পার্বত্য তিন জেলায় গ্রাম আদালত সম্প্রসারণে ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারের নতুন প্রকল্প

614

আনোয়ার আল হক

পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথাগত বিচারিক প্রক্রিয়াকে সুসংগঠিত করাসহ নথি সংরক্ষণ এবং গ্রামীণ মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিন পার্বত্য জেলায় নতুন একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। ‘গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ ২য় পর্যায় প্রকল্প’ এর অধীনে পার্বত্যাঞ্চলে গ্রাম আদালত সম্প্রসারণের সম্ভাবনা যাচাইয়ের লক্ষ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের অধীনে আগামী চার বছরে ৩৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউএনডিপি’র আর্থিক সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

গ্রাম আদালতের কার্যাবলী সক্রিয় করার ক্ষেত্রে সাধারণ আইনের সাথে পার্বত্যাঞ্চলের সনাতনী ও প্রথাগত আইনের কোনো বিরূপ প্রেক্ষাপট সৃষ্টির কোনো সম্ভাবনার কথা নাকচ করে দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মালেক বলেছেন, আমরা পাহাড়ের মানুষের ঐতিহ্য ও সংষ্কৃতিকে পাশ কাটিয়ে কোনো কিছু করার চেষ্টাও করবো না। বরং এই প্রকল্পের আওতায় হেডম্যান কার্বারী অফিসগুলোসহ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের বিচার প্রক্রিয়াকে সুসংহত করার লক্ষ্যে কাজ করবো। প্রকল্পের অধীনে হেডম্যান কার্বারীবৃন্দের সংগঠনসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ আসবাবপত্র সরবরাহ ও আইসিটি সুবিধা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি তিন জেলায় গ্রাম আদালত সম্প্রসারণের সম্ভাবনা যাচাইয়ের লক্ষ্যে গবেণষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

‘বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সম্প্রসারণ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

মতবিনিময় সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, প্রকৃত পক্ষে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মাধ্যমে নতুন কোনো জটিলতা সৃষ্টির অবকাশ নেই। তিনি বলেন, ইউনিয়নে গ্রাম আদালত সম্প্রসারণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পাশাপাশি পার্বত্য এলাকায় বিদ্যমান প্রথাগত বিচার ব্যবস্থাকে আরও সুসংগঠিত করার কাজ করবে। এর মাধ্যমে গবেষণার কাজও চলবে এবং গবেষণালব্ধ মতামতের আলোকে প্রয়োজনে আইনে সংশোধনীও আনা যেতে পারে।

স্থানীয় সরকার সচিব বলেন, একজন মানুষ সংক্ষুব্ধ হলে তিনি বিচার প্রত্যাশী হবেন কিনা সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। বিচার চাইতে গিয়ে তিনি কোন আদালতে বিচার প্রার্থনা করবেন সেটাও তার নিজস্ব স্বাধীনতা। কাউকে বিচার চাওয়ার জন্য বাধ্য করা যায় না। তবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলে বা বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে কখনও কখনও উচ্চ আদালত সুয়েমুটো বিচার করে থাকেন সেটা ভিন্ন বিষয়। তবে সাধারণ মানুষের বিচার চাওয়ার ক্ষেত্রে তাকে স্বাধীনতা দিতে হবে এবং তিনি বিচার চাইতে গিয়ে যাতে ন্যায় বিচার পান সে লক্ষ্যে ২০১৩ সাল থেকে সরকার গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সম্মেলন কক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এই মত বিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ইকরামুল হক। বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ কামাল উদ্দীন তালুকদার, রাঙামাটি পার্বত্য জেরা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেরা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরি চৌধুরী, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, ইউএনডিপি কর্মকর্তা মিজ মাহমুদা আফরোজ ও আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য গৌতম কুমার চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তরুণ কান্তি ঘোষ, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসনসমূহের স্থানীয সরকার বিষয়ক কর্মকর্তাবৃন্দ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানবৃন্দ, তিন জেলার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, হেডম্যান, কার্বারী, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ এনজিও প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতনিধিগণ।

সভায় জানানো হয়, ১৯৭৬ সালের গ্রাম আদলত অধ্যদেশটি ২০০৬ সালে আইনে রূপলাভ করে। পরে প্রাথমিক অভিজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার আলো ২০১৩ সালে এ আইন অধিকতর সংশোধন করা হয়। সংশোধনীতে গ্রাম আদালতের আর্থিক এখতিয়ার বৃদ্ধিকরাসহ প্যানেলে নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামুলক করা হয়। এতে গ্রামীণ মানুষের ছোটখাট বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছে। ইতোমধ্যে দেশের ৩৫১টি ইউনিয়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইউএনডিপির সহায়তায় এই কার্যক্রম জোরদারের লক্ষ্যে কাজ করে সফল হয়েছে।

পার্বত্য তিন জেলায় প্রকল্প সম্প্রসারণে জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সহায়তা হিসেবে ৩৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ২০১৯ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।