জাতীয় সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার বলেছেন, পাহাড়ে যে কোনো কিছু করার সময় মাথায় রাখতে হবে। এই এলাকাটি দেশের মধ্যে একটি বিশেষ অঞ্চল এবং এখানকার জন্য স্বতন্ত্র আইন রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে দেশে নানা ধরণের জটিলতা-কুটিলতার দুর্বিপাকে পড়ে আস্থার পরিবেশ বিঘিœত হয়।
তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে কাউকে অবজ্ঞা করে নয় বরং সমন্বিত উদ্যোগ এবং আস্থার ভিত্তিতে কাজ করতে পারলে আমাদের দেশ নিশ্চয়ই এগিয়ে যাবে।
রাঙামাটিতে বৃক্ষ ও বন জরিপ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি তালুকদার এই বক্তব্য রাখেন। দেশব্যপী বৃক্ষ ও বন জরিপ ২০১৬ কার্যক্রম শুরুর প্রক্কালে রাঙামাটিতে এই মত বিনময় সভার আয়োজন করা হয়।
এমপি উষাতন তালুকদার তার বক্তব্যে বলেন, এখানে ভূমি অধিকার ও ভূমি জরিপ নিয়ে বিতর্ক আছে। তাই সাধারণ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মাঝে যাতে আস্থার সঙ্কট তৈরি হতে না পারে সে দিকে খেয়াল রেখে কাজ করতে পারলে, এই কাজে কোনো সমস্যা বা সঙ্কটের সৃষ্টি হবে না।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ইটভাটাগুলোতে পাহাড়ের গাছ পোড়ানো হয়, নানাভাবে প্রতিনিয়ত প্রচুর পরিমাণে কার্বন নিঃস্বরণ হয়। এই দায়িত্ব কে নেবে তা আমাদের ভেবে দেখা দরকার।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বনজ সম্পদের সুরক্ষা, সর্বোত্তম ব্যবহার সুনিশ্চিত, বনের আচ্ছাদন বৃদ্ধি এবং বন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে দেশব্যাপী সরকারি বন ও বন বহির্ভূত বৃক্ষ (গ্রামীণ বন) জরিপ চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে এই মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। চলতি বছর নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ জরিপ কার্যক্রম ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত।
ঊষাতন তালুকদার বলেন, বিরাজমান পরিস্থিতির বিভিন্ন কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে জরিপ বিষয়টি অনেকটা স্পর্শকাতর। এ অবস্থায় বন জরিপ নিয়ে নানা জনের মধ্যে নানা সন্দেহ দেখা দিতে পারে। অনেকে এটাকে ভূমিসংক্রান্ত বিষয় মনে করতে পারে। তাই সবার মাঝে বিষয়টি স্পষ্ট করতে প্রয়োজনীয় ও করণীয় বিষয়ে লক্ষ্য রাখার আহবান জানান তিনি।
সভায় বক্তারা জরিপ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রতিনিধিসহ সার্কেল চিফ, মৌজা হেডম্যান, কারবারি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্পৃক্তর রাখার আহবান জানান।
বৃহস্পতিবার রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের হল রুমে শুরু হওয়া দিনব্যাপী ‘বৃক্ষ ও বন জরিপ-২০১৬, বাংলাদেশ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বন বিভাগের রাঙামাটি সার্কেলের বনসংরক্ষক মো. শামসুল আজম।
সভায় রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বন বিভাগসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইনশৃংখলা সংস্থার প্রতিনিধি, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ মিডিয়াকর্মীরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়- প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও, ইউএসএআইডি এবং সিলভাকার্বন এর সহায়তায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এ জরিপ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। বন ও গ্রামীণ বন এলাকার বনজ সম্পদ, বনের পরিমাণ, বনের আচ্ছাদন, গাছের প্রজাতি, কাঠ ও জ্বালানি কাঠের পরিমাণ এবং বন হতে পাওয়া সুবিধাদি নিরূপণের উদ্দেশ্যে দেশব্যাপী এই বৃক্ষ ও বন জরিপ পরিচালিত হচ্ছে।