॥ মঈন উদ্দীন বাপ্পী ॥
সমাবেশ লোকে লোকারণ্য। হঠাৎ নিরব হয়ে গেল সমাবেশ এক অগ্নি যুবকের আগমনে। তার মনে যেন বৈশাখির ঝড় বইছে। পিতা হারা শোকে একদিকে বড্ড ক্লান্ত অন্যদিকে পিতা হত্যার বদলা নিতে প্রতিশোধস্পৃহা। কিন্তু তার হাত আইনের শিকলে বাঁধা। অবৈধ অস্ত্র নেই হাতে শুত্রুর বুকে আঘাত করে পিতৃ হত্যার প্রতিশোধ নিবে বলে। আইনের সাহায্য নিয়েও পিতা হত্যার বিচার পাওয়া হলো না যুবকের। উল্টো তার মা-বোনকে গুম করার বিনিময়ে পণ হিসেবে সন্ত্রাসীদের ২১ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। তিনি নিজেও গুম হয়েছেন। কিন্তু ভাগ্যক্রমে মুক্তিপণ দিয়ে বেঁেচ গেছেন।
ক্ষোভের সাথে বললেন, আজ তার পিতার খুনীরা দিব্যি বুক চিতিয়ে তার সমানেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন তার পিতার খুনিরাই নাকি সে অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি। প্রশাসন সব জেনেও এসব খুনীদের ধরতে অপরাগতা প্রকাশ করে। তার বুকে আগুন জ্বলে বারবার, পিতা হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার। আইনের নিয়মে নিজে বন্দি থাকলেও তার পিতার খুনিরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে জনপ্রতিনিধি সেজে বসে আছে। তার বাবার খুনীদের ধরতে প্রশাসন ১১বছর পার করে দিয়েছে। অথচ প্রশাসন জানে তার বাবার খুনি কারা।
রোববার দুপুরে রাঙামাটি জিমনেসিয়াম চত্তরে অনুষ্ঠিত নির্যাতিত নিপীড়িত পার্বত্যবাসীর আয়োজনে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি এবং অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে এক মহাসমাবেশে এসব কথা বলেন,লংগদু উপজেলার বাসিন্দা সরকারি চাকরীজিবী মৃত কিনা মোহন চাকমার ছেলে রূপ কুমার চাকমা। তার অগ্নিময়ী জ্বালাতন বক্তব্য শুনে সমাবশে উপস্থিত হাজার হাজার জনতা নির্বাক হয়ে পরে। এসব জনতা সমাবেশে বারবার সঞ্চালককে অনুরোধ করছে তার পুরো কথা শুনার সময় বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।
সমাবেশে রূপ কুমার চাকমা বলেন, দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে এখন সকল যুদ্ধপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে। দেশের প্রতিটি স্থানে জঙ্গী, সন্ত্রাস দমনে সরকার অভিযান পরিচালনা করছে। অথচ সরকার পার্বত্যঞ্চলে অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে কেন অভিযান পরিচালনা করছে না এমন দাবি জানান দেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনার কাছে। তিনি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, পার্বত্যঞ্চল এদেশের অংশ। ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এদেশে স্বাধীন হয়েছে। এ পার্বত্যঞ্চল বার্মার কিংবা ভারতের নয়। আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমাদের ভোটে আপনি সরকার প্রদান হয়েছেন। আমরা স্বাধীন দেশের ভোটার। ৭২ এর সংবিধানুযায়ী এ অঞ্চল কোন আলাদা রাষ্ট্র নয়। যুদ্ধপরাধী রাজাকার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর বিচার হলেও পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ-নিরীহ পাহাড়ি-বাঙালী খুনীদের বিচার কেন করা হচ্ছে না এর রহস্য কি? সরকারের কাছে তিনি দাবি জানান এ ব্যাপারে। রূপ কুমার চাকমা বলেন, আমরা পাহাড়ে শান্তি চায়। পাহাড়ি-বাঙালী এক সাথে মিলে মিশে সকল বৈষম্য দূর করে এ অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে চাই। আর কোন লাশ চাই না। আমার মতো আর কেউ পিতৃহারা যেন কেউ না হয়। তিনি এসময় সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অনতিবিলম্বে এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হোক।