কর আদায় সন্তোষজনক হলে পৌরসভার উন্নয়নে এডিবি ৩শ’ কোটি টাকা দিতে পারে

409

p-2
॥ রাঙামাটি রিপোর্ট ॥

রাঙামাটি পৌরসভার কর আদায় সন্তোষজনকসহ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তহবিল থেকে এই পৌরসভার উন্নয়নে ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন এডিবি মিশন প্রধান আলেকজান্ড্রা ভোগাল ও ইউজিপ থ্রি প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম আকন্দ।

পক্ষান্তরে রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, এডিবির এই প্রস্তাবকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করছি। তিনি বলেন, পৌর নাগরিকদের সহযোগীতা পেলে এবং এডিবির ক্রাইটেরিয়া পুরণে নাগরিক সমাজ কর আদায়ে সচেতন হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা রাঙামাটি পৌরসভায় আমূল পরিবর্তন আনবো।

তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ইউজিপ প্রকল্পের টাকায় আগামী দুই বছরে আমরা এই পৌরসভায় তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন করে দেশের সুনাম বয়ে আনাসহ নাগরিকদের সুযোগ সুবিধা পর্যাপ্ত করতে চাই।

মঙ্গলবার রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত নগর সমন্বয় কমিটির (টিএলসিসি) এক বিশেষ সভায় এই মতামত ব্যক্ত করেন তারা। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় রাঙামাটি পৌরসভায় চলমান ‘তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ (ইউজিপ-৩) এর আওতায় পরিচালিত উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শনে আসা দাতা সংস্থা ও কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে টিএলসিসির এই বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স এর নব নির্মিত অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই সভায় নগর সমন্বয় কমিটির সকল সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ইউজিপ-৩ এর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম আকন্দ। পর্যবেক্ষক দলে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ আলেকজান্ড্রা ভোগাল।

তিনি রাঙামাটি পৌরসভার নগর সমন্বয় কমিটির উদ্দেশ্যে বলেন, উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে আমরা চাই পর্যটন সম্ভাবনাময় এই শহরের তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন হোক। তবে আমাদের সহযোগীতা পাওয়ার জন্য আপনাদের কিছু শর্ত পুরণ করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা শুধু টাকা দিব আর আপনারা ঠিক করবেন আপনাদের শহরকে আপনারা কিভাবে দেখতে চান এবং এই নগর কিভাবে পরিচালনা করা হবে। তিনি টিএলসিসি সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অবশ্যই আপনাদের পরামর্শ সহযোগীতা এবং অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে যেমন এই প্রকল্প থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে না। তেমনি নাগরিকদের কর আদায়, নারী ও দরিদ্রশ্রেণির মানুষের অংশ গ্রহণ না থাকলেও প্রকল্প অব্যাহত থাকবে না। তিনি বলেন, আপনারা সম্মিলিত পরামর্শের মাধ্যমে ঠিক করুন আপনারা তিন বছরের মধ্যে এই শহরে দুইশত কোটি টাকার উন্নয়ন চান কিনা। যদি চান তবে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। নাগরিকদের সচেতন করুন। কারণ উন্নয়ন সহযোগীতা পেতে হলে পৌরসভার পরিচালন ব্যয়টুকু আপনাদের নিজস্ব আয় থেকেই নিশ্চিত করতে হবে।

মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে এডিবি থেকে এমন একটি সুযোগ পাওয়ার পরও আমরা তা ধরে রাখতে পারবো কিনা। কারণ রাঙামাটি পৌরসভায় ট্যাক্সের বাইরে আয় বর্ধনমুলক তেমন কোনো খাত নেই। এ ধরণের খাত সৃষ্টির জন্য অবকাঠামো এবং মার্কেট গড়ে তোলা প্রয়োজন অথচ আমাদের কাছে নিজস্ব কোনো ভূমি নেই। টার্মিনাল আমাদের হাতে নেই, জলমহাল নেই, বাজার নেই। এসব পৌরসভার অধীনে আনতে পার্বত্য এলাকায় যে আইনী জটিলতা রয়েছে, আমাদের নিজেদের স্বার্থেই যত দ্রুত সম্ভব সমাধান হওয়া জরুরী।

সভায় অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ইউজিপ-৩ এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক নাজমুল হাসান চৌধুরী, এডিবি পরামর্শক সিনোরা চাকমা, প্রকল্প ব্যবস্থাপক সাইফুর রহমান, পরামর্শক সুরাইয়া জীবন, রাঙামাটি পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অলিউজ্জমান, সচিব উমেশ রায়সহ টিএলসিসি সদস্যবৃন্দ ও পৌরসভার কর্মকর্তাবৃন্দ।

নগর সমন্বয় কমিটির সভাশেষে প্রতিনিধি দল পৌরসভার চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের অগ্রগতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। পরে সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে অতিথিগণের সম্মানে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে তৃতীয় নগর পরিচালন উন্নতিকরণ কর্মসূচির বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন, পৌরসভার টাউন প্লানার সুবর্ণ চাকমা।

প্রকল্প পরিচালক সভায় তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামোগত উন্নতিকরন প্রকল্প (ইউজিপ)-৩ এর আওতায় কর্মসম্পাদনের মাপকাঠি ও নির্দেশিকাসমুহ উপস্থাপন করেন। এতে জানানো হয়, শর্তগুলো হলো, নাগরিক সচেতনতা ও তাদের অংশগ্রহণ, নগর পরিকল্পনা, নারী ও শহুরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সমতা ও অন্তর্ভূক্তিকরণ, স্থানীয় সম্পদ আহরণ বৃদ্ধি, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, দায়বদ্ধতা ও স্থায়িত্বশীলতা এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এন্টি পর্যায়ে রাঙামাটি পৌরসভা ভাল করেছে। কিন্তু বাকী পর্যায়গুলোও রাঙামাটি পৌরসভার উন্নয়ন ও পৌরবাসীর বৃহত্তর স্বার্থে সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে পালন করা প্রয়োজন।