কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধিতে তলিয়ে গেছে ৫ হাজার হেক্টর জমি ॥ ক্ষতি কোটি টাকা

343

॥ আলমগীর মানিক ॥

বিগত কিছুদিনের টানা বর্ষণে একদিকে যেমন পাহাড় ধসে সর্বশান্ত হয়েছে অনেক পরিবার তেমনি সঠিক মওসুম আসার আগেই কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষক পরিবারগুলো। বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদের জলেভাসা জমিতে চাষাবাদ করে যারা পরিবারের জন্য সারা বছরের খাদ্য সংগ্রহ করতো তাদের মাথায় হাত পড়েছে।

হ্রদে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধির ফলে হুমকি মুখে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রাতিষ্ঠানিক ভবনসহ অনেকগুলো স্থাপনা। আশঙ্কা করা হচ্ছে আবারও টানা বর্ষণ দেখাদিলে ভাঙ্গনের মুখে পড়ে বিলীন হয়ে যেতে পারে রাঙামাটি শহরের দর্শনীয় স্থান ও শহরের সংযোগ স্থাপনকারি ফিসারী বাধও।

এদিকে, গত ২৯ জুনের পর এখন পর্যন্ত হ্রদের পানি আর না কমানোয় রাঙামাটি জেলার নিন্মাঞ্চলীয় জমিগুলো পানির নীচে তলিয়ে গেছে। ফলে নষ্ট হয়ে গেছে অন্তত ৫ হাজার হেক্টর জলেভাসা জমির ধানসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি জাতীয় ফসল।

জেলার লংগদু উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কিশোর কুমার মজুমদার জানিয়েছেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধিতে সম্প্রতি তার এলাকাধীন সর্বমোট ২৩৭ হেক্টর জমিতে লাগানো ধান ও সবজি জাতীয় ফসল পানির নীচে তলিয়ে গেছে। একে প্রায় ১৩৮৫টি পরিবারের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিলে স্থানীয়রা জানায়, এবার কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধিতে এবার জলেভাসা জমিসহ নিন্মাঞ্চল ডুবে যাওয়ায় স্থানীয়দের চাষ করা জুমধান, আউস ধানসহ সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। যার কারণে এই  পরিবারগুলো সামনের দিনগুলোতে খাদ্য সংকটে পরবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অপরদিকে কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাঙামাটি জেলায় ধান ও সবজি জাতীয় ফসলের ক্ষতি বাবদ আনুমানিক ১১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধিত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটির কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কৃষ্ণ প্রসাদ মজুমদার।

তিনি জানিয়েছেন রাঙামাটিতে এবার অন্তত ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে করে ধানের বাবদ ৫ হাজার ২৭০ টি পরিবার এবং সবজি জাতীয় ফসল চাষকারি ২ হাজার ৪৯৫টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে আমরা তালিকা তৈরি করেছি।

এদিকে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পেলেও জল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ এখনো পর্যন্ত হ্রদের পানি ছাড়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, জুন মাসের ২৯ তারিখের পর হতে এখন পর্যন্ত কাপ্তাই বাধ দিয়ে পানি ছাড়া হচ্ছেনা। উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া আপাতত পানি ছাড়া হবে না বলে নিশ্চিত করেছেন সমীর  নামে সংশ্লিষ্ট একজন  কর্মকর্তা।

কাপ্তাই হ্রদ সংলগ্ন এলাকাগুলোতে পানির অস্বাভাবিক হার বৃদ্ধিতে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেন, কর্তৃপক্ষকে হ্রদের পানি কমাতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা কেন পানি কমায়নি সেটি বলতে পারছি না। বিষয়টি  খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

এ ব্যাপারে কাপ্তাই জল বিদ্যুত কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, হ্রদের পানি এখনো ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, পানি বর্তমানে ১০৪.৯ এমএসএল এ রয়েছে। বৃষ্টির পরিমান বর্তমানের অবস্থায় থেকে বেড়ে হ্রদে পানির পরিমাণ ১০৯ এমএসএল হওয়ার আগ পর্যন্ত বাধঁ দিয়ে পানি ছাড়া হবেনা বলেও জানান তিনি।