জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে সাম্প্রদায়ীক গুজব ছড়িয়ে উপজাতিদের আবরো শরনার্থী বানানোর অপচেষ্টা চলছে

616

স্টাটাফরিপোর্ট- ৩০ আগস্ট ২০১৮, দৈনিক রাঙামাটি:  পার্বত্য চট্টগ্রমের শান্ত পরিবেশ অস্থীতিশীল করতে সাধারণ জনগনকে নানা ধরণের ভয়-ভীতি দেখিয়ে সাম্প্রদায়ীকতার গুজব ছড়ানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় বাঞ্চলিক সংগঠনগুলো। তারা আগামী ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সাম্প্রদায়ীকতার গুজব ছড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রমের উপজাতীয়দের আবারো শরনার্থী বানিয়ে নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহনুভূতি পাবার অপচেষ্টা চলছে। ভয়-ভীতির কারণে এরি মধ্যে পাহাড়ের বিভিন্ন লোকালয়ে দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক। অগ্রীম আতঙ্কে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মানুষ তাদের যথাসর্বস্ব বিক্রি করে নগদ টাকা যোগাড় করে রাখছে যাতে বিপদের সময় তারা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমাতে পারেন। এমন খবর রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে।

জানাগেছে, আঞ্চলিক দলগুলো আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই গুজবের কৌশল বেচে নিয়েছে। এদিকে সরকারি সংস্থাগুলো উদ্যোগ নিয়েও গুজব ঠেকাতে পারছে না। গুজবে দিনদিনই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে গ্রামীণ মানুষ। এমনিতেই নানাধরনের গুজবে কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই পার্বত্য দুই জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ঘটে যায় পাহাড়ি-বাঙ্গালী সংঘর্ষসহ সাম্প্রদায়িকতার মতো স্পর্শকাতর নানা ঘটনা। একের পর এক এই ধরনের ঘটনার ফলে পাহাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে প্রচন্ড রকমের আস্থার সংকট রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পার্বত্যাঞ্চলের আঞ্চলিকদলগুলোর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে রাঙামাটির প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে ধারাবাহিকভাবে উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। প্রথম সারি থেকে শুরু করে মধ্যমসারির নেতাসহ জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হওয়া এসব উঠান বৈঠকে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ-বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিকদলকে যাতে করে স্থানীয় উপজাতিরা ভোট না দেয় সে বিষয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া চলমান সশস্ত্র রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে আরো বড় ধরণের সন্ত্রাসি ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হয়তো কিছুদিনের মধ্যে মূল ধারার জেএসএস-ইউপিডিএফ এক হয়ে সংস্কারপন্থী জেএসএস ও গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফকে প্রহিত করার ক্ষেত্রে মুখোমুখি সশস্ত্র হতে পারে।

উঠোন বৈঠকে তারা সাধারণ উপজাতিদের এই মর্মে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে যে, তারা যেন স্বীকার করে শান্তিচুক্তি হওয়ার পরেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিরীহ পাহাড়িদের উপর অমানুষিক অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করার পায়তারা করছে। তারা কাগজ কলমে ও মুখে বলে এককথা আর বাস্তবে বাঙালিদের সহযোগিতায় সেনাবাহিনী পাহাড়িদের উপর অস্ত্রের মুখে চালায় অত্যাচার নির্যাতন। তারা বোঝানোর চেষ্টা করছে, আবার যদি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পাহাড়িদের উপর অত্যাচার শুরু করে তাহলে তোমাদেরকে ভারতে পার করে দিতে সহযোগিতা করা হবে। আন্তর্জাতিক মহলে দেখানোর জন্য তারা বিভিন্ন এলাকার পাহাড়িদেরকে গরু ছাগল হাঁস মুরগী ছাড়াও বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করার ডকুমেন্টারির তৈরি করছে বলে জানাগেছে।

সূত্র মতে জানাগেছে, বাঘাইছড়ির উপজেলার শিজক, তাঙ্গগুমাছড়া, জীবতলী, তালুকদার পাড়া, দোসর, এবং কচুছড়ি এলাকার, পাহাড়িদেরকে জেএসএস সমর্থিত বাঘাইছড়ির দপ্তর ও তথ্য প্রচার সম্পাদক দয়া সিন্ধু চাকমা ও বাঘাইছড়ির আদিবাবু, জুড়াছড়ির শিমন চাকমার নেতৃত্বে বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জুম্মদেরকে আবারো শরণার্থী বানানোর কথা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে সশস্ত্র গ্রæপ।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, আবারো শরণার্থী হওয়ার কথা শুনে চরমভাবে আতঙ্ক বিরাজ করছে পাহাড়ি এলাকাগুলোতে। এরিমধ্যে জেলার দূরছড়ি বাজারে আয়োজিত একটি বিশেষ আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায়ও স্থানীয় উপজাতীয় ব্যক্তিবর্গ এই ধরণের অভিযোগ তুলে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তায় নিরাপত্তাবাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করেন। উলুছড়ির এক কার্বারীও এমনই বিষয়ের ইঙ্গিত করে তার এলাকার নিরাপত্তায় সহযোগিতা কামনা করেন। এই সভায় খাগড়াছড়ি থেকে একজন সেনা কর্মকর্তা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। লংগদু সেনাজোনের জোন কমান্ডার এই সভায় সভাপতিত্ব করেন। এদিকে, সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেএসএস নেতা ও বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বড় ঋষি চাকমা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষের মাধ্যমে এই ধরনের ভীতিকর গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এটা আমাদের দল করেনি।

এই ধরনের আতঙ্কের বিষয়টি নজরে আসায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসনসহ নিরাপত্তাবাহিনীর এ অভিযোগ আমলে নিয়ে সন্ত্রাসিদের প্রতিহত করার পদক্ষেপ করছে। এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক জানান, গুজবের খবর তাদের কাছে এসেছে। এ খবরের বিষয় তারা সংশ্লিষ্ট্যদের সাথে আলাপ আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, এ ধরনের গুজব রটনাকারিদের চিহ্নিত করে তরা ব্যবস্থা নিবেন। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের এই গুজবে কোনো প্রকার আতঙ্কিত নাহওয়ারও আহবান জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক বলেন, নাগরিকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সরকার। শীঘ্রই তৃণমুল পর্যায়ে স্থানীয়দের মতামতের ভিত্তিতে তাদের চাহিদা অনুসারে সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।

রাঙামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবির জানিয়েছেন, বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সাথেই আমলে নেয়া হয়েছে। এ ধরণের অপততপরতার সাথে কারা জড়িত তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। বিষয়টি উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষ তথা সর্বোচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রয়োজানীয় নির্দেশনা পেলেই আমরা আইনানুগভাবে ব্যবস্থা নিবো। তিনি বলেন, রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্রে যারাই লিপ্ত থাকুক না কেন কাউকেই ছাড় দিয়ে কথা বলবো না। তিনি জনসাধারণকে এধরনের কোনো গুজবে কান নাদিয়ে গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে তথ্যদিয়ে পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার আহবান জানিয়েছেন।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।