দেড়যুগ পর রাঙামাটি শহরে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন: দেশের মানুষ এবার নিছক ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, আদর্শের পরিবর্তন চায় ঃ মাও: শাহজাহান

14

॥ আনোয়ার আল হক ॥
‘দেশের মানুষ এবার নিছক ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, আদর্শের পরিবর্তন চায়’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার হটানো ছাত্র-জনতা এবার নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। শুধুমাত্র ক্ষমতার পালাবদলের মাধ্যমে সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মাঝে দেশের মানুষ এখন তাদের সেই স্বপ্নেরই প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছে। তাই তারা আগামী দিনে জামায়াতে ইসলামীর হাতে দেশের শাসন ক্ষমতা তুলে দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাঙামাটি শহরের আল আমীন মাদ্রাসা মাঠে দীর্ঘ ১৮ বছর পর অনুষ্ঠিত জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের আমীর শাহজাহান চৌধুরী।
বক্তব্যে শাহাজাহান চৌধুরী বলেন, জামায়াত বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না, তাই পাহাড়ি-বাঙালি, হিন্দু-মুসলীম তত্ত্ব পরিহার করে আসুন আমরা পাহাড় সমতলের মানুষ একসাথে মিলে মিশে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার শপথ নেই।


সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান তার বক্তব্যে আরো বলেন, শেখ হাসিনা অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড এবং চরম নৃশংসতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। কিন্তু জনতার শক্তি তাকে হিন্দুস্থানে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। লুটপাট চালিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ফোকলা বানিয়ে পালিয়ে যাওয়া সেই আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে আর পুর্নবাসনের কোনো সুযোগ নেই। আমরা বাংলাদেশকে আর পিছিয়ে পড়তে দেবো না। মানুষের স্বপ্ন প্রত্যাশা ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার পথে জামায়াত কর্মীরা তাদের জীবন বাজি রেখে লড়াই করে যাবে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকার সময় সবচেয়ে বেশী জুলুমের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দীর্ঘ দেড় যুগ আমরা কথা বলতে পারিনি, নিজের বাড়িতে ঘুমাতে পারিনি, জেলখানাগুলো হয়েছিল আমাদের বাড়িঘর। অথচ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালানোর পর জামায়াত কোনো প্রতিশোধ নেয়নি। কারণ আমরা প্রচলিত ক্ষমতার রাজনীতি করি না। আল্লাহর জামিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করি, আমরা মানুষকে ধৈয্যর্, নৈতিকতা এবং কল্যাণমুখিতা শেখাতে চাই।
তিনি বলেন, ফ্যাসীবাদের পতন হলেও তারা নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে, জনগণকে এ ব্যপারে সতর্ক থাকতে হবে। বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা, শাপলা চত্বরে ওলামাদের হত্যা এবং লগি, বৈঠা দিয়ে মানুষ মেরে লাশের উপর নৃত্য করার মাস্টার মাইন্ড শেখ হাসিনা ফিরলে শুধু ফাঁসির মঞ্চেই ফিরতে পারবে অন্য কোনোভাবে নয়।
কর্মী সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মুহাম্মদ জাফর সাদেক, রাঙামাটি জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলীম, রাঙামাটি ইসলামিক সেন্টারের চেয়ারম্যান ও জেষ্ঠ্য আইনজীবি এ্যাভোকেট মোখতার আহম্মেদ, রাঙামাটির নায়েবে আমীর মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মোঃ মনছুরুল হক, জেলা জামায়াতের শুরা সদস্য মাওঃ নুরুল আলম সিদ্দিকী, জামায়াত নেতা এ্যাডভোকেট হারুনুর রশিদ, জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, জেলা শিবির সভাপতি শহীদুল ইসলাম, সেক্রেটারী রবিউল আলম ও কাপ্তাই উপজেলা আমীর হামিদুর রহমান প্রমুখ। পৌর জামায়াতে আমীর মুহাম্মদ আব্দুস সালামমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন এডভোকেট রহমত উল্লাহ ও মাইনুদ্দিন।
দীর্ঘ দিন পর রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন ঘিরে রাঙামাটি শহরে মানুষের ঢল নামে। ১০টায় সম্মেলন শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই মানুষ সম্মেলন স্থলে আসতে থাকে। ৯টার দিকে মাদ্রাসা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এদিকে রাঙামাটি জেলার প্রবেশ মুখ বেতবুনিয়া থেকে তিন শতাধিক মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে জামায়াত নেতাকর্মীরা তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে বরণ করে নিয়ে আসেন। সম্মেলনের পূর্ব মূহুর্তে শহরে একটি শুভেচ্ছা শোভাযাত্রা বের করা হয়।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী আরো বলেন, ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত বাংলাদেশে ইসলামের উপর প্রথম আঘাত করে শেখ মুজিব। তিনি জামায়াতকে দাবায়ে বলেছিলেন কিন্তু আজ শেখ মুজিব নিজেই ইতিহাস থেকে মুছে যাচ্ছেন। তার কন্যা শেখ হাসিনাও বিগত ১৮ বছরে জামায়াতের নেতাকর্মীদের উপর চরম নির্যাতন অত্যাচার চালিয়েছে। দেশ বিক্রি করে দিয়েছে বিদেশী প্রভুদের কাছে। হাসিনা যেই সময়ে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছিলো ঠিক সেই একই সময়ে জনগণের ধাওয়া থেয়ে শেখ হাসিনা দাদার দেশে পালাতে বাধ্য হয়েছে, এটাই আল্লাহর বিচার।


পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, সেই ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া সরকারের সময় পাহাড়ে শান্তিচুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারতের ষড়যন্ত্রে সেটা আটকে যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ পার্বত্য বিষয়ে যে চুক্তি করেছে সেটি একটি অসম চুক্তি এবং ভারতের এ্যজেন্ডা বাস্তবায়নের দলীল।