অবৈধ ইটভাটার রাজ্য হিসেবে পরিচিতি বান্দরবানের ঘুমধুমে চলছে ৫টি ইটভাটা

140

॥ বান্দরবান প্রতিনিধি ॥

হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ও ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫টি ইটভাটায় এখনও ইট পোড়ানো হচ্ছে। অবৈধ ইটভাটার রাজ্য হিসেবে পরিচিতি ঘুমধুমের এসব ইটভাটা বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে অভিযান চালানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, এতোগুলো ইটভাটা থাকতে মাত্র তিনটি ইটভাটাকে জরিমানা করা দু:খজনক। বাকী ইটভাটাগুলোতে পরিবেশ বিধ্বংসী যে কর্মকান্ড চলছে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী জানান তারা।

সোমবার ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে তিনটি ভাটাকে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ জাকারিয়া এই অভিযান পরিচালনা করেন। ভ্রাম্যমান অভিযানে অর্থদন্ড দেওয়া ইটভাটাগুলো হলো এইচকেবি, এএসবি ও, বিএইচবি।

ইউএনও জানান, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেআইনি ভাবে গড়ে উঠা প্রতিটি ইট ভাটার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে এ অভিযান চালানো হয়। এছাড়াও পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলনে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন কঠোর ভাবে আইনি পদক্ষেপও গ্রহন করবেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন অভিযানের ধরণ না পাল্টালে এই অভিযান বিফলে যাবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্ত বর্তী ইউনিয়ন ঘুমধুমে সবুজ পাহাড় বেশষ্টিত এলাকা হিসেবে পরিচিত আজুখাইয়া ফকিরপাড়া, রেজু গর্জনবনিয়া, রেজু আমতলী ও আজুখাইয়া এলাকায় পরিবেশ ও বায়ু দুষন করে চলছে পাঁচ ইটভাটা। গত তিন মাস ধরে প্রকাশ্যে এসব ইটভাটায় পাহাড় কাটা, ফসলী জমি কাটা এবং ইট তৈরীর জন্য জ¦ালানী হিসেবে বনের কাঠ পুড়ানো হলেও প্রশাসন নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে।
খালেদ সরওয়ার হারেজ এর মালিকানাধীন কেআরই, সাজু বড়–য়ার মালিকানাধীন ডিএসবি, ফরিদ আহমদের মালিকানাধীন বিবিএম, জয়নাল আবেদীন এর মালিকানাধীন জেএসবি ও আবুল কালাম এর মালিকানাধীন কেআরএস নামে এসব ইটভাটার মালিক নিজেদের স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতা পরিচয় দিয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী এই কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এসব ইটভাটা প্রসঙ্গে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা অনেকটা দায়গোচর বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তবে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, প্রশাসন কোন অবৈধ ইটভাটা মালিককে সুযোগ সুবিধা দেয়নি। প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। জানতে চাইলে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফখরউদ্দিন চৌধুরী বলেন, দূরত্বের কারনে তারা এলাকাগুলোতে অভিযান চালাতে একটু কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এছাড়া আদালতের রীট থাকায় কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে অভিযুক্ত ইটভাটা মালিকরা নিজেরা উচ্চ আদালতে রীট করে কার্যক্রম চালাচ্ছেন দাবী করলেও এর বিপরীতে কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। কয়েক ইটভাটা মালিক সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন। পরিবেশবাদীদের মতে, উচ্চ আদালত কোন ইটভাটা মালিককে পাহাড় কাটা, চাষীলা জমি কাটা এবং জ¦ালানী হিসেবে কাঠ পুড়ানোর জন্য অনুমতি দেয়নি। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর অবৈধ লেনদেনে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করায় ভাটা মালিকরা এর সুযোগ নিচ্ছেন।