একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন আবু’র সংসয়

679

press-confarence-bjc-pdr

ঢাকা ব্যুরো অফিস- ২ ডিসেম্বর ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি: বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেসে (বিজেসি) সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিঃ আবুল হোসেন আবু সংসয় প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বচন অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পাকশাসক আয়ূবী ধারায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। জেলা পরিষদ নির্বাচন- ২০১৬, পরোক্ষ গণতান্ত্রিক ধারায় অনুষ্ঠিত হওয়া এবং বর্তমান সরকারের নির্বাচনী কৌশল দেখে এমনটাই মনে হচ্ছে বলে আজ সন্ধ্যায় সংগঠনের তেজগাঁও কেন্দ্রীয় কর্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি দেশের সাধারণ নাগরিকদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছন।

তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় জেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ নির্বাচনে ভোটার হবেন- পৌরসভা ও উপজেলার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান, কমিশনার-মেম্বারগণ। জেলা পরিষদের নির্বাচন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে হবে, এটাই জনগণের প্রত্যাশা ছিল। কারণ বাংলার জনগণের অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলার নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের বলিষ্ঠ কণ্ঠ মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বাংলার কৃষককূলের মুক্তিসেনা শেরে বাঙলা এ.কে. ফজলুল হক সারা জীবন রাষ্ট্র ভাষা বাংলা করণের দাবীসহ প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র ও জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য পূর্ব পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠি ও পরবর্তীতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, আন্দোলন করেছিলেন। ঐ সময়ে পাকিস্তানে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারতেন। প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খান সেসময় পরোক্ষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চেয়ারম্যান, মেম্বারদের ভোটে ১০ বছর পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন।

এ ধরণের গণতন্ত্রকে পরোক্ষ গণতন্ত্র বলা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পরোক্ষ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আপোসহীন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলেন।

বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সিলেকশনের মাধ্যমে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছেন। গণতন্ত্রকে সর্বস্তরের শাসনব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ক্ষমতায় এলেও তা মন্দের ভাল। সরকার হয়ত নির্বাচনী ব্যয়ভার কমানোর জন্যই জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরোক্ষ গণতন্ত্রের (বেসিক ডেমোক্রেসি) পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন। কিন্তু জেলা পরিষদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় যেন আমাদের পূর্বসূরি ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খানের মত বর্তমান সংসদের মাধ্যমে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা চালু করে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, কমিশনার-মেম্বারদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার পদ্ধতি পুন: প্রবর্তন না করা হয়- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল বাংলার মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠাকরে অর্থনেতিক মুক্তি ফিরে আনা হবে। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হতে চলেছে, সাধারণ মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার আংশিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও গরীব, মেহনতি, দুঃস্থ, নির্যাতিত, নিপীড়িত শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আজও আসেনি। এ সময়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। তারা গণমানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং শতকরা ৮৫ ভাগ সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ স্বাধীনতাত্তোর জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক সমবাদ ও সামাজিক অর্থনীতি চালু করার মনমানসিকতা ক্ষমতাসীন দলসমূহের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের লক্ষ্য করা যায়নি। আমরা লক্ষ্য করেছি জাতীয় পার্টির শাসনামলে রাষ্ট্রের প্রশাসনযন্ত্রে দুর্নীতির বীজ বপন করা হয়, বিএনপি’র শাসনামলে বাংলাদেশ ৪ বার বিশ্বের সর্বশেষ্ঠ দুর্নীতিপরায়ণ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগের শাসনামলে শেয়ার কেলেংকারী, হলমার্ক, ডেসটিনি ও বেসিক ব্যাংক কেলেংকারী সাধারণ মানুষকে হতাশ করেছে।

তাই দলমত নির্বিশেষে আমাদের সকল ভেদাভেদ ভূলে গিয়ে আগামীতে দেশের গণমানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায়, অর্থনৈতিক মুক্তি ও জীবনমান উন্নয়নে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরীর মাধ্যমে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে পার্লামেন্টারি সরকার প্রতিষ্ঠা করে দেশে সুশাসন তথা শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্য হতে হবে।

তিনি অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, গণমানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায়, অর্থনৈতিক মুক্তি ও জীবনমান উন্নয়নে আগামী ২ দশকে বাংলাদেশকে “ভিলেজ সিটি” সমন্বিত শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে উন্নতি করণের ঈপ্সিত লক্ষ্যে বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি) সর্বসময় জনগণের পাশে আছে এবং আগামীতেও থাকবে।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো অফিস।