চাঁদা না দেওয়ায় কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে

326

॥ নূর হোসেন মামুন ॥
সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দাবি করা লক্ষ টাকার চাঁদা পরিশোধ না করায় মাছ ব্যবসায়ীদের মাছ আহরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে এ ঘটনায় কর্ম হারিয়ে বিপাকে পড়েছে এশিয়ার বৃহত্তর কাপ্তাই হ্রদ থেকে জীবিকা নির্বাহ করা খুচরা ও পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী, মাঝি, শ্রমিকসহ পেশাজীবি হাজারও মানুষ।

কাপ্তাই মৎস্য ব্যবসায় সমিতির নেতা মো. জসিম উদ্দিন জানান, পাহাড়ের একটি সশস্ত্র গ্রুপ আমাদের কাছে ৮লক্ষ টাকার চাঁদা দাবি করে। ওই গ্রুপ ছাড়াও আরও মোট ৪টি গ্রুপের জন্য প্রায় ২০লক্ষ টাকা চাঁদার দাবি উঠে। বুধবার (২৫ই আগষ্ট) পর্যন্ত ছিল এই চাঁদা প্রদানের আলটিমেটাম দেওয়া সময়। এই সময়ে টাকা পরিশোধ না করায় তারা (চাঁদা চাওয়া গ্রুপের প্রতিনিধি) আজকে সকালে আমাদের জেলেদের মোবাইলের মাধ্যমে বলে তোমরা আর জাল মারিওনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্চুক স্থানীয় এক মাঝি এই প্রতিনিধিকে বলেন, আমাদের সওদাগরদের উপরের পার্টি (সন্ত্রাসী গ্রুপ) তাদের কাছে চাঁদা খুঁজে। চাঁদা না দেওয়াই এমন অবস্থা। আমার মাধ্যমে দেড়শতাধিক শ্রমিক দেশের বিভিন্ন স্থান হতে কাপ্তাইতে কাজ করতে এসেছে। এখন যেহুতু মাছ মারা বন্ধ করতে হচ্ছে তাই এদের সবাইকেই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

এশিয়ার বৃহত্তম কাপ্তাই লেকে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক দীর্ঘ ৩’মাস ১০’দিন মাছ আহরণ থেকে বিরত ছিল রাঙামাটি জেলার কাপ্তাইয়ের মৎস্য ব্যবসায়ীরা। অবশেষে নিষেধাজ্ঞা তোলায় স্বস্থি মিললেও সন্ত্রাসী দাবিকৃত চাঁদা যেন এখন আবার মরার উপর খড়ার ঘাঁ।

কাপ্তাইয়ে মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, কাপ্তাইয়ের মাছ ঢাকা, যাত্রাবাড়ি, চট্টগ্রাম সহ দেশের বাহিরে পর্যন্ত যায়। এ খাতে সরকার প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব পেয়ে থাকে। আরেক ব্যবসায়ী নেতা এই প্রতিনিধিকে বলেন, কাপ্তাই লেকে জাল থেকে মাছ সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিপনন পর্যন্ত হাজারও লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এই মুহুর্তে চাঁদার ভারে কাপ্তাই লেকে যদি মাছ আহরণ চিরতরে বন্ধ হয় তাহলে দেশের

আমিষের চাহিদায় বড় প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান হারাবে এই পেশায় সংশ্লিষ্ট হাজারো মানুষ। সরকার হারাবে রাজস্ব।
মৎস্য শ্রমিক আলাউদ্দিন, নাদির মিয়া, তোফাজ্জল, জয়নাল আবেদীন সহ আরও অনেকে এই প্রতিনিধিকে বলেন, জীবনে মাছ সংশ্লিষ্ট ছাড়া আর কোন কাজই শিখিনি। গত ৩মাছ মাছ ধরা বন্ধ থাকা ও লকডাউনের প্রভাবে কষ্টে কেটেছে আমাদের দিন। এখন আবার মাছ ধরা বন্ধ করছে ব্যবসায়ীরা। আমাদের পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জানা বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে ওনাকে কেউই এই বিষয়ে অবহিত করেননি।