প্রধানমন্ত্রী সকাশে এক নেতা;তিন ভাগ্যবান ও অজস্র প্রত্যাশা

651

pic-19-11-4
॥ মঈন উদ্দীন বাপ্পী ॥

‘আমি সত্যিই ভাগ্যবান, দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সরাসরি কথা বলেছি। যা আমার জীবনে দাগ কেটে থাকবে সারাজীবন। সত্যিই অসাধারন মূহুর্ত। আমার দুই দাবিতে দুইটি প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। কলেজে শিক্ষক সংকট দূরীকরণ এবং ছাত্রীদের জন্য বাস। আর দু’টি প্রত্যাশা পূরণ সত্যিই অভাবনীয়। স্বয়ং প্রধামন্ত্রী এ প্রত্যাশা দু’টি পূরণ করেছেন। জীবনে ভুলার মতো নয়’।

এভাবে উচ্ছসিত অনুভূতি ব্যক্ত করছেন রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী টিনু চিং মারমা (১৭)। যার দাবি দু’টি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী’।

pic-19-11-16-2

‘দিন চলে যায় হাতুরী-পেরেকের সাথে। জীবন ঘড়ি চলে জীবনের নিয়মে। প্রতিদিন কাঠের সাথে হাতুড়ির মিতালী এ কাজ করে জীবনের সময়টুকু কাটিয়েছি’। এ কথাগুলো বলছেন আবুল হাসেম (৪৩), পেশায় একজন কাঠ মিস্ত্রি।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান মনে করছেন। মিস্ত্রি হাসেম জানান, জাতির পিতার কন্যার সাথে আমার মতো এক কাঠ মিস্ত্রি কনফারেন্সে কথা বলা মানে এ এক অন্যরকম অনুভূতি। কি দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কাঠের ব্যবসাটাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছি প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

pic-19-11-16-1

‘সমতলের জেলার ন্যায় পার্বত্যঞ্চলে ভূমি অধিগ্রহণের সময় ক্ষতিপূরণ ১৫০ ভাগ দাবি জানান। আর কোন রাখঢাক না করে দেশের সফলতম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক নিমিষে বলে দিলেন প্রক্রিয়া অব্যহত করা হবে। আমি অবাক! আমার এমন দাবিতে এক বাক্যে আশাপূরণ। সত্যিই উনিই হলো এমন এক প্রধানমন্ত্রী যিনি কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী।’ এমন অনুভূতি ব্যক্ত করছেন হেডম্যান সমিতির নেতা কেরল চাকমা।

তিনি বলেন, আমি আগেও প্রধানমন্ত্রীর সাথে স্বাক্ষাৎ করেছি কিন্তু দেশের একজন প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলা সত্যিই অনুভূতিটা অন্যরকম। যখন আশার প্রাপ্তিটা পূরণ হয় তাহলে আমার মতো কজনা আছে।

pic-19-11-16-3

দাবি,স্বপ্ন এবং জীবনের প্রত্যাশা- সবসময় এ সবুজ পাহাড় রবে অবৈধ অস্ত্র মুক্ত। আর হাতে যদি মাইক পাওয়া যায় তাহলে জীবনের শেষ সায়াহ্নে একটা দাবি পাহাড় হোক অবৈধ অস্ত্র মুক্ত। এ দাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী, পাহাড়ের সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা দীপংকর তালুকদার।

আপামর জনসাধারণের সমানে প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি জানিয়ে বলেন, কর্ণফুলী পেপার মিলের হারানো ঐতিহ্য ফিরে এনে সরকারের একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। এ বর্ষীয়ান নেতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরও দাবি জানিয়ে বলেন, রাঙায় রাঙিত রাঙামাটি অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি এশিয়ার বৃহত্তর কাপ্তাই হ্রদটি ড্রেজিং করা।

প্রধানমন্ত্রী কনফারেন্স আর সহস্রাধিক মানুষের মিলন মেলা। সকলের আশা প্রধানমন্ত্রীর সাথে একটু কথা বলা আর তার তাদের মনে দীর্ঘদিন ধরে পুষে রাখা দাবি দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা। কিন্তু আশার কথা নিরাশায় রয়ে গেছে। পেটের কথা পেটে থেকেই গেলো। না বলা কথা নিয়ে বাড়িতে ফিরতো হলো তাদের। কিন্তু প্রত্যাশা তাদের একটুও কমেনি। তাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীকে এক নজরে দেখেছি,তার কথা শুনছি, আমাদের অনেক প্রত্যাশা পূরণও হয়েছে এটাতেই খুশি।

শরীয়তপুর থেকে নৌকা যোগে আসার একমাত্র কারণ হলো বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে নিজেদের দবির কথা জানানো। বঙ্গবন্ধু কন্যার কনফারেন্স আসা হলেও নিজের দাবি জানাতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। আর এ কথাগুলো বলছেন রহমত মিয়া।

তিনি জানান, সবাই তো আর দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার সুভাগ্য হয় না; আমারও হয়নি। কি দবি নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমাদের অঞ্চল হবে শন্তিপূর্ণ ও দারিদ্রমুক্ত।

ইসলামপুর থেকে আসা জেসমিন আক্তার জানান, পার্বত্যঞ্চলের নারীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে বিশেষ করে শিক্ষা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক ভাবে চরম ভাবে পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে বাঙালী সমাজের নারীরা অর্থনৈতিক ভাবে এখনো মুক্ত হতে পারিনি।

বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সংগঠন বিভিন্ন সময় নারীর উন্নয়নে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রদক্ষেপ গ্রহণ করলেও আমরা বাঙালী নারীরা এ উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি বছরের পর বছর ধরে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো নারীর উন্নয়নের নামে একটি গোষ্ঠির উন্নয়নে মহা ব্যস্ত সময় পার করছে।

press-pic-19-11-16-4

উন্নয়নের নামে সরকারের কাছ থেকে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও উন্নয়নের ছিটা-ফোটাও আমরা পাই না। আমাদের পথচলা আর হয়ে উঠে না। দেশের এত উন্নয়নেও আমরা এখনো পিছিয়ে রয়েছি। তাই এসব উন্নয়নকামী প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়নের নামে একটি গোষ্ঠির উন্নয়নে যে এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে তার মুখোশ খুলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর এ কনফারেন্স সভায় এসেছি আমাদের এসব অভিযোগ উত্থাপন করার জন্য।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার সৌভাগ্য হয়নি আমার। তাই নিজেদের দাবি হয়তো বা আর পূরণ হবে না। খালি হাতে ফেরত যাচ্ছি আপন বাড়িতে।

রহমত মিয়া কিংবা জেসমিনের মতো সহস্রাধিক মানুষ এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কনফারেন্স; তাদের দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানাবে বলে। কিন্তু এসব মানুষগুলো তাদের অজস্র আশাগুলো না বলার দেশে পাঠিয়ে দিয়ে ফিরে গেছে আপন নীড়ে।