॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাঙামাটি সেক্টরের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে মঙ্গলবার।
দিবসটি পালনে বিজিবি রাঙামাটি সেক্টর মনোরম সাজে সজ্জিত করা হয়। দুপুরে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কেক কাটার পর প্রীতিভোজে অংশ নেয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও জেলার উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা, রাঙামাটি জেলা থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার, সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) মাহবুবুল আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) মোঃ নুরুল হুদা, ডিজিএফআই অধিনায়ক কর্নেল মোঃ এমদাদ উল্লাহ ভুঁইয়া, পিএসসি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শহীদ উল্লাহ, রাঙামাটি পৌর মেয়র মোঃ আকবর হোসেন চৌধুরীসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।
এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে এএসইউ অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মিঞা মোঃ হেমায়েত হোসেন, ২২বিজিবি বরকল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোঃ আলাউদ্দীন আল-মামুন, ২৫বিজিবি ছোট হরিনা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোঃ শাহাবুদ্দীন ফেরদৌস, নানিয়ারচর জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল এম ইমরান হামিদ, পিএসসি, রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মাইনুল ইসলাম প্রমূখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা এসময় তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে পার্বত্যাঞ্চলে বিজিবি কার্যক্রম ইতিবাচক ভ’মিকা রাখছে উল্লেখ করে বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের যে বহুমুখি বাস্তবতা সেই বাস্তবতা উপলব্ধি করে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিজিবি কাজ করবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। তিনি পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে কাজ করার আহবান জানান। সন্তু লারমা বলেন, বিজিবি’র সদস্যরা পার্বত্যাঞ্চলকে বিশেষ অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে যেভাবে কাজ করছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
এছাড়াও বিজিবি নিঃসন্দেহে জনগনের কল্যানেই কাজ করে চলেছে। সন্তু লারমা বিজিবি’র উত্তরোত্তর উন্নতি ও সফলতা কামনা করেন এবং জনহিতকর কাজের জন্য বিজিবি রাঙামাটি সেক্টরকে ধন্যবাদ জানান।
মঙ্গলবার দুপুরে আয়োজিত প্রীতিভোজের পূর্বে বিজিবি রাঙামাটি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোঃ আশরাফুল ইসলাম অতিথিদের স্বাগত জানান। পরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রীতিভোজের পূর্বে বিজিবি রাঙামাটি সেক্টরের কর্মকান্ড সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন সেক্টরের অতিরিক্ত পরিচালক অপারেশন মেজর মোঃ ফজরে রাব্বি পিবিজিএম। সন্ধ্যায় বিজিবি’র হ্যালিপ্যাডে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
স্মরণযোগ্য যে, ১৯৭৬ সালের ১নভেম্বর যাত্রা শুরু হয় বিজিবি রাঙামাটি সেক্টরের। শহরের রিজার্ভ বাজার এলাকায় মারিশ্যা ও কাপ্তাই এ ২টি ব্যাটালিয়ন নিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এই সেক্টর। এরপর ১৯৭৯ সালে বরকলে ১টি ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দীর্ঘদিন যাবৎ তিনটি ব্যাটালিয়ন নিয়ে এই সেক্টর এর কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে।
১৯৯৪ সালে সেক্টর সদর দপ্তর বর্তমান অবস্থানে (ঝগড়ার বিলে) স্থানান্তরিত হয়। ১৯৮৮ সালে ছোটহরিণায় এবং ১৯৯৪ সালে রাজনগরে ২টি ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অত্র সেক্টর অরব্যাট (ঙজইঅঞ) এ সংযোজিত হয়। বর্তমানে অত্র সেক্টরের অধীনে ৪টি ব্যাটালিয়ন যথাক্রমে ১৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন ২৪ মে ২০১৩ তারিখে ওয়া¹াছড়া, কাপ্তাই, ২২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে বরকল, ২৫ বর্ডার গার্ড ব্যাাটালিয়ন ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে ছোটহরিণা এবং ৩৭ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন ২৬ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে রাজনগরসহ ১৭৫ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার দায়িত্ব পালন করছে। সেক্টরের শুরুর লগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ৩৬ জন সেক্টর কমান্ডার অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রাঙামাটি সেক্টরের নেতৃত্ব প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রাঙামাটি সেক্টরের অধীনস্থ ব্যাটালিয়নে সাতটি নতুন বিওপি(সাউথলছড়া, বদিপাড়া, ঘাসকাপাছড়া, করল্লাছড়ি, ভূয়াটেক, উলুছড়ি এবং প্যারাছড়া) স্থাপিত হয় এবং চলতি বছরের মধ্যে আরো সাতটি নতুন বিওপি (কিয়ংপাড়া, মরাথেগা, মাইল্লাছড়াপাড়া, ছোটকরদিয়া, বরকরদিয়া, বগাখালী এবং দেবাছড়ি) স্থাপনের কাজ চলছে। এছাড়াও আরো তিনটি বিওপি (দুমদুমিয়া, পানকাটা, অদয়াবাবছড়া) নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।