॥ মোঃ আশরাফ আলী ॥
করোনাকে মোটেই ভয় পাচ্ছে না লংগদুর মানুষ। অন্যান্য রোগের মতোই করোনাকে সাধারণভাবে দেখছে তারা। হাটে-বাজারে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। কদাচিৎ দুই-এক জন ছাড়া অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এলকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং হাটবাজারগুলোতে নিয়মিত জনসমাগম হলেও সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। মসজিদগুলোতে মাস্ক তো পরাই হয় না। মানা হয় না শারিরিক দুরত্বও। উপজেলার অন্তত ১০টি মসজিদ ঘুরে দেখা গেছে মুসুল্লীরা অন্যান্য সময়ের মতই একজন আরেক জনের সাথে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় করছে। এ নিয়ে সচেতনতামুলক প্রচার প্রচারণাও নেই বললেই চলে। মসজিদে নেই কোনো সাবান স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতিনিয়ত করোনার নমুনা সংগ্রহ, আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদান, ক্রিটিক্যাল রোগীদের আইসলেশন সেন্টারে ভর্তি রেখে চিকিৎসা প্রদান, নিয়মিত মিটিংসহ অন্যান্য কর্মকান্ড অব্যাহত রাখলেও জনসচেতনতা যেন দিন দিন কমছে।
জেলা প্রশাসন থেকে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ ঘোষণা করা হলেও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি অফিসগুলোতে মানুষ মাস্ক ছাড়াই হর হামেশা প্রবেশ করছে। এমনকি অনেক কর্মকর্তা কর্মচারিও মাস্ক ছাড়াই অফিসে কাজ করে যাচ্ছেন।
উপজেলার সকল হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, যানবাহনে স্বাস্থবিধি মানা হচ্ছে না। যেখানে সেখানে মানুষের ভিড়। আর এই ভিড়ের মধ্যে মাস্ক ছাড়াই চলাচল করছে মানুষজন। যদিও স্বাস্থবিধি মানা ও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে উপজেলা প্রশাসন বেশ কয়েকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। এরপরও মানুষ একেবারেই উদাসীন।
মাস্ক ব্যবহার না করে বাজারে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, জীবন-জীবিকার তাগিদে তাদের বাইরে বের হতে হচ্ছে। কিন্তু কেনা কাটার সময় অধিকাংশ স্থানে ভিড় থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে উঠা সম্ভব হচ্ছে না।
কেন মাস্ক পরেননি এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্কুল শিক্ষক জানালেন, ‘করোনার বিষয়ে আমরা সচেতন। কিন্তু ভুল করে মাস্ক বাড়িতে রেখে এসেছি’।
এলাকার উন্নয়ন কাজে রাঙামাটি শহর থেকে আসা একজন ঠিকাদারের সাথে দেখা হলো; তার মুখেও মাস্ক নেই। জিজ্ঞেস করতে তিনি প্রথমেই অনুরোধ জানালেন, তার নামটি যেন সংবাদে না আসে। অতঃপর তিনি বললেন, প্রথম দিকে মানুষ করোনাকে ভয় করেছে। তখন অধিকাংশ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হয়নি। কিন্তু কতদিন আর বাড়িতে বসে থাকবে। জীবন- জীবিকার তাগিদে মানুষকে ছুটতে হচ্ছে। তিনি মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্গে নিয়ে বাইরে বের হন বলে দাবি করে, সেগুলো পকেট থেকে বের করে দেখালেন।
ভাসাইন্যা আদমের খাগড়াছড়ি বাজারে পঞ্চাষোর্ধ ইউনুছ মিয়াকে মাস্ক না থাকা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আরে বাবা কেউ তো মাস্ক পরে না। আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন। তিনি আরো জানালেন কেউ তো বলেও না যে, মাস্ক পরেন।
একই এলাকার যুবক জহির কে জিজ্ঞেস করা হলে সে বললো, আগে কয়েক দিন পরেছি। এখন তো কেউ আর মাস্ক পরে না। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, কি জানি শুনি তো, কিন্তু কার মরণ কখন আসবে কেউ তো জানে না।
এ বিষয়ে লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মইনুল আবেদীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি দৈনিক রাঙামাটিকে জানান, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। করোনার দ্বিতীয় দফার ঢেউ সম্পর্কিত বিষয়ে জানাতে আমরা মিটিংও করেছি। স্বাস্থ্যবিধি মানতে মোবাইল কোর্ট চলমান রয়েছে। আমরা ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ বিষয়ে সবাইকে জানিয়েছি, যারা মাস্ক পরবে না, তাদের কোনও সেবা দেওয়া হবে না বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সভায় এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান বারবার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণা চালাতে।
রোববার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাঙামাটিতে একজন ছাড়াও ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে মারা গেছে আরো ৩৮জন। এই রোগে দেশে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৩৮৮ জনের। রোববার (২২ নভেম্বর) পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লক্ষ ৪৭ হাজার ৩৪১ জন।