কক্সবাজার সংবাদদাতা
কক্সবাজারের ইয়াবা পাচারের রুট ব্যবহার করে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে মহামূল্যবান জ্বালানি তেল। অথচ জ্বালানী তেলের সাবসিডিতে খরচ হয়ে যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি ডলার। সূত্রমতে ইয়াবার পাচারের ট্রানজিট রুটটি এখন পরিণত হচ্ছে তেল পাচারের ট্রানজিটে। মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত ২৭১ কিলোমিটারের। বিস্তৃত সীমান্ত পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে পাচার হয় জ্বালানি তেল।
মূলত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীরাই এই জ্বালানি তেল পাচারের এ নেপথ্যে রয়েছে। চক্রটি ইয়াবা ও আইসের পাশাপাশি বর্তমানে তেল পাচার করছে। তারা তেল পাচার করে মাদক নিয়ে আসছে, আর মিয়ানমার থেকে আসা মাদকের চালান কক্সবাজার-চট্টগ্রাম হয়ে চলে যাচ্ছে পাশ্ববর্তী দেশেও।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, গত প্রায় দুই মাস ধরে কক্সবাজারের হ্যাচারিতে নেওয়ার নাম করে উখিয়া উপজেলা থেকে জ্বালানি তেল, বিশেষ করে অকটেন পাচার করছে সঙ্ঘবদ্ধ চক্রটি। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হলেও মেরিনড্রাইভ সড়ক হয়ে পাচার শুরু করে চক্রটি। অধিকাংশ জ্বালানি পাচার হয় ট্রলারযোগে।
মিয়ানমারে অভ্যন্তরীন অস্থিরতায় দেশটিতে জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এর সুযোগ নিচ্ছে দুই দেশের সঙ্ঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র। এর মধ্যেই গত ১৫ দিনে ১১ হাজার লিটারের বেশি জ্বালানি তেল জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
স¤প্রতি পিকআপ থেকে ৬৯টি প্লাস্টিক কনটেইনারে থাকা দুই হাজার ৯০০ লিটার অকটেন জব্দ করা হয়। এ সময় পাচারকারী সন্দেহে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। আটক করা ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে আইনশৃংখলা বাহিনী সূত্র জানায়, উখিয়ার হাজী নুর আহমদ ট্রের্ডাস নামে তেলের দোকান থেকে সোনারপাড়া এলাকায় সিন্ডিকেট প্রধান সাবের এর মাধ্যমে মিয়ানমারে পাচারের জন্য সেই গুল তেল গুলো নেওয়া হচ্ছিল।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাহারছড়ায় পুলিশের একটি তদন্তকেন্দ্র বা ফাঁড়ি থাকলেও কেন্দ্রটির পুলিশ পাচারের কোনো চালান আটক করতে পারেনি। এ বিষয়ে তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক মশিউর রহমান বলেন, তিনি পাচার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
সীমান্ত এলাকায় স¤প্রতি অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এমনকি পশ্চিম আরাকানের (রাখাইন রাজ্য) বন্দর শহর মংডুর সঙ্গে জেলা ও বিভাগীয় শহর আকিয়াব এবং রাজধানী ইয়াংগুনের যোগাযোগ রক্ষাকারী সড়কও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এসব কারণে পণ্যসামগ্রী পরিবহনে সর্বত্র গুরুতর সংকট দেখা দিয়েছে। পশ্চিম আরাকানসহ আকিয়াব, ভুচিদং, রাশিদং ও মংডু এলাকায় নিত্যপণ্যের দাম এখন আকাশছোঁয়া।
বুধবার সকালে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে মংডুুর ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, বাংলাদেশের এক টাকার পরিমাণ এখন মিয়ানমারের ২৭.৫০ কিয়েত। মংডু শহরে ৫০ কেজির এক বস্তা পুরনো চালের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় এখন আট হাজার ৯২৮ টাকা। অর্থাত্ প্রতি কেজির দাম ১৭৮ টাকা। প্রতি লিটার ভোজ্য তেলের দাম এক হাজার ৪৫০ টাকা, প্রতি লিটার অকটেনের দাম ৬০০ টাকা, প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৪০০ টাকা।
টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের পেট্রল পাম্পের মালিক রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, প্রতি লিটার অকটেন ১৩৫ টাকা ও ডিজেল ১১১ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ থেকে জ্বালানি কিনে মিয়ানমারে পাচারে অধিক মুনাফা পাচ্ছে পাচারকারীরা। তিনি বলেন, এখানে মুশকিল হলো, পাচারের জন্য কেউ জ্বালানি কিনছে কি না, তা বোঝার উপায় নেই।