কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বৃদ্ধি

417

|| অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই ||

কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতের ফলে কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বেড়েছে। বর্তমানে পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে চারটি ইউনিট সচল রয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই একটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে।

জানা গেছে, ভরা মৌসুম হলেও এ অঞ্চলে তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় হ্রদে পানি সংকট লেগেই ছিল। এতে উৎপাদন ব্যহত হয়। গত ৭-৮ দিন ধরে টানা প্রতিদিনই বৃষ্টিপাত হওয়ায় হ্রদে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কেন্দ্রে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বেড়েছে। কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদের পানির ধারণ ক্ষমতা ১০৯ ফিট এমএসএল (মীন সী লেভেল)।

মঙ্গলবার সকাল নয়টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানি থাকার কথা ৮৭ দশমিক ৬৪ ফিট এমএসএল। কিন্তু পানি আছে ৮৪ দশমিক ২৪ ফিট এমএসএল। বর্তমানে কেন্দ্রের চারটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে কাপ্তাই হ্রদ থেকে কেন্দ্রের পাওয়ার হাউজ দিয়ে প্রতিদিন ২২-২৫ হাজার ফিট কিউসেফ পার সেকেন্ড পানি কর্ণফুলী নদীতে বের হচ্ছে। কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে পানির লেভেলের উপরেই নির্ভর করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা। পাঁচটি ইউনিট সম্পন্ন পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ২৩০ মেগাওয়াট। গত সপ্তাহেও কেন্দ্রের দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো ১০০ মেগাওয়াটের নীচে। গত কয়েকদিনে চারটি ইউনিটে উৎপাদন হচ্ছে ১২২-১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে ২নং ইউনিটটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ রয়েছে। অবশিষ্ট ৪টি ইউনিট সচল আছে। এর মধ্যে ১নং ইউনিটে দৈনিক ২৯-৩৫ মেগাওয়াট, ৩নং ইউনিটে ৩০-৩৫ মেগাওয়াট, ৪নং ইউনিটে ৩০ মেগাওয়াট এবং ৫নং ইউনিটে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ১২২- ১২৫ মেগাওয়াট।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, বর্তমানে পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২নং ইউনিটটি ছাড়া অন্য চারটি ইউনিট সচল আছে। প্রতিদিন ১২২-১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে চার ইউনিটে। তবে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৩ এমএসএল কম আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারাবাহিকতা থাকলে হ্রদের পানির পরিমাণও কমতে থাকবে। তিনি আরো বলেন, হ্রদে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৬২ সালে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনার পর জাতীয় গ্রিডে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা ছিল বিদ্যুৎ কেন্দ্রেটির। পরবর্তী সময়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২৩০ মেগাওয়াট উৎপাদনে মানোন্নয়ন করা হয়। বাংলাদেশের বৃহত্তম জলসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প ‘কর্ণফুলী বহুমুখী প্রকল্প’-এর অংশ হিসেবে এ পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপিত হয়েছে। এ বহুমুখী প্রকল্প দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ছাড়াও কাপ্তাই বাঁধের ফলে নিম্নাঞ্চলের সেচ ও বন্যা ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।