প্রবল বর্ষণ অব্যাহত থাকায় কাউখালীর জনজীবন বিপর্যস্ত

406


মো. ওমর ফারুক- ৫ জুলাই ২০১৭, দৈনিক রাঙামাটি: ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকার জেরে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা এবং পাহাড় ধসের কবলে পড়ে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার জন জীবন বিপযস্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে পাহাড়ধস অন্যদিকে জলাবদ্ধতা দ্বিমূখি স্কংটে জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিপুল পরিমাণ মানুষ বন্যার শিকার হওয়ার পাশাপাশি এই উপজেলা পাহাড়ধসে ৪ ইউনিয়নে কমপক্ষে ২২জন লোক প্রাণ হারায়।

উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারনে সৃষ্ঠ বন্যায় এবং পাহাড়ধ্বসে এ পর্যন্ত কাউখালী উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে কমপক্ষে ২২জন লোক প্রাণ হারান। তার মধ্যে ১নং মডেল ইউনিয়নে একই পরিবারের ৪জন। ২নং ফটিকছড়ি ইউনিয়নে ১জন। ৩নং ঘাগড়া ইউনিয়নে ১৫জন। তার মধ্যে একই পরিবারের ৩জন, আরো এক পরিবারের ২জন। ৪নং কলমপতি ইউনিয়নে ১জন। বজ্রপাতে আরো ১জন নিহত হন। আহত হন অন্তত ১৫ জন। তার মধ্যে উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থ লোক সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজারের মতো। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা ২৮শতের মতে প্রায়। ক্ষতিগ্রস্থ হন উপজেলার ৫টি মাদ্রাসা, স্কুল ও মসজিদ, মন্দির ২১টি, ধ্বংসপ্রাপ্ত সড়ক কাচাঁ/পাকা ১৯ কিঃমিঃ, ধ্বংস হয় অনেক গুলি বাধঁ, মৎস্য খামার ২৫টি, ক্ষতিগ্রস্থ নলকুপ ১০টি, পুকুর/জলাশয় ২৫টি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার কমল বরন সাহা কর্তৃক প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৃষ্ঠ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের কাছে যত দ্রুত সম্ভব আমরা উপজেলা দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে ত্রাণ সামগ্রী ও নগদ অর্থ পৌছে দেওয়ার চেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছি।

বর্তমানে কাউখালী উপজেলায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ । কিন্তু এখনো প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢল অব্যাহত থাকার কারনে মানুষ দিশেহারা এবং চিন্তিত। একদিকে প্রবল বর্ষণ অন্যদিকে পাহাড়ী ঢল, ফলে মানুষ আজ সম্পুর্ন বিপর্যস্থ।

সরেজমিনে গুরে দেখা যায়, উপজেলার কাশখালী, ঘিলাছড়ি, নাইল্যাছড়ি, বেতছড়ি, বেতবুনিয়া, ঘাগড়া, কার্বারী পাড়া, কচুখালী, হেমন্ত পাড়া এসব এলাকায় পাহাড় ধ্বসে মানুষের বাড়িঘর,রাস্তাঘাট, বিদ্যৎ লাইন বিচ্ছিন্ন, মৃত গবাধী পশু মাটি চাপা দেওয়ার চিত্র, বিধ্বস্থ বাড়িঘর হতে মাটি সরানোর কাজ, বনজ, ফরজ বাগান হতে ভেঙে পড়ে যাওয়া গাছ কাটা, রাস্তার উপর থেকে পাহাড় ভেঙে পড়া মাটির স্তুপ অপসারন করা, ভেঙে যাওয়া নিজ আশ্রয় স্থল ভেড়ার ঘর সংস্কার করা সারা উপজেলার একই চিত্র যেন এখন সভাইর। এ প্রসঙে বেতবুনিয়ার বাসিন্দা উসুই প্রু, কার্বরী পাড়ার নিমাচাই মারমা, ঘিলাছড়ির আব্দুল লতিফ, কাশখালীর আব্দুর রশিদ যুগান্তরকে বলেন আমরা আজ বড় অসহায় আমাদের ৪০/৪৫ বছরেও এমন পাহাড়ী ঢল এবং বন্যা সেই সাথে পাহাড় ধ্বস দেখিনি। হটাৎ করে কি হয়ে গেলো আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। যে ক্ষতি আমাদের হয়েছে তা কোন রকম ফোশাঁনোর মতো নয়।

কাউখালী উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যাবস্থাপনায় নিহতদের নগদ ২০ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল, আহত প্রতিটি পরিবারকে নগদ ৫ হাজার টাকা ও ২০ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়। সেই সাথে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে কাউখালী উপজেলা আওয়ামীলীগ ও তার অঙসংঘঠনের সার্বিক সহযোগিতায় উপজেলায় নিহত প্রতি জনকে নগদ ২০ হাজার করে টাকা ও ২০ কেজি করে চাল ও আহত ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিটি পরিবারকে নগদ ৫ হাজার করে টাকা ও ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। এবং আংশিক ও সাধারন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের জন্য জেলা প্রশাসকের ত্রাণ তহবিল হতে মোট ১০ টন চাল (জিআর) বরাদ্ধ প্রদান করা হয় বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সুত্রে জানা যায়।

বর্তমানে কাউখালী উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে আতংকের মধ্যে রয়েছেন। মানুষজনকে পাহাড়ের পাশ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে মাইকিং করা হচ্ছে।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান ।