পাহাড়ি ভ্রাতৃঘাত সংঘাতে উত্তপ্ত খাগড়াছড়ি: ঢাকায় প্রতিবাদ

392

স্টাফরিপোর্ট- ১৩ জুলাই ২০১৮, দৈনিক রাঙামাটি:  একের পর এক পাহাড়ি ভ্রাতৃঘাত সংঘাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে পাহাড়ি জেলা সদর খাগড়াছড়ি। অননুমোদিত আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন সংস্কারপন্থী জেএসএস (এমএন লারমা), ইউপিডিএফ এবং সংস্কারপন্থী ইউপিডিএফ (বর্মা) এই তিন গ্রæপের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে চলমান সংঘাত-হানাহানির রেশ এখনো বিরাজমান রয়েছে। এ কারনে খাগড়াছড়ির আইন সৃংখোলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটছে। স্থানীয় ব্যবসা-বনিজ্যসহ পর্যটন ব্যবসায় হতাসা বিরাজ করছে। এ থেকে উত্তরণের পথ খুজছেন স্থানীয় জনতা।

অতর্কিত হামলায় খাগড়াছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান গুরুত্বর আহত: আটক ৪

খাগড়াছড়িতে দিনে-দুপুরে দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুত্বর আহত হয়েছে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা। গত ১৩ জুলাই, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে মোটর সাইকেল নিয়ে বাসায় যাওয়ার পথে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব সংলগ্ন ইসলামিয়া মাদ্রাসার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ চারজনকে আটক করেছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাদাত হোসেন টিটো জানান, খবর পেয়ে পুলিশ আহত উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনার সময় আহত হয় উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল চালক চিকু বড়ুয়া। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গুরুত্বর অবস্থান চেয়ারম্যানকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
খাগড়াছড়ি আবাসিক মেডিকেল অফিসার নয়নময় ত্রিপুরা জানান, উপজেলা চেয়ারম্যানের মাথায় ও শরীরের কয়েকস্থানে আঘাত করা হয়েছে। তার মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হামলার সময় আদালত সড়ক হয়ে শাপলা চত্ত্বরের দিকে যাওয়ার পথে ৩টি মোটরসাইকেলে করে এসে দুর্বৃত্তরা উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমার উপর হামলা করে। পূর্বেই হামলা আঁচ করতে পেরে চেয়ারম্যান হুন্ডা নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ন। তারা চেয়ারম্যান ও তার মোটরসাইকেল চালককে ইট দিয়ে বেধড়ক আঘাত করে থেতলে দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪ জনকে আটক করে।

ইউপিডিএফ কর্মীকে গুলি করে হত্যা: লাশ নিতে এসে ভাই অপহরণ


খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন এলাকায় ইউপিডিএফের এক কর্মী গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতের নাম জ্ঞানেন্দু চাকমা (৪০)। গত ১২ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কে জ্ঞানেন্দু মূল ‘ইউপিডিএফ’-এর হয়ে চাঁদা সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করতো। তাঁর বাড়ি মহালছড়ি উপজেলায় বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে যৌথ বাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করেছে।
ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় প্রচার শাখার প্রধান নিরন চাকমা জানান, সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনকালে সংস্কারপন্থী জেএসএস এবং বর্মা বাহিনীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা জ্ঞানেন্দু চাকমাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। মিঠুন চাকমার হত্যাকারীরাই তাকে একই ভাবে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে দাবী করে সংগঠনটি হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবী করেন।
জেএসএস-এর কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা হত্যাকান্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন। খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি সাহাদাত হোসেন টিটো জানান, নিহতের শরীরে গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। ঘটনাস্থল মাটিরাঙা হওয়ায় মরদেহ মাটিরাঙা থানার উদ্যোগে সদর হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
জ্ঞানেন্দু চাকমা মহালছড়ি উপজেলার কিয়াংঘাট ইউনিয়নের যাদুগানালা গ্রামের মৃত কালি মোহন চাকমার ছেলে। আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে।
এদিকে ১৩ জুলাই নিহত ইউপিডিএফ কর্মী জ্ঞানেন্দু চাকমা লাশ নিতে আসলে তার ছোট ভাই কালায়ন চাকমাকে (২২) দুর্বৃত্তরা অপহরণ করে নেয়। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে খাগড়াছড়ির আধুনিক সদর হাসপাতাল থেকে তাকে অপহরণ করে বেধড়ক মারধর করে ছেড়ে দেয়া হয়।
ইউপিডিএফের অংগ্য মারমা এ ঘটনার জন্য জেএসএস এমএন লারমা গ্রæপকে দায়ী করেছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানান হয় জ্ঞানেন্দুর লাশ মহালছড়িতে না নিতে তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিয়ে ছিল হত্যাকারীরা।
ঢাকায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ
প্রেস বিজ্ঞপ্তি: খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমার ওপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও সাভার প্রবাসী শ্রমজীবী ফ্রন্ট বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে।

গত কাল শুক্রবার (১৩ জুলাই ২০১৮) বিকাল সাড়ে ৫টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরার সভাপতিত্বে এবং সহসাধারণ সম্পাদক বরুণ চাকমার সঞ্চালনায়
বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরুপা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহসভাপতি বিপুল চাকমা ও সাভার প্রবাসী শ্রমজীবী ফ্রন্টের সভাপতি প্রমোদ জ্যোতি চাকমা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সংস্কারবাদী জেএসএস সন্ত্রাসীরা হত্যা, অপহরণসহ একের পর এক নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। তাদের তাÐবে এলাকার সাধারণ লোকজন থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিরা পর্যন্ত রেহায় পাচ্ছে না। গত কালও আলুটিলায় একজন ইউপিডিএফ সদস্যকে গুলি করে হত্যা করেছে। তাদের ধারাবাহিক সন্ত্রাসের অংশ হিসেবে আজকে চঞ্চুমনি চাকমার ওপর হামলা করা হলো। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন।

বক্তারা অভিযোগ করে আরো বলেন, সন্ত্রাসীদের সেনাপ্রশাসন মদদ দেয়, যা জনসাধারণের কাছে স্পষ্ট। আজকের হামলায়ও সেনাপ্রশাসনের মদদ রয়েছে, তা না হলে দিনদুপুরে প্রশাসনের নাকের ডগায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সন্নিকটে কিভাবে সন্ত্রাসীরা একজন জনপ্রতিনিধির ওপর বর্বরোচিত হামলা করার সাহস পায়?

সমাবেশে বক্তারা হামলাকারী সংস্কারবাদী জেএসএস সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ-মিছিল করা হয়। মিছিলটি প্রেস ক্লাব থেকে পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

বার্তা প্রেরক-   বরুণচাকমা  

সহসাধারণ সম্পাদক- গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটি

খাগড়াছড়িতে তিন সংগঠনের প্রতিবাদ বিক্ষোভ

প্রেস বিজ্ঞপ্তি: খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমার ওপর হামলা ও আলুটিলায় ইউপিডিএফ সদস্য জ্ঞানেন্দু চাকমাকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গনতান্ত্রিক যুব ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।

গত কাল শুক্রবার (১৩ জুলাই ২০১৮) বিকাল সাড়ে ৩টায় তিন সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্বনির্ভরের ইউপিডিএফ- কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে স্বনির্ভর বাজার পুলিশ বক্সের সামনে থেকে ঘুরে শহীদ অমর বিকাশ চাকমা সড়কে গিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ মাধ্যমে শেষ হয়। এতে বক্তব্য রাখেন, পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা, সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমা।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন সেনা-প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে সংস্কারবাদী জেএসএস সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে খাগড়াছড়ি শহরের প্রেসক্লাবের মতো জায়গায় প্রশাসনের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমার উপর হামলা চালিয়ে তাকে অপহরণ ও হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। এই সন্ত্রাসীরা গতকাল আলুটিলায় ইউপিডিএফ কর্মী জ্ঞানেন্দু চাকমাকে গুলি করে হত্যা করেছে এবং আজ সকালে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল থেকে জ্ঞানেন্দু চাকমার মরদেহ নিতে আসা তার ছোট ভাইকে পুলিশের সামনে থেকে তুলে নিয়ে মারধর করেছে।
বক্তারা অভিযোগ করে আরো বলেন, সংস্কারবাদী সন্ত্রাসীরা নিহত ইউপিডিএফ সদস্য জ্ঞানেন্দু চাকমার মরদেহ তার বাড়িতে না নেয়ার জন্য নানাভাবে পরিবারের লোকজনকে হুমকি দেয়ায় কারণে তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা খাগড়াছড়ি শহরের উত্তর খবংপুজ্জে শ্মশানে তার দাহক্রিয়া সম্পন্ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন মরদেহটি হস্তান্তর না করায় তা করতে পারেনি। প্রশাসনের এমন কর্মকাÐে তারা নিন্দা জানান।

বক্তারা বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে সংস্কার-মুখোশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে ইউপিডিএফ-এর ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে একের পর এক ইউপিডিএফ নেতা-কর্মী, সমর্থককে খুন, অপহরণ, হত্যা চেষ্টা করা হচ্ছে। খুন-গুম করে, নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে জনগণের কাক্সিক্ষত পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে কিছুতেই স্তব্দ করা যাবে না বলে তারা সরকারকে জানিয়ে দেন।

বক্তারা রাষ্টীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী সংস্কার-মুখোশদের অপকর্মের প্রতিবাদে এবং জাতিধ্বংসের রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য জনগণের প্রতি আহŸান জানান।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে জ্ঞানেন্দু চাকমাকে হত্যা, চঞ্চুমনি চাকমার উপর হামলাকারী সংস্কারবাদী সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

বার্তা প্রেরক- সমর চাকমা
দপ্তর সম্পাদক- পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।
সূত্র- অন্যমিডিয়া ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি