লেখা পড়ার দৌড় তেমন একটা না থাকলেও চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর রাজনীতিতে হাতে খড়ি হয় ছাত্রলীগের হাত ধরেই। আমতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার পর থেকেই তিনি ধীরে ধীরে তার খোলস খুলতে শুরু করেন। সময়ের বিবর্তনে তিনি এখন তার ছাত্র সংগঠনের নেতাদেরকেই নানাভাবে হয়রানী করছেন। তার রোষাণলের শিকার বর্তমানে আমতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক খোকন জানান, ‘দিন দিন রাসেলের অত্যাচার বেড়ে যাচ্ছে। তার হাত থেকে দলের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মী কেউ রেহাই পাচ্ছে না’।
ওই ইউনিয়নের সকলে একবাক্যে জানালেন রাসেল চৌধুরী একজন নাম করা মামলাবাজ। মামলা করতে করতে এখন তার আইনের অনেক ধারাই মুখস্থ। তিনি যা চাইবেন, তার বাইরে কোনো কিছুই এই ইউনিয়নে হতে পারবে না। সে বিয়েই হোক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনাই হোক, কিংবা কারো খাৎনাই হোক। অবৈধ কাঠ ব্যবসার পুরোটাই তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে গত দেড় দশক। তিনি ছাত্রলীগের পাতিনেতা থাকা অবস্থায়ই পেটোয়া বাহিনী গঠন করে এই ব্যবসার সকল নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করেন।
তিনি তিন পদ্ধতিতে সব কিছু তার নিয়ন্ত্রণে রাখেন, প্রথমত ভয়ভীতি প্রদর্শন, তাতে কাজ না হলে মারধর এবং এলাকা ছাড়া করা। আর তাতেও কাজ না হলেও পুলিশি ব্যবহার অথবা মামলা। মামলা করতে করতেই তার খায়েস জাগে তিনি আইনজ্ঞ হবেন। যেই কথা সেই কাজ, অষ্টম শ্রেণি পাশ করলেও তিনি ভর্তি হয়ে গেলেন রাঙামাটি আইন কলেজে। তারপর থেকেই তিন এলাকায় প্রচার করে আসছিলেন তিনি একজন এডভোকেট। ভাগ্যের ফেরে চেয়ারম্যান হবার পর তাকে স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে যান এক সেনা অফিসার।
জিজ্ঞেস করেন, আপনার বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই তাই আপনার সার্টিফিকেট কি আছে সে সম্পর্কে জানতে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু। তিনি সেনা সদস্যদের সামনে সত্যি জবাবটাই দেন এবং জানান তিনি অষ্টম শ্রেণি পাশ। কারণ সে সময়ে তার আইন কলেজে ভর্তির বৈধতা নিয়ে তদন্ত চলছিল। বাঘাইছড়ি থানা সূত্রে জানা গেছে, এই তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে তিনি আইন কলেজে এসএসসি, এইচএসসি এবং বিএ পাশের ভূয়া ও জাল সনদ জমা দিয়ে আইন কলেজে ভর্তি হন। একবছর ক্লাসও করেন।
তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত তোলপাড় চলে। নানা মুখরোচক কাহিনী ঘুরে ফিরে বিভিন্ন আইডির ওয়ালে ওয়ালে। তিনি নিজেও এ্যকটিভ থাকেন। তবে তার ওয়ালের পোস্টগুলো পড়লেই বোঝা যায় তার লেখাপড়ার দৌড় কতটুকু। এই মন্তব্য বাঘাইছড়ি ছাত্রলীগের একজন নেতার।
তার সম্পর্কে লিখিত অভিযোগ করা ৮জন সদস্য এই প্রতিবেদক বেদনার সাথে জানালেন, তারা সত্য উন্মোচনের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। এখন তাদের নামে আবার মামলার হিড়িক শুরু হয়েছে। যেসব ঘটনার কথা উল্লেখ করে তার নামে মালা দেওয়া হয়েছে। তার সাথে সদস্যদের দুরতম সম্পর্কও নেই।
দলের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে এবং দলের নাম ভাঙিয়ে ওই এলাকার মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে বিচার সালিশের নামে মামলা-মোকদ্দামার ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের জায়গা-জমি এবং সরকারি প্রকল্প নিজের মনের মতো ব্যবহার ছাড়াও তিনি হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
সম্প্রতি রাসেল নিজ দলের ক্ষমতা ব্যবহার করে জেলা পরিষদ থেকে বাজার চৌধুরীর দায়িত্বটা বাগিয়ে নেন। এর পর এলাকায় গিয়ে বলেন, দল তার প্রতি অগাধ আস্থা রাখে। তিনি বলে বেড়ান তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা এবং জেলা আ’লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার এর একান্ত কাছের মানুষ। তাই উর্ধতন নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই এলাকার মানুষ তাকে এখন আর তেমন একটা ঘটানোর সাহস পায় না।
কিন্তু তার বিষয়ে অভিযোগ দাখিলের পর যখন জেলা থেকে তদন্ত টিম সেখানে গিয়েছিল, সেদিন জেলা নেতাদের কাছ থেকে সাহস পেয়ে এলাকার মানুষ প্রাণ খুলে তাদের অভাব অভিযোগ তুলে ধরেছে। এসময় হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতির কারণে তিনি আর তেমন কোনো উচ্চবাচ্য করতে পারেননি। তার জানায় রাসেল চেয়ারম্যান একজন নারী লোভি নেতা এ পর্যন্ত তিনি আটটি বিয়ে করেছেন। তার সর্বশেষ বিয়ের শিকার ওই এলাকার হেরে যাওয়া এক নারী ইউপি সদস্যপ্রাথী।
নানা উপায়ে বানানো কালো টাকায় উপজেলা আ’লীগের কিছু নেতা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তিনি তার সন্ত্রাসী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বলে জানান তার ইউনিয়নের মেম্বার ছোবহান মেম্বার।
ওই ইউনিয়নের ৮ জন সদস্য প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে করা অভিযোগে উল্লেখ করেন, ভিজিডি, টি আর, কাবিটা, কাবিখা প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ ছাড়াও রাসেল চেয়ারম্যান ২০১৭-২০১৮ সালের অর্থ বছরের আরএমপিতে লোকবল অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলে জনপ্রতি ২০হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। যা এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্ঠি হয়েছে বলে অভিযোগে পত্রে জানানো হয়েছে। কবিখা, কাবিটা, টি.আর, এম.পি কর্তৃক বরাদ্ধ ইউপি সদস্যদের সাথে সম^ন্বয় না করে নামে-বেনামে প্রকল্প দায়ের করছে।
অভিযোগে বলা হয়, ইউপি সদস্যরা অফিসের চেকে সই করে কোন টাকা উত্তোলন করিনি। যদি অফিসের চেকে স্বাক্ষর থাকে তাহলে চেয়াম্যান রাসেল চৌধুরী স্বাক্ষর জাল করে এসব কাজ করেছে বলে অভিযোগে বলা হয়। চলতি বছরের ঈদুল ফিতরে সরকার কর্তৃক হতদরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এই ইউনিয়নে ০৬ মে.টন ভি.জি.এফ চাল দেয়া হয়েছে।
কিন্তু এসব চাল নামে মাত্র কিছু ওয়ার্ডের মানুষের মাঝে বিতরণ করে বাকী ০২ মে.টন চাল লংগদু উপজেলার মাইনী বাজারের ব্যবসায়ী নজির স্টোরে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাত করে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে চাল-গম বরাদ্ধ দেওয়ার কথা শুনলেও এ বিষয়ে তারা এখনো অবগত নয় বলে অভিযোগে বলা হয়।
এছাড়া রাসেল বিচার-শালিসের নামে মামলা- মোকদ্দমার ভয় দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করছে। যার অত্যাচারে ওই ইউনিরয়েনের অনেকে এখনো নিশ্ব হয়ে গেছে। কেউ কেউ প্রতিবাদ করতে চাইলে হুমকি, গুলি, পিস্তল দিয়ে মামলা দেওয়ার ভয় দেখায় বলে অভিযোগে জানানো হয়। (চলবে….