এশিয়া বিখ্যাত কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদ বিদ্যুৎ উৎপাদনের মানষে সৃষ্টি করা হলেও এই হ্রদই এক সময় জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠে। জেলার পাঁচটি উপজেলার সাতে যোগাযোগের একমাত্র পথ নৌযানের চলাচল রুট এই কাপ্তাই হ্রদ ঘিরেই। সেই রুটে জঞ্জাল হয়ে রয়েছে কচুরীপানা।
বছরের পর বছর এই এইকচুরীপানা জেলার উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যাহত করছে, ব্যবসা বাণিজ্যকে স্থমিত করে দিচ্ছে, এমনকি সময় মতো মানুষ আইনের ঘরে পৌঁছুতে না পেরে আদালতের আদেশের মুখে পড়লেও এ নিয়ে কারো যেন কোনো মাথা ব্যথা নেই। হ্রদের এই কচুরী পানা এখন যেন রাঙামাটিবাসীর জন্য বিষ ফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। ভূক্তভুগিরা বার বার বলছেন কচুরীপানার জঞ্জালের কারণে নৌ চলাচল মারাতক্ব ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
কচুরীপানা সমস্যা সমাধানে নৌ-পরিবহন মালিকরা বিভিন্ন সময় এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য বিভিন্ন মহলের দ্বারস্থ হয়েও কোনো স্থায়ী সমাধান পায়নি। এ বিষয়ে বোট চালক কাদের মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমরা অনেক বছর যাবৎ এ কচুরীপানার কারণে বোট চালাতে হিমসিম খেতে হয়। এ কচুরীপানাগুলো আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিশাল সমস্যা সৃষ্টি করছে কিন্তু এর থেকে সমাধানের পথ এখনো খুঁজে পাইনি।
বরকল থেকে আসা ব্যবসায়ী হাসান জানান, আমাদের ব্যবসায়ী মালামাল রাঙামাটি সদর হতে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু কচুরীপানা জঞ্জালের কারণে বোটে করে মালামাল নিয়ে আমাদের উপজেলায় আসতে অনেক কষ্ট পেতে হয়। সময় মতো উপজেলার ঘাটে পৌছা যায় না।
এদিকে রাঙামাটি সদরের সাথে বাঘাইছড়ি, লংগদু, বিলাইছড়ি, জুড়াইছড়ি, নানিয়ারচর, কাপ্তাই, বরকল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নৌ-পথ। কচুরীপানা জঞ্জালের কারণে এ নৌ-পথ দিয়ে বোট-লঞ্চে করে মালামাল আনা-নেওয়া কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে বোট চালকদের। কচুরীপানা জঞ্জালের কারণে এসব উপজেলার ব্যবসায়ীরাও হতাশ, সঠিক সময়ে মালামাল আনতে না পেরে।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম জাকির হোসেন বলেন, কচুরীপানা কাপ্তাই হ্রদের নৌ-পথে দীর্ঘদিনের সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা গত বছর একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করেছিলাম, কিন্তু কচুরীপানার নিরসনে এই ছোট প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা সফল হতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন,কচুরীপানা সমস্যা সমাধান, কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিং এবং কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনার জন্য সঠিক ভাবে কাজ করতে হলে অনেক খরচের ব্যাপার। এ জন্য তিনি কচুরীপানা সমস্যা সমাধান, কাপ্তাই ড্রেজিং এবং কাপ্তাই হ্রদের সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি বলেন, কচুরীপানার সমস্যা সমাধানে আমরা বিভিন্ন সময় জেলা পরিষদ এবং জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা করেছি এবং সমাধানের পথ খুঁজার চেষ্টা করেছি। তবে কচুরীপানাকে আমরা চাইলে জৈব সারে পরিণত করতে পারি। এর জন্য ব্যপক অর্থের প্রয়োজন হবে। কোন বে-সরকারী সংস্থা যদি উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এ কাজে অগ্রসর হয় এবং জৈবসার তৈরি করে কৃষকদের মাঝে কম দামে বিতরণ করে তাহলে কিছুটা হলেও এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।
কোন উদ্যোক্তা উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এখনো কোন উদোক্তা উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তিনি বলেন, তবে বেসরকারী পর্যায়ে কোন উদোক্তা যদি এ ব্যাপারে অগ্রসর হয় তাহলে আমরা তাকে স্বাগত জানায়।