ভ্রমণ পিপাসুদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠছে প্রকৃতির রাণী রাঙামাটি

848

॥ ইকবাল হোসেন ॥
দীর্ঘ সময়ের বন্ধাত্ব কাটিয়ে অবশেষে প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে নয়নাভিরাম কাপ্তাই হ্রদ ও হ্রদ সন্নিহিত অঞ্চল। নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতেই ছুটে আসতে শুরু করেছে পর্যটকরা। যেন জীবনের ঝুঁকি কোনো বিষয়ই নয়। প্রকৃতির মাঝে অবগাহনই জীবনের সার্থকতা। আশুরার বন্ধের প্রাক্কালে দুই সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ৩দিনের অবকাশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে প্রকৃতি প্রেমিরা।

সারা দেশের ন্যায় মহামারী করোনা ভাইরাসের ফলে দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ ছিল রাঙামাটির বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলো। কিন্তু গত ১৫ই আগস্টের পর সীমিত পরিসরে রাঙামাটির সকল পর্যটন কেন্দ্রসমূহ খুলে দেওয়ার পর থেকেই পর্যটন নগরী রাঙামাটিতে আসতে শুরু করেছে ভ্রমণ পিপাসুরা। গত ২৮,২৯ ও ৩০ আগস্ট এই ৩দিন সরকারি ছুটি থাকায় ভ্রমন পিপাসুরা এই সময়টাকে কাজে লাগিয়েছে, ওই তিনদিন রাঙামাটিতে চোখে পড়ার মতো পর্যটকের সমাগম ঘটে। শহরের প্রায় সকল আবাসিক হোটেলগুলো ৮০ শতাংশই বুকিং ছিলো। এরপর থেকে পর্যটক সমাগম কিছুটা কমে গেলেও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মুখে হাসি ফুটেছে। যদিও ট্যুরিজম ব্যাবসায়ের সাথে জড়িতরা বলছে পর্যটক সমাগম স্বাভাবিক পর্যায়ে আসতে আরো সময় লাগবে।

এবিষয়ে রাঙামাটির সরাইখানা “হোটেল প্রিন্স” এর স্বত্ত্বাধিকারি নেছার আহমেদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ৩দিন সরকারি ছুটি থাকায় ২দিন তার হোটেলের ৮০শতাংশ বুকিং ছিলো। তিনি বলেন, যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার পর যেখানে ১০ শতাংশ রুম ভাড়া হতো সেখানে বর্তমানে ২৫-৩০শতাংশ রুম ভাড়া হচ্ছে। এদিকে তিনি নিজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসায় পরিচালনা করছেন এবং রাঙামাটিতে আসা পর্যটকরা যাতে করোনা জনিত স্বাস্থ্যঝুঁকিতে না পড়তে হয়- সেজন্য সকলকে সুনজর দেওয়ার আহ্বান জানান। সম্প্রতি রাঙামাটিতে পর্যটকসহ ট্রলারডুবি ও অন্যান্য দূর্ঘটনা যাতে পুণরায় না ঘটে সেদিকে প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন পর্যটকদের সাথে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তারা ভয়ে রাঙামাটিতে আসতে চায়না।

পর্যটক সমাগমের বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দীন সেলিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সীমিত পরিসরে রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্র গুলো খুলে দেওয়ার পর গত ২/৩দিন রাঙামাটিতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। যেহেতু সাধারণত বর্ষা মৌসুমে রাঙামাটিতে পর্যটক সমাগম ঘটতো তাই এখন বর্ষার কিছুটা আভাস রয়েছে তাই পর্যটকদের সমাগম ঘটছে। আমরা সকল ব্যাবসায়ীরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল পরিচালনা করছি। রাঙামাটিতে আসা পর্যটকরা যাতে কোন প্রকার স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে না পরে সেজন্য খাবার হোটেল, সিএনজি, বোট ইত্যাদিতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়াও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বোট দূর্ঘটনার মতো ঘটনা যাতে পুণরায় না ঘটে তাই বোট চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ও ট্যুরিস্ট সিজনে প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি জানান।

তিনি আরো বলেন রাঙামাটিতে শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। অনেক দূর্গম এলাকা গুলোতেও সরকারে উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে যা সচরাচর র্দশ্যমান হয়না। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। কিন্তু এই দুই প্রতিষ্ঠান যদি পর্যটন খাতে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতো তাহলে রাঙামাটির পর্যটন শিল্প যেমন উন্নত হতো তেমনি পর্যটক সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতো। তাই তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ কতৃপক্ষের প্রতি পর্যটন সেক্টরে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন রাঙামাটিতে নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র চালু হলে পর্যটক বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন পর্যটন শহর রাঙামাটিতে একটি নির্দিষ্ট বাস টার্মিনাল নেই। তাই এবিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

এদিকে রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ম্যানেজার সৃজন বিকাশ বড়–য়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের সেবা প্রদান করে যাচ্ছি। গত ২/৩দিন কিছু পর্যটকদের দেখা মিললেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পর্যটকের সমাগম ঘটবে না। কারণ এখনও গণপরিবহন সীমিত আকারে চালু আছে, কেউ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া চলাফেরা করছে না। যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে তারাই ঘুরতে আসছে। তিনি জানান, রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ৩টি স্পটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্দেশিত নীতিমালার ১৩টি বিষয় লিখে মানুষের চোখে পড়ার মতো স্থানে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও “নো মাস্ক নো এন্ট্রি” বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।