জাতীয় ফসল চাষে আগ্রহ বাড়ছে। ফলে তিন পার্বত্য জেলায় দিনদিন বাড়ছে এই হলুদ চাষ।

রাঙামাটি জেলাধীন কাপ্তাই উপজেলায় বিপুল পরিমাণে চাষ হয় হলুদের। সম্প্রতি উপজেলার ৫নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের কুকিমারা এলাকায় দেখা যায়, পাহাড়ের কোল জুড়ে একের পর এক হলুদের ক্ষেত। সবুজ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এসব হলুদ চাষ নজর কাড়ছে সকলের।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন এলাকার বেশির ভাগ চাষীই এই হলুদের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এলাকার কৃষক সুবিমল তঞ্চঙ্গ্যা জানান,হলুদ আবাদ সাধারণত ৯ মাস ব্যাপী হয়ে থাকে। বিঘা প্রতি কাঁচা হলুদ পাওয়া যায় প্রায় ১২০ থেকে ১২৫ মণ। হলুদে তেমন রোগ বালাই নেই বলে কৃষকদের তেমন ঝামেলা পোহাতে হয় না। তবে সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করলে এর ফলন ভাল পাওয়া যায়। বর্তমানে বাজার দর বেশি হওয়ায় হলুদের আবাদে ঝুঁকেছেন স্থানীয় অনেক কৃষক।

জুম চাষের পাশাপাশি বহু বছর ধরে হলুদ চাষ করে আসছে স্থানীয় কৃষক মনিধন তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি জানান,একসময় জুম চাষ করে সংসার চালাতেন। একবার স্থানীয় কৃষকদের সাথে পরামর্শ করে হলুদ চাষের সিন্ধান্ত নিয়ে অর্থ বিনিয়োগ করেন। এতে তিনি জুম চাষের চেয়ে হলুদ চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। এরপর থেকে তিনি হলুদের চাষ করে আসছেন। এছাড়া পাহাড়ে হলুদের চাষ সবচেয়ে বেশি ভাল হয় বলে তিনি জানান। এতে তিনি বেশ লাভবান। কৃষক সুমেল তঞ্চঙ্গ্যা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে হলুদ চাষের জন্য তাদের খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় প্রায় ১২০ থেকে ১২৫ মণ হলুদ পাওয়া যায়। গত বছর প্রকার ভেদে ১ হাজার টাকা থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত প্রতি মণ হলুদ বাজারে বিক্রি হয়েছে। সে হিসেবে বিঘা প্রতি খরচ বাদ দিয়ে অর্ধেকের বেশি লাভ হয় তাদের। এবছর হলুদের বাজার দর আরও বেশি হবে বলে ধারণা করছেন কৃষকরা। সে কারণে তারা হলুদ বিক্রি করে আরও লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।

এবিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেহ জানান, দেশের অনান্য জেলার তুলনায় তিন পার্বত্য এলাকায় চাষ করা হলুদের কদর অনেকটা বেশি থাকে। বিশেষ করে কাপ্তাইয়ে যে জাতের হলুদের চাষ হয়, এটি অনেকটা উন্নত জাতের হলুদ। ফলে এর বিক্রিও বেশি হয়ে থাকে।

তিনি জানান, কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ১৪টি ব্লকে প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়ে থাকে। এরমধ্যে ওয়াগ্গা ব্লকে প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়। কৃষিবিভাগ থেকে স্থানীয় চাষীদের হলুদ চাষের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে সার প্রয়োগ কিংবা পোকা মাকড় দমনে কি কি করণীয় সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া পাহাড়ের অধিকাংশ কৃষক জুম চাষের সাথে সাথী ফসল হিসাবে হলুদের চাষে করে থাকে, এতে তারা সঠিক পরিচর্যা করার সুযোগ পায়। পাশাপাশি হলুদ সংরক্ষন করে রাখা যায় বলে প্রান্তিক কৃষকরা হলুদ চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছে। যার ফলে পার্বত্য অঞ্চলে দিনদিন হলুদের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।