\ আলমগীর মানিক \
খোলস ছেড়ে এবার প্রকাশ্যে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সশস্ত্র মহড়া দেখিয়েছে সন্ত্রাসীরা। পাহাড়ের এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের নির্মাণাধীন প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনের কাজ থেকে চাঁদা দাবি করে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার হুমকিও দিয়ে গেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এর কিছুদিন আগেও সন্ত্রাসীরা এই কাজের ঠিকাদার থেকে চাঁদা নিয়ে যায় জনশ্রুতি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসীদের এই দুঃসাহস শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা, সন্ত্রাসী হামলার পর বর্তমানে এ দুটি ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মচারী এবং নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে নিরাপত্তা হীনতায় দিন পার করছে বলে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
ছাত্রনেতারা জানান, পাহাড়ের মর্যাদার প্রতীক এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে ভারী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীদের অবাধ বিচরণ, চাঁদা দাবি, হুমকিসহ মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই আতঙ্কের পাশাপাশি রাবিপ্রবি’র শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার-পরিজনদের মধ্যে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।
ঘটনায় পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোতোয়ালি থানায় জিডি করেছে। রাবিপ্রবি’র সহকারী অধ্যাপক ও প্রক্টর সাদ্দাম হোসেন বাদি হয়ে এই সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে প্রতিবেদককে তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে বর্তমানে ১৬ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন তলা প্রশাসনিক ভবন ও ১৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন তলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ চলছে। গত ফেব্রæয়ারি মাস থেকে ভবন দুটির নির্মাণ চলছে। উভয় ভবনের নির্মাণকাজ পেয়েছে চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমই-আরবিজেবি।
গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে সাতজনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী ক্যাম্পাসে ঢুকে ঠিকাদারের কর্মচারীদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। পরে সন্ত্রাসীরা নির্মাণ শ্রমিকদের থাকার জন্য তৈরি করা টিনশেডের ঘরে ঢুকে তাদের ১০ থেকে ১২টি মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নেয়।
সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার আগে চাঁদা না দিলে নির্মাণকাজ বন্ধের হুমকি দেয়। চাঁদা না দিয়ে কাজ চলমান রাখলে পরবর্তী সময়ে ক্ষতি হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর ঠিকাদারের লোকজন ও শ্রমিকরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানায়।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া প্রায় ছয় মিনিটের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ২৬ জুন রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে সাত সন্ত্রাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক ধরে হেঁটে ক্যাম্পাসে ঢুকছে। তাদের মধ্যে চারজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। ক্যাম্পাসে ঢোকার মুখে চেয়ারে বসা নিরাপত্তা প্রহরী অস্ত্রধারীদের দেখে উঠে দাঁড়ান। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাঁর কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। অস্ত্রধারীরা শ্রমিকদের ঘরে ঢুকে কয়েক মিনিট অবস্থান করার পর একই পথে চলে যায়।
এ ব্যাপারে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাঙামাটি কোতোয়ালি থানায় জিডি করেছে। পাশাপাশি অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকেও জানানো হয়েছে বিষয়টি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সন্ত্রাসীরা আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কাজে দুইবার চাঁদা দাবি করেছিল। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ভবনের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার ওসি সাহেদ উদ্দীন জানান, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আতিয়ার রহমান এ ঘটনাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন, এর আগে সিসিটিভি ফুটেজ না থাকায় কারা চাঁদা চাইতে এসেছিল জানা যায়নি। তবে এবার কারা এসেছে আমরা জানতে পেরেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে দেখবেন।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা এবং অবকাঠামোগত অগ্রগতি মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এটি ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার এখনই উপযুক্ত সময় বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সচেতনমহল।
Home এক্সক্লুসিভ রাঙামাটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ আতঙ্ক