আকবর হোসেন চৌধুরী : পর্যটন নগরী রাঙামাটির নতুন বিধায়ক

521

p.....5pppnnn

সম্পাদকীয় : আনোয়ার আল হক- সম্পাদক, দৈনিক রাঙামাটি : পর্যটন নগরী রাঙামাটির দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন নতুন নগর পিতা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং তাৎপর্যময় বৈশিষ্টই হলো নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে নাগরিকদের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেবার ভার জনগণ নতুন করে নির্ধারণ করে দেয়। এই পদগুলো যেমন কারো জন্য স্থায়ী নয়, তেমনি কারো জন্য ক্ষণস্থায়ীও নয়। সুনির্দিষ্টভাবেই নির্ধারণ করা থাকে কারা কত সময়ের জন্য নির্বাচিত হলেন। এই সময়ের ফ্রেমে নেতৃবৃন্দ যদি নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে সমর্থ হন জনগণ আবারো তাদের গলায় মালা পরাতে কার্পণ্য করে না। তেমনি যারা জনআকাক্সক্ষা পুরণে ব্যর্থ হন তারা আবার ফিরে যান জনগণের কাতারে। কখনও কখনও এই নিয়মে কিছু ব্যতয়ের ঘটনা ঘটলেও এটাই চিরাচরিত রীতি। তবে এই যাওয়া আসার সন্ধিক্ষণে ভোটের ব্যবধান নিয়ামক ভূমিকা পালন করলেও আপন কর্মগুণে কেউ ইতিহাসের অংশ হন কেউ বা আবার বিস্মৃতির অতল তলে হারিয়ে যান। জননেতারা এই কথাগুলো জানার পরও সব সময় মনে রাখতে পারেন না। এর পিছনে সব সময় যে তাদের সদিচ্ছা এবং যোগ্যতাই দায়ী থাকে, হয়তো সকল ক্ষেত্রে এমন নয়। আমাদের দেশের অর্থনীতি, রাজনৈতিক পেক্ষাপট এবং প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান অনেক সময় যোগ্যতা ও সদিচ্ছাকে ছাপিয়েই বিচারের আসন দখল করে।

পৌর পরিষদের ছোট্ট ফোরামটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের না হলেও নগর সভ্যতার প্রাথমিক স্তর। এখান থেকে উন্নয়নের শেকড় শুরু হয়ে সমাজের বাকি অংশকে সম্পৃক্ত করে। রাঙামাটি পৌরসভা দেশের মধ্যে একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সেই ১৯ জেলার রাষ্ট্র ব্যবস্থার সময়ও রাঙামাটি- অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা শহর ছিল। এবার দায়িত্ব গ্রহণ করলো ১৮তম পরিষদ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে এই জেলা শহরের উন্নয়ন এবং আধুনিক পরিবর্তনের গতি তেমন একটা উৎসাহব্যঞ্জক নয়। অথচ রাঙামাটি শহর যুগপৎভাবে একটি পর্যটন শহরও বটে। পর্যটন শহর হিসেবে এই শহরের অবস্থান দেশের অন্যান্য পর্যটন নগরির মোকাবেলায় ৫ম বা ৬ষ্ঠ স্থানে। এখানকার প্রকৃতি, জীব বৈচিত্র এবং সংস্কৃতি দেশ-বিদেশের মানুষকে যেভাবে আকর্ষিত করে; তাদের টেনে আনে রাঙামাটির কোলে। প্রকৃতির সাথে সেই অতিথিদের মনসৌন্দর্যের সংযোগ ঘটানোর অন্যান্য সুযোগ সুবিধা এবং এর সহজলভ্যতা পর্যটন শহর রাঙামাটিতে অনেকাংশেই অনুপস্থিত। অথচ সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনিক দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজ এবং একেবারে আমজনতা; সকলেই একমত যে শুধুমাত্র পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে রাঙামাটি শহরসহ এই জেলার অর্থনৈতিক গতিপ্রবাহে আমুল পরিবর্তন আন সম্ভব। নব নির্বাচিত মেয়র এবং তার পরিষদ এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেবেন, এমন প্রত্যাশা সর্বস্তরের মানুষের।

পৌর প্রশাসন পরিচালনায়ও তাদের কঠোরতা এবং দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে বলে মনে করে নাগরিক সমাজ। কারণ প্রথম শ্রেণির একটি পৌরসভায় যে পরিমাণ জনবল থাকার কথা, বাস্তবতার কারণে রাঙামাটি পৌরসভায় সেই পরিমাণ জনবল নেই। এমনকি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রধান নির্বাহীর পদটিও বেশীর ভাগ সময়ে একজন সহকারি কমিশনার কে দিয়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পালন করানো হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রেও জনবল সঙ্কট রয়েছে। তার মাঝেও বেশ কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর মাঝে কর্তব্যে ফাঁকি দেওয়াসহ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার প্রবণতা বরাবরই নাগরিকদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে সেবাপ্রার্থীরা যেমন হয়রানীর শিকার হচ্ছেন, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে পৌরসভার সামগ্রিক উন্নয়ন।

গত রোববার রাঙামাটি পৌরসভার নব নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করে বিদায়ী পরিষদ। ওইদিন অপরাহ্নে রাঙামাটি পৌরসভা কার্যালয়ে এই দায়িত্ব গ্রহণ ও হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে একই দিন আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় নতুন নগর পিতা আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমার অঙ্গীকার হলো শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ একটি সুখী নাগরিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। রাঙামাটি পৌর এলাকায় আমরা বিভিন্ন ভাষাভাষি ও নানা জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ একসাথে বসবাস করি। এই সৌভাগ্য আমাদের এনে দিয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট, তাই ঐতিহ্যের সুনাম ধরে রাখার জন্যই আমাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, আমার মিশন হবে রাঙামাটি শহরকে দুর্গন্ধ ও জঞ্জালমুক্ত একটি পরিচ্ছন্ন পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা। আমি সকলের সহযোগীতা চাই। আগামী দিনের উন্নয়ন হবে সমভাবে সকলের জন্য।’ নতুন মেয়রের এই চৌকস বক্তব্যে নাগরিক সমাজ চমৎকৃত, তিনি তার সূচনা বক্তব্যের কথাগুলোর প্রতি সুবচার করতে পারলে এই পৌরসভার চেহারা পরিবর্তন হতে বাধ্য।

পাশাপাশি বিদায়ী মেয়র সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ভূট্টো তার বিদায়ী ভাষণে বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা এবং দলীয় আদর্শের বাইরে থেকে নাগরিক সমাজের উন্নয়ন করতে। কতটুকু পেরেছি কি পারিনি, কেন পারিনি, সে বিচারের ভার নাগরিক সমাজের। তবে আজ দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে গেলেও এই পৌরসভার একজন নাগরিক হিসেবে আমি রাঙামাটি পৌরসভার উন্নয়নে আজীবন কাজ করে যাবো। নতুন পরিষদ যখনই মনে করবে, আমাকে ডাকলে বা কোনো সহযোগীতা চাইলে আমি আনন্দচিত্তে তা পালন করবো। তিনি বলেন, আমরা যাওয়ার সময় উত্তরসূড়ীদের জন্য কি রেখে যেতে পারলাম সে বিষয়ে আমি লিখিত প্রতিবেদন প্রদানের সাথে সাথে সাংবাদিক সম্মেলন করেও তা জনগণের উদ্দেশ্যে জানিয়ে গেলাম’। তার প্রতিও আমরা শুভ কামনা জানাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, তিনি রাঙামাটি পৌরসভার উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্বক সহযোগিতা থাকবে বলে আশ্বাস প্রদান করে বলেন, আমি এ এলাকার সন্তান, রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে সকলকে কাঁেধ কাঁধ মিলিয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে। পৌরসভার উন্নয়ন হলে আমাদের এলাকার উন্নয়ন হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুৎ। এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও আমরা পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পাই না। অথচ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমাদের লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। কথা ছিলো বিদ্যুৎ উপাদন হলে অঞ্চলের অধিবাসীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কিন্তু  জনগণের দাবি আজ পর্যন্ত পূরণ হয়নি।

বিদায় ও বরণ অনুষ্ঠান শেষে রাঙামাটি পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে নব নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন বিদায়ীরা। এ সময় নতুন মেয়রকে ১৫০ কোটি টাকায় বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বুঝিয়ে দেন বিদায়ী মেয়র। এরমধ্যে ইউজিপ প্রকল্পের আওতায় ১৫ কোটি ৭২ লক্ষ টাকার টেন্ডার ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা যায়। এ ছাড়া রাঙামাটি পৌরসভায় একটি আধুনিক মিলনায়তনসহ (টাউনহল) পৌরভবন নির্মাণ এবং ফিসারী ঘাট থেকে ট্রাক টার্মিনাল পর্যন্ত সংযোগ সড়কে সিম্বল অব রাঙামাটি নামে একটি পর্যটন নির্ভর সৌন্দর্য বর্ধনমুলক প্রকল্পের যে প্রস্তাব রয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে পর্যটন শহরে নতুন ব্যঞ্জনা আসবে বলে আশা করা যায়।

বিগত ২০১৫ সালের ৩০শে ডিসেম্বর সারাদেশের ন্যায় রাঙামাটি পৌরসভায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন রাঙামাটি জেলা যুবলীগের সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী। নির্বাচনের জয়লাভের পর গত ২৪ই জানুয়ারী চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে শপথ গ্রহণ করে নবনির্বাচিত পৌর পরিষদ।

পোস্ট করেনন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান :  ৫ মার্চ ২০১৬