॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
দেশে- বিদেশে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের কাছে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত ইউপিডিএফ এর ধৃষ্টতা এবং দেশ বিরোধি ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে ইউপিডিএফ নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সর্বস্তরের মানুষ। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পিসিসিপি’র ডাকে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষাভ সমাবেশ থেকে বলা হয়, অবিলম্বে ইউপিডিএফসহ পাহাড়ের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এ এলাকার শান্তিপ্রি মানুষ দুর্বার আন্দেলনে নামতে বাধ্য হবে।
সমাবেশে বক্তরা জানান, এই সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে “তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রস্তাব” দিয়ে যে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে, পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় মানুষ কোনোভাবেই তা মানতে পারছে না। বক্তারা বলেন, ইউপিডিএফকে শুধু প্রশাসন বা পাহাড়ের বাঙালিরা নয় খোদ জনসংহতি সমিতিও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে। এমন একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সংগঠন কিভাবে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন পর্যন্ত গিয়ে দেশদ্রোহীতামুলক প্রস্তাব পেশ করতে পারে এজন্য বক্তারা বিস্ম প্রকাশ করেছেন।
পাহাড়ে শান্তিকামী আন্দোলনের নেতা তথা সমাবেশের প্রধান বক্তা মুজিবুর রহমান মুজিব বলেন, বিগত অর্ধশতাব্দী সময় ধরে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র এবং গায়ের জোরে খুন-ধর্ষণ- চাঁদাবাজী গুম এবং রাহাজানি করে আসলেও এই এলাকার মানুষের নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারগুলো যথার্থ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভাইয়ের সামনে বোন, স্বামীর সামনে স্ত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পরও অস্ত্রধারীদের ভয়ে এই এলাকার বাঙালি জনগোষ্ঠীর মানুষ মুখ খুলতে সাহস পায় না। দিনে দিনে মানুষে মনে ক্ষোভ এতটাই পঞ্জিভূত হয়েছে যে, মানুষের মর্যদা নিয়ে বেঁেচ থাকার তাগিদে আজ তারা নিজেরাই অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এই বাঙালি নেতা সরকারের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন আমাদেরকে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বাধ্য করবেন না। কারণ রাষ্ট্র যদি নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় তখন নির্যাতিত মানুষ বাঁচার তাগিদে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে।
দাবির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ও ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পিসিসিপি রাঙামাটি জেলা শাখার উদ্যােগে বিক্ষোভ মিছিল ও মহা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১২ মে) সকাল ১১.০০ টায় রাঙামাটি পৌরসভার সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বনরূপায় গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। হাজারো মানুষের উপস্থিতি স্বল্প সময়ের ডাকা এই বিক্ষোভ সমাবেশ এক পর্যায়ে মহুসমাবেশে পরিণত হয়।
পিসিসিপি রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি মো: আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে ও সহ-সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন এর সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পিসিএনপি’র কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান, প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল মাহমুদ, পিসিএনপি’র রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোলায়মান, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পিসিএনপি’র রাঙামাটি সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, পিসিসিপি রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, প্রচার সম্পাদক ইসমাঈল গাজী, পিসিসিপি লংগদু উপজেলা শাখার সভাপতি মো: সুমন।
সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে, তা আর কোনও অবস্থাতেই অস্বীকার করা সম্ভব নয়। বিশেষত, আলী রিয়াজের নেতৃত্বে গঠিত ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’-এর সঙ্গে (১০ মে)২৫ ইং শনিবার ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর আলোচনার পর, পুরো পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। কমিশন কি সত্যিই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে, না সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিক বৈধতা দিয়ে তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ করে দেশের নিরাপত্তা ও শান্তির প্রতি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে?
ইউপিডিএফ, একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে যার শেকড় রয়েছে অত্যাচার, হত্যাকাণ্ড, অপহরণ এবং চাঁদাবাজির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে, সেই দলটিকে এখন রাজনৈতিক দল হিসেবে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। দলটির অন্যতম নেতা মাইকেল চাকমা, যার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাকাণ্ড, মানুষকে অপহরণ করা, চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে, এখন সেই সন্ত্রাসীই গণতান্ত্রিক শাসনের কথা বলছেন। কিন্তু প্রশ্ন আসে, সত্যিই একজন সন্ত্রাসী নেতা কি গণতন্ত্রের প্রচারক হতে পারে? তার অতীত তো একেবারেই ভিন্ন ছবি আঁকছে। মাইকেল চাকমা আত্মগোপনে থাকার পর ৫ আগষ্ট পরবর্তী বিপ্লবী নেতা সাজার চেষ্টা করে অনৈতিক ও দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে নানা অন্যায় আবদার করে তা আদায় করার চেষ্টা করছে।
বক্তারা আরো বলেন, একত্রীকরণের নাম করে সন্ত্রাসীদের রাজনীতির মঞ্চে আনা, তা কখনোই গণতন্ত্রের পক্ষে উপকারী হবে না। ইউপিডিএফ, মাইকেল চাকমা এবং তাদের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে রাজনৈতিক বৈধতা প্রদান করা, দেশের জন্য একটি বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে—এটা নিশ্চিত।
দেশের অখন্ডতা পার্বত্য চট্টগ্রামকে রক্ষায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে, ইউপিডিএফের অবৈধ অস্ত্রধারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ করা না হলে তিন পার্বত্য জেলার শান্তিকামী মানুষকে নিয়ে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে অচল করে দেওয়া হবে।