স্টাফরিপোর্ট- ১৯ জুলাই ২০১৮, দৈনিক রাঙামাটি: দেশে মিঠাপানির মাছের অন্যতম উৎস এশিয়া বিখ্যাত কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে মাছ উৎপাদনের যে লক্ষমাত্রা প্রত্যাশা করা হয়েছিল দিন দিন সে সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। এর জন্য প্রধানত জনগণের অসচেতনতা, দূষণ প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দুর্বলতা এবং হ্রদের তলদেশ ভরাট হবার পরও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পানির গভিরতা না বাড়ানোকেই দায়ী করেছে বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে হ্রদটি পুণঃ খননের মাধ্যমে গভিরতা বাড়ানোসহ দুষণ প্রতিরোধ করা গেলে এই হ্রদ আরো দ্বিগুণ ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হবে। তারা জানান এই হ্রদে সময়ের ব্যবধানে কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন কমে যাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্চে। ইতোমধ্যে হ্রদ হতে ৬টি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে বলে গবেষণায় জানা গেছে। আরো কয়েকটি বিরল প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে রয়েছে বলেও জানান তারা।
‘স্বয়ং সম্পূর্ণ মাছের দেশ- বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০১৮ (১৮-২৪ জুলাই) এর শুরুতেই বুধবার রাঙামাটি জেলা মৎস্য অফিসের উদ্যোগে আয়োজতি সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য উঠে আসে। মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াসিন, মৎস্য উন্নয়ন কর্পেরেশনের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আসাদুজ্জামান, কর্মকর্তা মোঃ আযম, মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজী বেলাল উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হ্রদ কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির জন্য সরকার নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। জানানো হয়, এবছর মৎস্য সপ্তাহ ঘিরে সপ্তাহব্যপী কর্মসূচির মধ্যে থাকছে, মাইকিং ও প্রচারণা, সাংবাদিক সম্মেলন, আলোচনা সভা ও র্যালী, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারি কার্যক্রমের অগ্রগতি বিষয়ে আরোচনা ও প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন, ফরমালিন বিরোধী অভিযান, স্কুল কলেজে মৎস্য সচেতনতা আলোচনা এবং পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী।
সম্মেলনে জানানো হয়, কাপ্তাই হ্রদ কেবল বাংলাদেশের প্রধান মাছ উৎপাদন ক্ষেত্র নয়, এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি। কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির ফলে মাছ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন, নৌ-পরিবহনসহ বিভিন্ন সুবিধা গড়ে উঠেছে। কাপ্তাই হ্রদ জাতীয় সম্পদ। এটিকে রক্ষার জন্য সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ ইয়াসিন বলেন, কাপ্তাই হ্রদ, পুকুর, ক্রীক, নদীসহ অন্যান্য চাষকৃত জলাশয় থেকে গেল ১৬-১৭ অর্থ বছরে রাঙামাটি জেলায় ১২ হাজার ৬৭ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র কাপ্তাই হ্রদ থেকে ৮ হাজার ৪২১ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার র্যালী ও শুক্রবার জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের রাঙামাটির ব্যবস্থাপক কমান্ডার আসাদুজ্জামান বলেন, কাপ্তাই হ্রদে খাচায় তেলাপিয়া, পাবদা মাছ চাষের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ২০টি খাচায় চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সফল হলে কাপ্তাই হ্রদ থেকে শতকরা ২৫ ভাগ মাছ উৎপাদন সম্ভব হবে। কাপ্তাই হ্রদে উৎপাদিত মাছ যায় সারা দেশে। কিন্তু নানা কারণে হ্রদে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। হ্রদের নাব্যতা হারানো, অবৈধ উপায়ে মাছ শিকার, মলমূত্র ও বর্জ্যে লেক দূষিত হওয়া এর মূল কারণ। এ তিন বিষয়ে দ্রæত করণীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে হ্রদের পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব। অন্যথায় পরিস্থিতি আরও আশঙ্কাজনক হয়ে উঠবে।
তিনি জানান, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন আবার বাড়তে শুরু করেছে। ফলে হ্রদ থেকে মাছ আহরণে রাজস্ব আয় বেড়েছে। রাজস্ব আয়ে চলতি বছর অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। তবে প্রাকৃতিক প্রজনন ব্যাহত হওয়ায় এরই মধ্যে হ্রদ থেকে বহু প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির পথে আরও বহু প্রাজাতি। বিলুপ্ত প্রজাতির মাছগুলো পুনরুদ্ধারসহ যেসব প্রজাতি বিলুপ্তির পথে সেগুলো রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু কাপ্তাই হ্রদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনাসহ হ্রদকে দূষণমুক্ত করা না গেলে এসব পদক্ষেপ সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে বুধবার রাঙামাটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও গবেষকরা এসব তথ্য প্রকাশ করেন।
মৎস্য গবেষনা ইনষ্টিটিউটের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজী বেলাল উদ্দীন বলেন, কাপ্তাই হ্রদে বানিজ্যিক রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন ৮১ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে হ্রদে ছোট মাছ শতকরা ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে গিয়ে ৯২ শতাংশে পৌছেছে। তিনি আরো বলেন, কাপ্তাই হ্রদে এক সময় ৭৫ প্রজাতির মাছের ছিল। কাচালং চ্যানেলের মাইনিমুখ, বরকল চ্যানেলের জগন্নাথছড়ি, চেঙ্গী চ্য্যানেলের নানিয়ারচর এবং রাইখ্যং চ্যানেলের বিলাইছড়ি এলাকা রয়েছে। ইতোমধ্যে দুটি চ্যানেলের মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে চেঙ্গী চ্যানেলে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায় রাবার ড্যাম নির্মানের কারণে পানির প্রবাহ আশংকাজনক হারে হ্রাসে পেয়েছে এবং ওই চ্যানেলের বিভিন্ন জায়গায় পানি শুকিয়ে চর জেগে উঠেছে। রাইখ্যং চ্যানেলে পলি জমে চ্যানেলের গভীরতা হ্রাম পেয়েছে এবং কিছু কিছু জায়গায় প্রাক প্রজনন মৌসুমে পানির গভীরতা ২ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত হয়ে যায়। ফলে প্রাক প্রজনন মৌসুমে কার্প জাতীয় মাছ অভিপ্রায়ণ করতে পারে না। এ জন্য হ্রদে রুই জাতীয় মাছ কমে যাচ্ছে।
কাপ্তাইয়ে সংবাদ সম্মেলন
কাপ্তাই প্রতিনিধি : কাপ্তাই উপজেলা মৎস্য অফিসে বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ছাবেদুল হক, কাপ্তাই উপজেলা মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারী মিথুন দেওয়ান।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ মাছে দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ১৮ থেকে ২৪জুলাই পর্যন্ত সপ্তাহ ব্যাপী সারা দেশে জাতীয় মৎস সপ্তাহ উদযাপিত হচ্ছে। এরি ধারাবাহিকতায় কাপ্তাইয়ে উক্ত কর্মসূচি সফলভাবে বাস্থবায়নের লক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ব্যানার ফেস্টুন সহকারে র্যালী, আলোচনা সভা, সাংবাদ সম্মেলন, প্রামান্য চিত্র প্রদর্শন, মৎস্য আইন বাস্তবায়ন, স্কুল কলেজের ছাত্র/ছাত্রীদের সমন্বয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভা, শ্রেষ্ঠ মৎস্য চাষীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ ইত্যাদি রয়েছে। উক্ত কর্মসূচিকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় হতে উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের সার্বিক সহযোগীতা কামনা করেন।
জুরাছড়িতে সংবাদ সম্মেলন
জুরাছড়ি প্রতিনিধি: জুরাছড়ি উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক বুধবার দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে জাতীয় সৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপন চাকমা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তরুন চাকমা,পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সুভাষ চাকমা,বেসকারি উন্নয়ন সংস্থা সিআইপিডি উপজেলা সমন্বয়ক ভুপতি চাকমা প্রমূখ।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপন চাকমা সাংবাদিকদের জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি জানান, আগামী ১৯ জুলাই হইতে ২৪ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন,জুরাছড়ি উপজেলার মোট ১২টি পুকুর এবং ৭২টি ক্রিকে মৎস্য চাষ করা হয় বলে জানান দীপন চাকমা।
কাউখালীতে সংবাদ সম্মেলন
কাউখালী প্রতিনিধি: রাঙামাটি কাউখালী উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন বুধবার সকাল ১০টায় উপজেলা মৎস্য অফিসারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন কাউখালী উপজেলা কর্মরত সংবাদ কর্মীদের মধ্যে কাউখালী উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি মোঃ আরিফুল হক মাহবুব, উপজেলা প্রেস ক্লাব সহসভাপতি মোঃ ওমর ফারুক, মো. জয়নাল আবেদীন এ সময় উপস্থিত ছিলেন ।
সংবাদ সম্মেলনে প্রেস ব্রিফিং প্রদান করেন উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ অফিসার আব্দুল্লাহ-আল মাহমুদ, প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মৎস্য অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মৃনাল কান্তি চাকমা, মৎস্য অধিদপ্তরের ক্ষেত্র সহকারী প্রদীপ কুমার দে, রিনা চাকমা, মোঃ দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।