মো: গোলাম মোস্তফা , ২৯ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : শীতের আমেজ শুরু হতেই ভিড় বাড়তে শুরু করেছে রাঙামাটির বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে। এবছর নতুন করে পর্যটকদের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত বৌদ্ধ মূতি। রাঙামাটি থেকে সুবলং ঝর্ণায় যাওয়ার পথে পূর্ব আকাশের নিচে পাহাড়ের চুড়ায় মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সোনালী বৌদ্ধ মূর্তিটি। পাহাড়ের চুড়ায় বৌদ্ধ মূর্তির চার পাশে রয়েছে অনেক ফুলের বাগান। যা দেখে মন আনন্দে নেচে উঠে। সেখানে গেলে মনে হয় যেন এক অপরুপ সৌন্দর্যের মাঝে কিছু সময়ের জন্য এসেছি। কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় দুই বছর ধরে এই বৌদ্ধ মূর্তি নির্মাণ করা হয়। বৌদ্ধ মূর্তিটি যেন রাঙামাটির নতুন এক পর্যটন স্পট। বৌদ্ধ মূর্তিটি দেখার জন্য স্থানীয় পর্যটকসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পার্যটরা সেখানে গিয়ে বেশ পরিতৃপ্ত হয়ে সময় কাটাচ্ছে। তবে বৌদ্ধ মূর্তিটি দেখতে অনেক উঁচু পাহাড় বেয়ে উঠতে হয়। সেখানে থাকা কয়েক জন স্থানীয় পাহাড়ি জানান, বৌদ্ধ মূর্তিটি দেখার জন্য অনেক পর্যটকরা আসলেও পাহাড় উঠার ভয়ে তারা চলে যায়, যদি পাহাড়ের নিচ থেকে বৌদ্ধ মূর্তি পর্যন্ত সিঁড়ি তৈরী করা হয় তাহলে বেড়াতে আসা পর্যটকরা এই বৌদ্ধ মূর্তিটি দেখে আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।
এদিকে টুকটুক ইকো ভিলেজ পর্যটকদের কাছে অনেক আগথেকেই পরিচিত কিন্ত টুকটুক ইকো ভিলেজটি বেশ কিছু দিন যাবত অপরিছন্ন ও সৌন্দর্য কম থাকায় পর্যটকদের উপস্থিতি ছিলো অনেক কম। তাছাড়া টুকটুক ইকো ভিলেজে পর্যটক থেকে জন প্রতি ২০ টাকা করে টিকেট মূল্য নেয়ার কারনে বেশ কিছু দিন পর্যটক একে বারে আসেনি। তবে এখন টুকটুক ইকো ভিলেজে টিকেট মূল্য না নিয়ে উনমুক্ত করে দেওয়ায় পর্যটকদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে চোখে পড়ার মতো। এদিকে টুকটুক ইকো ভিলেজটি আগের তুলনায় অনেক সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি মানুষ ব্যস্ততার জীবনে একটু সবুজের প্রশান্তি পেতেই যেনো ছুটে আসচ্ছেন পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে। চারিদিকে ছোট-বড় টিলাগুলো যেন সবুজ গালিচা মোড়ানো। শান্ত, গভীর সৌন্দর্যের এই রাঙামাটিতে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে ধরা দেয় একটু বাড়তি আকর্ষণ হয়ে।
প্রকৃতির ভাঁজে ভাঁজে আছে পাহাড়ের বুক চিরে ঝরে পড়া ঝর্ণা। আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়েছে। বৈচিত্রময় পাহাড়-টিলা মিলিয়ে অশংক্ষ পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে জেলায়। প্রতিবছর কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম হয় এখানে। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত অবলোকন করায় এখন পর্যটকদের ভীড়ে মুখরিত রাঙামাটি। প্রকৃতির সব রূপ আর যৌবন দিয়ে সাজানো রাঙামাটিতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েই পর্যটকদের স্বাগত জানাচ্ছে।
রাঙামাটিতে হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীদেরও যেন মুগ্ধ করেছে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকদের। বৃহৎ মন্দির এবং মিশ্রি পাড়ারে বৌদ্ধ মূর্তি, আরো কত যে আকর্ষনীয় স্পট হাতছানি দিয়ে ঢাকছে রাঙামাটিতে পর্যটকদের। এদিকে ঝুলন্ত সেতুটি সবার কাছে দৃষ্টিনন্দিত। সুবলং ঝর্ণা, কাপ্তাই লেকে নৌ-ভ্রমণ, এদিকে সরকারি পর্যটন মোটেল ছাড়াও রয়েছে ডিসি বাংলো, পেদাটিংটিং ও পর্যটন স্পট, টুকটুক ইকো ভিলেজ, পৌরপার্ক, সুখী নীলগঞ্জ, উপজাতীয় যাদুঘর, রাজবন বিহার, চাকমা রাজার বাড়ি, বীরশ্রেষ্ট মুন্সি আবদুর রউফের স্মৃতিসৌধসহ মনোরম ও নয়নাভিরাম স্পট ও স্থাপনা সত্যিই যে কোন পর্যটককেই কাছে টানে। শিহরিত করে তোলে স্বচ্ছ কাপ্তাই হ্রদের জলে রোমাঞ্চকর নৌভ্রমণ।
রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন বর্তমানে পর্যটন মোটেল ও কটেজসহ রাঙামাটির আবাসিক হোটেলগুলো রয়েছে বাইরে থেকে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। তবে স্থানীয়রাও ঘর থেকে বেরিয়ে ছুটে চলেছেন রাঙামাটির চোখ জুড়ানো প্রকৃতির সৌন্দর্যের আধারে। অনেকে কর্ম ব্যবস্ততার ফাঁকে পরিবার পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অবকাশ কাটাতে ছুটছেন বিভিন্ন মনোরম স্থানে। স্বচ্ছ জলাধারার আনন্দ উপভোগ করতে নৌভ্রমণে যাচ্ছেন মনোরম কাপ্তাই লেকে।
এদিকে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি জুড়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় ও উপভোগ্য স্থান। গড়ে উঠেছে অনেক দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট। রাঙামাটির মূল শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দক্ষিণে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের হলিডে কমপ্লেক্স। সেখানে রয়েছে দৃষ্টিকাড়া ঝুলন্ত ব্রিজ, কটেজ ও মোটেল। কাপ্তাই লেকে নৌভ্রমণের জন্য স্পিডবোটসহ রয়েছে ইঞ্জিনবোটের সুবিধা। শহর থেকে চার কিলোমিটার পূর্বে বালুখালীতে গড়ে উঠেছে সরকারি কৃষি বিভাগের কৃষিফার্ম, বেসরকারি পর্যটন স্পট টুকটুক ইকোভিলেজ, পেদাটিংটিং ও চাংপাং রেষ্টুরেন্ট। প্রায় ৬-৭ কিলোমিটার নদীপথ দূরত্বে জেলার বরকল উপজেলার সুবলংয়ে মনোরম সুবলং ঝর্না স্পট তার সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে পাহাড়ের চুড়ায় মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বৌদ্ধ মূর্তি।
পোস্ট- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান