স্টাফরিপোর্ট- ১৪ জুলাই ২০১৮, দৈনিক রাঙামাটি (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি): প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য শুধু থোক বরাদ্দ নয়, তাদের উন্নয়নে প্রতিটি ক্ষেত্রে বরাদ্দ থাকতে হবে। এর জন্য আগামী বাজেটের পূর্বে প্রতিবন্ধী মানুষের সুরক্ষায় আলাদা বাজেটের প্রস্তাব করা যেতে পারে। এই বাজেট বাস্তবায়নের জন্য কর কাঠামো শক্তিশালী করা দরকার। প্রয়োজনে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে পৃথক শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। সর্বশেষ ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হলেও প্রতিবন্ধীদের জন্য বাজেট পর্যাপ্ত নয়। বাজেট বৃদ্ধির জন্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ন্যুনতম কর প্রদানে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এই করকে ‘দেশপ্রেম কর’ও বলা যেতে পারে। আজ ১৪ জুলাই, শনিবার রাজধানীর চলচিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফডিসি)-তে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেট পরবর্তী এক ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত¦ করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আতিউর রহমান আরো বলেন, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক ও নাগরিক মূল্যবোধ জাগ্রত এবং ভারসাম্যমূলক নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মৌলিক চাহিদা পূরণে কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি পালনে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষা-বৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার আহবান জানান তিনি। প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় করে সরকার ও সমাজের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের মূল¯্রােতে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, সরকার বয়স, পেশা, অঞ্চল ও পিছিয়ে পড়া মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য নানামূখী বাজেট প্রদান করে। সম-অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য সরকার শিশু বাজেট, জলবায়ু বাজেট, জেলা বাজেটসহ খাতওয়ারী বাজেট প্রণয়ন করছে। কিন্তু দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য প্রতিবারের মত এবারের অর্থবছরেও আলাদাভাবে কোন বাজেট প্রণয়ন করা হয়নি। সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য যে বাজেট দেয়া হয়েছে তাও পর্যাপ্ত নয়। সরকারের পরবর্তী বছর থেকে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে আলাদা বাজেট প্রণয়ন করা উচিৎ এবং সেই বাজেট মোট বাজেটের কমপক্ষে ৪% থেকে ৫% করতে হবে বলে জনাব কিরণ মনে করেন। তিনি বলেন, তবে আবার এটাও মনে রাখতে হবে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য শুধু বাজেটে বরাদ্দ দিয়েই নয়, এই বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা তার খোঁজখবর রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই জনগোষ্ঠীকে আমরা যদি মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে না পারি তাহলে আমাদের মোট জিডিপি’র ৮ থেকে ১০ শতাংশ ক্ষতি হবে। তাই প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য পৃথক তথ্য-তালিকা করে প্রয়োজনীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা জরুরী। জনাব কিরণ আরো বলেন, প্রতিবছর আমরা যেভাবে সর্বোচ্চ করদাতাকে সম্মানিত করি ঠিক সেভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান করবে তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা উচিৎ। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর রেয়াত সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধীবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কাজ করেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও প্রতিবন্ধীদেরকে কাছে টেনে নেন। তিনি আরো বলেন, আমরা দাবি রাখতে চাই বর্তমানে সারা দেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে যে আলোচনা চলছে তাতে যেন প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বিশেষ কোটা-সুবিধা রাখা হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রধান দ্বায়িত্ব হলো প্রতিবন্ধীসহ সকলের মানুষের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করা। যে জাতি প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর প্রতি যত সহানুভুতিশীল সে জাতি তত মানবিক।
প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে পরাজিত করে ইডেন মহিলা কলেজ বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করে। শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় চট্রগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের আরিফ হোসেন। প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, লেখক ও গবেষক জাহিদ রহমান, সাংবাদিক মাইনুল ইসলাম ও ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন। অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশনের মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান খানসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী বিতার্কিকদের মাঝে সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
বার্ত প্রেরক- ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন,
পরিচালক- ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।