আনোয়ার আল হক- ৪ জুলাই ২০১৭, দৈনিক রাঙামাটি: রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক যোগাযোগ চালু হতে আরো কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানিয়েছে রাঙামাটি সড়ক বিভাগ। আর কোনো ক্ষতি না হলে এক সপ্তাহের মধেই খাগড়াছড়ি সড়ক যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন। তিনি জানান, পাহাড় ধসে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া এই সড়কের খামার পাড়া ও মনতোলা কিজিং এলাকায় বর্তমানে মাটির জঞ্জাল সরিয়ে নেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। এখন ভরাট করে রাস্তা বের করার কাজ করছে সড়ক বিভাগের কর্মীরা। তবে রোববারের বৃষ্টিপাতে আবার সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এদিকে অন্য সড়কগুলো ইতোমধ্যে কমবেশী চালু হলেও এই সড়কটি চালু না হওয়ায় বর্তমানে রাঙামাটির সাথে খাগড়াছড়ির আঞ্চলিক সড়ক তথা সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকার মানুষ। বিশেষ করে এই সড়কের দুইপাশে অবস্থিত জনবসতিগুলোর জুমের ফসল, কলা, তরিতরকারি বাজারজাত করতে হিমসিম খাচ্ছে স্থানীয় জুমিয়া এবং কৃষক পরিবারগুলো। বাঁশ এবং গাছ পরিবহন তো এমনিতেই বন্ধ। সব মিলিয়ে আয় রোজগারের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ায় ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছে স্থানীয় পাহাড়িরা। কৃষি ইনস্টিটিউট এলাকার কমল চাকমা দৈনিক রাঙামাটিকে জানান, আর কিছুদিন এভাবে বেকার থাকলে এলাকায় অভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি জানান, কলা পেকে যাচ্ছে কিন্তু আমরা বাজারে নিতে পারছি না। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে সবজি এবং কলা বাজারে নিলেও যাতায়াত খরচ বেশী পড়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে ঝুঁকি নিয়ে খাগড়াছড়ি থেকে কেউ কেউ রাঙামাটি আসার চেষ্টা করলেও প্রায় দুই কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে পার হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুতুকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ক্যানন চাকমা।
এ বিষয়ে সওজ নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন জানান, রোববার রাতের বৃষ্টিতে আরএমএমকে (খাগড়াছড়ি) সড়কের ভরাট করা স্থান দুটি আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সড়কের ৬ষ্ঠ এবং ৭ম কিঃমিঃতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া সড়কের অংশে গত কয়েকদিন মাটি ভরাট করা হলেও রোববার রাতের বৃষ্টিপাতে আবার বেশ কিছু মাটি সরে যায়। এসব মাটি সরে যাওয়া পর পাহাড় থেকে নেমে আসা ¯্রােতের তোড়ে ভাসে গেছে বলে জানান তিনি। তবে এই সড়কটি চালু করার কাজ দ্রুত গতিতে চলছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ভয়াবহ পাহাড় ধসের পরদিনই সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী রাঙামাটি সফরে এসে রাঙামাটি থেকে বহিঃর্গামী একমাত্র মহাসড়কটিকে প্রাধান্য দিয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করে কাজ করার নির্দেশ দেন সড়ক বিভাগকে। তাঁর নির্দেশের আলোকে অবিরাম কাজ চালিয়ে ১০ দিনেই সফল হয় সড়ক বিভাগ। পরে ঈদের পরদিন মন্ত্রী আবারও কাজের অগ্রগতি দেখতে রাঙামাটি আসেন। তিনি জানান, জাতীয় মহাসড়কটি আপাতত সিমীত আকারে চালু হওয়ার আমরা আঞ্চলিক মহাসড়ক দু’টির দিকে নজর দেই। ইতোমধ্যে বান্দরবান সড়ক তথা ঘাগড়া থেকে বড়ইছড়ি যাওয়ার রাস্তাটি চালু করা হয়েছে। অন্যদিকে খাগড়াছড়ি সড়কটির বিভিন্ন অংশে জমা হওয়া মাটি পরিস্কার করতে গত কয়েকদিন তিনটি পে লোডার অনবরত কাজ করে। মাটি সরানো কাজ শেষ এখন এক্সেভেটর ও ডাম্পিং ট্রাক দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। এই গতিতে কাজ চললে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই সড়কটি চালু করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
১৪ জুনের নজির বিহীন পাহাড় ধস বিপর্যয়ে জেলার সবগুলো সড়ক আশঙ্কাজনকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি সড়কের অন্তত ৯টি স্থানে পাহাড় ধসের কারনে রাস্তা ভেঙ্গে যায় এবং বেশ কিছু এলাকার সড়ক পানির নীচে নিমজ্জিত হয়। এই রুটের বেতছড়ি এলাকারও কিছু রাস্তা ধসে পড়ে।
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।