॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্রি বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেছেন, আমাদেরকেই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। জুম্ম জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রগতিশীল জুম্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আগামী দিনগুলোতে প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু সব কথার শেষ কথা হলো, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন। চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৃহত্তর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বুধবার রাঙামাটি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সুবর্ণজয়ন্তী ও ৫১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হোন” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাঙামাটি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটি-২০২৩ এর উদ্যোগে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য সৌখিন চাকমা।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার। এতে আরও বক্তব্য রাখেন জনসংহতি সমিতির রাঙামাটি জেলা কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অরুন ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মনি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি অমিতাভ তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুমন মারমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং দলীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন জনসংহতি সমিতির সদস্য মাধবীলতা চাকমা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর বেলুন উড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠান শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।
অনুষ্ঠানে সন্তু লারমা আরো বলেন, সরকার চায় জনসংহতি সমিতির অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যাক। কারণ পাহাড়ে একমাত্র জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বই জুম্ম জনগণের জন্য স্বাধিকার-অধিকার রক্ষায় সংগ্রাম করতে পারে, সংগ্রাম করার সাহস রাখে। শুধু সেটা নয়, ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর জুম্ম জনগণ তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের মধ্য দিয়ে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল, সেই চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে কথা না বলার জন্য, সেই চুক্তি মানুষ যাতে ভুলতে পারে, ভুলে যেতে বাধ্য হয় সেই প্রক্রিয়াই এখন পাহাড়ে চলছে। সুতরাং এই বাস্তবতা আমাদের বুঝে নিতে হবে, জানতে হবে। এই বাস্তবতা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। এবং শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের আন্দোলন জোরদার করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচকবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে যে ৫১ বছরে পদার্পন করেছে তার স্মৃতিচারন করেন এবং এই ৫১ বছরে পার্টির সংগ্রামী জীবনে সফলতা ও ব্যর্থতা তুলে ধরার চেষ্টা করেন। এবং অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যে কোন কর্মসূচীতে সক্রিয় অংগ্রহণে সংকল্প করেন।
সবশেষে সৌখিন চাকমার সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আলোচনা সভা সমাপ্তি হয়। আলোচনা সভা শেষে গিরিসুর শিল্পী গোষ্ঠীর উদ্যোগে মনোজ্ঞ এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।