॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
রাঙামাটি জেলায় যোগদানের পর থেকে পিছিয়ে পড়া এ জেলায় নানা আঙ্গিকে সংস্কার, উন্নয়ন এবং নতুন নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়ে জেলাবাসীর হৃদয় কেড়ে নেওয়া জেলাপ্রশাসক মোশারফ হোসেন খান শেষ পর্যন্ত বদলি হয়ে গেলেন। তার জায়গার জেলাপ্রশাসক হিসেবে আসছেন ইশরাত ফারজানা।
জেলাপ্রশাসক মোশারফ হোসেন খান দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে এ জেলার শিক্ষা এবং পর্যটন খাতে বেশ কিছু প্রসংশনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ ছাড়া তিনি সদালাপি অথচ মৃদুভাষি এবং জনবান্ধব সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে রাঙামাটির মানুষের কাছে অত্যান্ত প্রিয়ভাজন এবং সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন।
এ দিকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা নতুন জেলাপ্রশাসক হিসেবে পাচ্ছে জেলাপ্রশাসক ইশরাত ফারজানাকে। তিনি বর্তমানে ঠাকুরগাঁও জেলায় জেলাপ্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইশরাত ফরজানা যোগদানের পর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাঙামাটিবাসী কোনো নারী জেলাপ্রশাসক পাবেন। এর আগে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে নারী ডিসি দায়িত্ব পালন করে গেলেও রাঙামাটিতে তিনিই হবেন প্রথম নারী ডিসি।
২০২৩ সালের ৬ জুলাই ডিসি মোশারফ রাঙামাটিতে জেলাপ্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত হন। যোগদানের পর থেকেই তিনি জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করায়, সরকার পরিবর্তনের পরও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। দায়িত্বপালনকালীন সময়ে তিনি প্রত্যন্ত উপজেলাগুলো প্রাধান্য দিয়ে সফর করেন এবং দুর্গম বিলাইছড়িতে শিক্ষার উন্নয়নে নিজ উদ্যোগে একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করে চমক সৃষ্টি করেন।
তিনি পর্যটন বিকাশে বেশ কয়েকটি সেমিনার করে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে কিছু প্রসংশনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিগত ২০ সেপ্টম্বর রাঙামাটিতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় এই জেলাপ্রশাসক তাৎক্ষণিকভাবে ১৪৪ ধারা জারি করে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিস্থিতি সামাল দেন। এর মাধ্যমে সকালে তিন ঘন্টায় যে তান্ডবের সূত্রপাত হয়েছিল, মূহুর্তেই তা নিয়ন্ত্রণে আসে এবং জনগণ আরো বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। পরবর্তী কয়েকদিন ছিল রাঙামাটি গুজবের শহর; তখনও দক্ষতার সাথে তিনি পরিস্থিতি মোকাবেলা করে জনগণের কাছে প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন।
নতুন জেলাপ্রশাসক ইশরাত ফারজানাকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখে ঠাকুরগাঁওয়ের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়। তিনি ঠাকুরগাঁয়ে যোগদান করেন ২৫ সেপ্টেম্বর।
এর আগে ইশরাত ফারজানা ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন। নারী উপ-সচিব হয়েও তিনি বিগত সরকারের আমলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের তালিকায় বৈষম্যের স্বীকার হন। ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ ইতোমধ্যে তার দক্ষতায় অভ্যস্ত হতে শুরু করলেও হঠাৎ করেই অর্থ বিভাগ থেকে একজনকে সেই জেলার ডিসি করা হলো।
প্রসঙ্গত ঠাকুরগাঁও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নির্বাচনী এলাকা।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জেলাপ্রশাসক পদায়ন করে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তাতে মাত্র তিনজন উপসচিবকে তাদের দায়িত্বে রদবদল সংক্রান্ত তথ্য সন্নিবেশ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহকে ঠাকুরগাঁয়ের নতুন ডিসি করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে উপ-সচিব আমিনুল ইসলামের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে নি¤œবর্ণিত কর্মকর্তাদ্বয়কে তাদের নামের পাশে বর্ণিত জেলায় জেলাপ্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট পদে বদলি/পদায়ন করা হলো।
সরকারের উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের জেলাপ্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। জেলা পর্যায়ে ডিসি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। তবে পার্বত্য জেলাসমূহের জেলাপ্রশাসকগণ অন্যান্য জেলার তুলনায় কিছু অতিরিক্ত ক্ষমতা পেয়ে থাকেন। ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রম শাসনবিধি অনুযায়ী পার্বত্য জেলাপ্রশাসকগণ নিছক কালেক্টর বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নন, তার থেকে বেশি কিছু।
































