কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে এলেও নেই কোনো ইশতেহার

1362

॥ শাহ আলম ॥
রাঙামাটি জেলায় ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন ‘রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির লিমিটেড’ এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১৫ই ডিসেম্বর। তবে নির্বচন ঘিরে কোনো ইশতেহার না থাকায় সদস্যরা বিস্ময় প্রকাশ করেছে।

সমিতির নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে এলেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীরা এখন পর্যন্ত (এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত) কোনো নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেননি। তাই নির্বাচনী ইশতেহার ইস্যুতে বর্তমান কমিটিসহ কাঠ ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে শহরে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। প্রতীক পেয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। আগামী ১৫ ডিসেম্বর ২০ইং তারিখে ১১তম ব্যবস্থাপনা পরিষদ এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙামাটির বাণিজ্যিক এলাকা বনরূপাসহ পৌর এলাকায় ব্যানার, পোস্টার আর ফেষ্টুনে ছেয়ে গেছে। তবে যত্রতত্র ব্যানার, পোস্টার আর ফেষ্টুন লাগানোর কারনে শহরের সৌন্দর্য্য হ্রাস পেয়েছে। এ নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনাও করছেন।

রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’’ এর বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আবু এ বিষয়ে প্রতিবেদককে জানান, নির্বাচনে ইশতেহার ঘোষণা করা, না করা প্রার্থীদের একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে সমিতির বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি কি করবে বা কি করার আছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ইশতেহার ঘোষণা করলে, কর্মকর্তা ও কর্যকরি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কোন সমস্যা হলে এবং কার্যে ব্যতয় ঘটলে বা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে তখন সাধারণ সদস্যরা ইশতেহার বা তাঁর দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে কথা বলার সুযোগ পায়।

কিন্তু পদপ্রার্থী এ পর্যন্ত ইশতেহার ঘোষণা করে নাই। এটি খুব দু:খজনক। সমিতির সাধারণ সদস্যদের পক্ষ থেকে তিনি সর্বশেষ বলেন, আমরা যাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবো তাদের কাছে জোর দাবী ব্যবসায়ীক সমস্যা সমধান, আশার আলো ও নতুন নতুন স্বপ্ন সম্বলিত ব্যবসায়ীক দিক নির্দেশনাসহ অবিলম্বে নির্বাচনী ইস্তেহার ঘোষণা করা হোক।

নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক বেশ কয়েকজন কাঠ ব্যবসায়ী বলেন, একটি নির্বাচনে ইশতেহার থাকাটা জরুরী। ইশতেহার ছাড়া একটি সংগঠন কিংবা সদস্যদের উন্নয়নে শুভংকরের ফাঁকি থাকার সম্ভাবনা থাকে। নির্বাচনে ইশতেহার না থাকলে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত নেতৃবৃন্দদের কোন স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা থাকে না। নিজেদের ইচ্ছেমত সংগঠন পরিচালনা করার চেষ্টা ও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে। যা পরবর্তীতে সমিতি ও সদস্যদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমরা ব্যবসায়ীরা চাই নির্বাচনে প্রার্থীরা তাদের ইশতেহার ঘোষণা করুক। এটি আমাদের দাবি।

রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’’ এর ১১তম ব্যবস্থাপনা পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মোঃ জমির উদ্দিন জানান, আমরা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষথেকে প্রার্থীদের ১৫টি ব্যানার লাগানো অনুমতি দিয়েছি এবং শহরের যত্রতত্র ব্যানার, পোস্টার আর ফেষ্টুন না লাগানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। কিন্তু আমরা আভিযোগ পেয়েছি অনেক প্রার্থী যত্রতত্র ব্যানার, পোস্টার আর ফেষ্টুন লাগিয়েছেন। এটি নির্বাচনী আচারণ বিধি লঙ্ঘন ও দু:খজনক। আমরা ইতিমধ্যে প্রার্থীদের নির্দেশনা দিয়েছি যাতে যত্রতত্র লাগানো ব্যানার, পোস্টার আর ফেষ্টুন খুলে ফেলা হয়। অন্যথায় নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্গনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, ০৯ টি পদ নিয়ে ১২সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হবে। চলতি মাসের ০৫ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ‘‘রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’’ এর নির্বাচনে ০৯টি পদের বিপরীতে ২৬জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেনি। নির্বাচন যথা সময়ে ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

যেসব পদে নিয়ে ১১তম বার্ষিকী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে: ১) সভাপতি, ২) সহ-সভাপতি, ৩) সাধারণ সম্পাদক, ৪) সহ-সাধারণ সম্পাদক, ৫) অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক, ৬) সমাজ সেবা ও উন্নয়ন সম্পাদক, ৭) তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, ৮) দপ্তর সম্পাদক, ৯) কার্যনির্বাহী সদস্য। [বি: দ্র: নির্বাচনে প্রত্যেক পদের জন্য ১জন করে নির্বাচিত হবে কিন্তু কার্যনির্বাহী সদস্য পদে ৪জন।]

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারীর নাম ও প্রতীক: সভাপতি পদে হাজী মোঃ আনেয়ার মিয়া বানু (হারিকেন), মোঃ আজম খান (চেয়ার) ও মো: আবু ইউসুফ ভূইয়া (বাইসাইকেল)। সহ-সভাপতি পদে হাজী হাবিবুর রহমান চৌধুরী (হরিন) ও মো: আনোয়ার খান (রিক্সা)। সাধারণ সম্পাদক পদে মো: শাওন ফরিদ ও কাজী মো: শহিদুল্লাহ (দেওয়াল ঘড়ি)।

সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে মো: জহির আলম (টেলিভিশন), নুর মোহাম্মদ (ফুটবল) ও বখতেয়ার হোসেন মুরাদ (বৈদ্যুতিক পাখা )। অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক পদে মো: শহিদুল্লাহ কাজল (শাপলা), ও বখতেয়ার উদ্দিন চৌধুরী (তালা চাবি)। সমাজসেবা ও উন্নয়ন সম্পাদক পদে মো: জহির উদ্দিন তালুকদার (টেবিল) ও মো: লোকমান হাকিম হীরা (চশমা)। তথ্য ও প্রচার সম্পাদক পদে মো: জসিম উদ্দিন (টেলিফোন) ও মোঃ নুরুল ইসলাম (বই)। দপ্তর সম্পাদক পদে মো: জাহিদুল ইসলাম তালুকদার (মাছ), মোঃ আবদুল মোনাফ (দোয়েল পাখি) ও মানিক রতন নাথ (তারা)।

কার্য্যকরী সদস্য পদে মোঃ মোজাহেরুল ইসলাম ওয়াসিম (আম), অর্পন সাহা (মোরগ), মোঃ ইকবাল আহমেদ (চাকা), নুর হোসেন রানা (কলসি), মোঃ আলমগীর (গরুর গাড়ী), মোঃ আরফান আলী প্রজাপতি, মোঃ খুরশেদ (বালতি)। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সমিতির প্রত্যেক প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হবে। সমিতির সর্বমোট সদস্য সংখ্যা সর্বমোট ৪৩০জন। তারা সকলেই ভোটার বলে জানানো হয়।

উল্লেখ্য: রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেড এর মাধ্যমে রাঙামাটি জেলার হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও শ্রমিক আসবাবপত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এ ব্যবসা সমিতির রাঙামাটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে অধিকাংশ সদস্যই অভিযোগ করেছেন যারা কাঠ ব্যবসার সাথে জড়িত নয় তাদেরকেও সদস্য করায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।