প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে হল থেকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা রাস্তায়

514

॥ মঈন উদ্দীন বাপ্পী ॥

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র শামছুজ্জামান বাপ্পীকে হল থেকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে আমরণ অনশনের হুমকি দিয়েছে তার সহকর্মীরা। বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে এ বহিষ্কারদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে রাবিপ্রবির অস্থায়ী হলের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেয় তার সহপাঠিরা।

শিক্ষার্থীরা জানায় আজকের দিনের মধ্যে যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাপ্পীর বহিষ্কারাদেশ বাতিল না করে তাহলে আমরা আমরণ অনশন করতে বাধ্য হবো। এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র মো. ইমরান বলেন, বাপ্পীকে বিনা কারণে হল থেকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। বাপ্পীর বহিষ্কারাদেশ বাতিল না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

ঘটনার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র শামছুজ্জামান বাপ্পী এ বিষয়ে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নানামুখি অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে আমরা ২০১৫ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণী কার্যক্রম চালুর দাবিতে আমরা আন্দোলন করি এবং আন্দোলনের ফসল হিসেবেই একসময় শ্রেণি কার্যক্রম চালু হয়।

তিনি বলেন, বিগত দিনে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জম্মদিন পালন, শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়া এবং জাতির জনকের শোক দিবস পালন করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করে।

প্রক্টোরিয়াল বোর্ডে আমার দেওয়া বক্তব্য আমলে না নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যারা রাঙামাটিতে এই বিশ্ববিদ্যালয় চায় না এটি তাদের দোসরদের চক্রান্ত। এ অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য (ভিসি) ড. প্রদানেন্দু চাকমা সাংবাদিককে জানান, আমি চট্টগ্রামে আছি। এ বিষয়ে আমি অবগত নই।

আমি খোঁজ নিচ্ছি। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জুয়েল সিকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে জানান, আমি পারিবারিক চিকিৎসা কাজে ঢাকায় আছি। এ ব্যাপারে আপতত কিছু জানাতে পারছি না।

এদিকে বর্তমানে হলের দায়িত্বে থাকা সজিব ত্রিপুরার টেলিটক নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য কর্মকর্তার নম্বরে ফোন দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।

জানা গেছে, ছাত্রবাসে নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ২০১৬ সালের ৪আগষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করে। সর্বশেষ ১লা মার্চের মধ্যে হলত্যাগের নির্দেশ দিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারী তাকে হল থেকে বহিস্কারাদেশ প্রদান করে এবং বুধবার পুলিশ তাকে হল থেকে বের করে দেয়।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্ররা আন্দোলনে নামে। তারা এ ঘটনায় ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করে বলেছেন, বিশ্ব বিদ্যালয়ের মতো একটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে জাতির জনকের শোক দিবস পালন করাটা কোন যুক্তিতে দোষের হয় আমাদের বুঝে আসছে না।

এদিকে এই আদেশের নিন্দা জানিয়েছেন রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতা জাহাঙ্গীর আলম মুন্না ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।

এ ছাড়া পার্বত্য বাঙালি ছাত্রপরিষদ নেতৃবৃন্দ ঘটনার খবর শুনে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাশে আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন। উভয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অনতিবিলম্বে এই আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মনযোগ আকর্ষণ করে বলেছেন, কারো ব্যক্তি আক্রোশ বা জেদের বশে কোনো হটকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না।

এমনিতেই এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অনেক ঝড় ঝাপ্টা অতিক্রম করতে হচ্ছে। তার উপর নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করবেন না। তারা আশা করেন এ ঘটনায় প্রক্টোরিয়াল বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞা ও কৌশলের পরিচয় দিবেন।