রাঙামাটি জেলার তৃণমুল জনগণের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলার সময় তিন পার্বত্য জেলার ভূমি অধিগ্রহণ মূল্য সমতলের ন্যায় ১৫০% হারে বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়াও রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক সঙ্কট নিরসনে শিক্ষামন্ত্রীকে তাৎক্ষণিক নির্দেশ প্রদানসহ এই কলেজের ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য একটি পরিবহন বাস প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শনিবার চট্টগ্রাম বিভাগের ৫টি জেলার জনগণের সাথে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অনুষ্ঠানটি বড় পর্দার মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয় চট্টগ্রাম বিভাগের ৭,৫০৯টি স্থানে। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর নিজের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর যখন তিনি জনগণের সাথে সরাসরি আলোচনায় অংশ নেন এ সময় চট্টগ্রাম বিভাগের ৫ জেলার মধ্যে প্রথমেই বেচে নেওয়া হয় রাঙামাটিকে।
প্রধানমন্ত্রী রাঙামাটির একজন হেডম্যান, এক কলেজ ছাত্রী ও একজন কার্পেন্টার মিস্ত্রিসহ রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার এর সাথে সরাসরি কথা বলেন।
রাঙামাটির পক্ষে সরাসরি এই ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান।
এসময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, জাতীয় সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তরুন কান্তি ঘোষ, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, রাঙামাটির পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মূছা মাতব্বরসহ রাঙামাটি জেলার উদ্বর্তন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাগণ, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গসহ বিপুল সংখ্যক সাধারণ জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।
সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ উগ্র সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধসহ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গণভবন থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় এই অনুষ্ঠান। এ সময় মুল অর্ডিয়েন্স পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রাঙ্গনে উপস্থিত থাকলেও জেলা শহরের আরো ৫টি স্থানে বড় পর্দায় প্রধানমন্ত্রীর এই আরোচনা সম্প্রচার করা হয়। সেখানেও বিপুল সংখ্যক দর্শকের সমাগম ঘটে। এ ছাড়া জেলার দশ উপজেলা সদর এবং ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রেও এই অনুষ্ঠান সম্প্রচারের জন্য আনুষ্ঠানিক আয়োজন করা হয়।
বেলা এগারোটার সময় শুরু হওয়া এই ভিডিও কনফারেন্সে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর বেলা ১২ টা ৩৬ মিনিটে প্রথমেই রাঙামাটি জেলার সাথে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান প্রধানমন্ত্রীকে জেলার আপামর জনসাধারণের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ি সাধারণের কাতার থেকে প্রথমেই বক্তব্য রাখেন হেডম্যান সমিতির নেতা কেরল চাকমা। তার কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে পার্বত্য ভূমি কমিশনের সাথে আলাপ করে এখন থেকে সমতলের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামেও ভূমি অধিগ্রহণে ১৫০% ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি রাঙামাটির একজন কার্পেন্টার মিস্ত্রি আবুল হাসেমের সাথে কথা বলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী টিনুচিং মারমার সাথে কথা বলে তার ইচ্ছানুসারে অবিলম্বে রাঙামাটির মহিলা কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষট সংকট সম্পূর্নরূপে দূরীকরণে শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দেন।
এছাড়াও টিনুচিংয়ের আহবানে সাড়াদিয়ে কলেজের জন্য একটি বাস দেওয়ার ঘোষণাও দেন প্রধানমন্ত্রী। উপস্থিত সকলেই প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় করতালির মাধ্যমে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগে সভাপতি দীপংকার তালুকদারের সাথে কথা বলেন।
এসময় দীপংকর তালুকদার পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বশেষ পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বলেন, এখানে জঙ্গীবাদের কোনো স্থান নেই। পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্রের কারনে এখানকার মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে।
এছাড়াও বর্তমান সময়ে ধ্বংসে ধারপ্রান্তে থাকা কর্ণফূলী পেপার মিলসকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে উক্ত মিলের কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মচারির পরিবারকে রক্ষাসহ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিংয়ে ব্যাপারে আশু পদক্ষেপের আহবান জানান দীপংকর তালুকদার।