কাপ্তাই হ্রদে দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে

551

p-2
॥ এম.নাজিম উদ্দিন ॥

এশিয়া বিখ্যাত কৃত্রিম জলাশয় কাপ্তাই হ্রদে দূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে। দূষণের শিকার হ্রদটি ক্রমশ পরিত্যক্ত জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে। এ অবস্থায় হ্রদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বীগ্ন রাঙামাটিবাসী।

কাপ্তাই হ্রদের পানি কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত তা যাচাই করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। হ্রদের দূষণরোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট পর্ষায়ে বার বার দৃষ্টি আর্কষণ করে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও এখনো কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

১৯৬০ এর দশকে বিদ্যুতের প্রয়োজনে কর্ণফুলি নদীর উপর বাঁধ দিয়ে এই হ্রদ সৃষ্টি করা হলেও বর্তমানে রাঙামাটি জেলা এবং খাগড়াছড়ি জেলার কিছু অংশের মানুষের জীবন যাপনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে গেছে এই হ্রদ।

দেশে মিঠা পানির মাছের চাহিদা পুরণের পাশাপাশি এই হ্রদ এখন যোগাযোগেরও অন্যতম মাধ্যম। হ্রদ ঘিরে গড়ে উঠা পর্যটন শিল্পের ভসিষ্যৎ তো আছেই। কিন্তু নানা কারণে এই হ্রদের পানি দুষণের পাশাপাশি হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে পড়ছে দ্রুত গতিতে। কিন্তু তলদেশে জমা পলি নিষ্কাশন কা ড্রেজিংয়ের বিষয়ে বার বার কথা উঠলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই কোনো কর্তৃপক্ষের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর নিয়ে জানা গেছে, বহুবিধ উপায়ে কাপ্তাই হ্রদ দূষিত হচ্ছে। রাঙামাটি জেলার পাঁচটি উপজেলার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম কাপ্তাই হ্রদের নৌপথ। লঞ্চের বর্জ্য ও তেলের কারণে পানি দূষণের পাশাপাশি হ্রদের মৎস্য সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

এদিকে রাঙামাটি শহরের সকল বর্জের শেষ ঠিকানা কাপ্তাই হ্রদ; এমনকি টয়লেটের পাইপগুলো হ্রদের গর্ভে ছাড়া থাকে সর্বক্ষণ। এসব কারণে হ্রদের বদ্ধ পানিতে অতিমাত্রায় বর্জ্য নিক্ষেপের কারণে পানিতে অদ্রবণীয় উপাদানসমুহ নদীর তলায় আস্তরণের সৃষ্টি করছে। কাপ্তাই হ্রদের কুলবর্তী ১২০ এমএসএলের মধ্যে ঘরবাড়ি না থাকার কথা থাকলেও প্রয়োজনের তাগিদে এখন হ্রদের মধ্যেই জনবসতি গড়ে উঠেছে। একারণে এসব জনবসতির মলমূত্র দ্বারা হ্রদের পানি মারাতœকভাবে দূষিত হচ্ছে। পাশাপাশি হ্রদের তীরবতী এলাকায় ঝুলন্ত পায়খানাসমুহ হ্রদের পানিকে মারাতœকভাবে দূষিত করছে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন ব্যাপক হারে জুম চাষ হ্রদের নাব্যতা হ্রাস পাওয়া সবকিছু মিলিয়ে রাঙামাটিবাসির পানির প্রদান উৎস কাপ্তাই হ্রদ এখন হুমকির মুখে। কাপ্তাই হ্রদ ঘেঁষে গড়ে ওঠা বসতবাড়ির মূলমূত্র এবং ময়লা আর্বজনায় ইতিমধ্যে হ্রদের পানি মাত্রাতিরিক্ত দূষিত হয়ে পড়েছে।

রাঙামাটি শহরের স্যানিটেশন সুবিধা বাড়লেও হ্রদের মলমূত্র ও ময়লা আবর্জনা ফেলা পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। এখনো নৌযানের টয়লেট বিনা বাধায় ব্যবহৃত হচ্ছে। শহরের বড় বড় দালানকোটা এবং হোটেলের পয়ঃনিষ্কাশন পড়ছে সরাসরি হ্রদে। এভাবে হ্রদেও পানি দূষিত হতে থাকলে অচিরেই শহরে পানিবাহিত রোগ মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। নিরাপদ রাখতে হলে হ্রদ ঘেঁষে গড়ে উঠা হোটেল ও দালানের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার পরিবর্তন আনা জরুরি।