স্টাফ রিপোর্ট- ৭ জানুয়ারী ২০১৭, দৈনিক রাঙামাটি: রাজনৈতিক সদিচ্ছা, জনসচেতনতা, ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব। রাজনীতিবিদরা যদি সত্যিকার অর্থে চান তাহলে যে কোন মুহূর্ত থেকে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে জনগণকেও সম্পৃক্ত হতে হবে। আজ রাজধানীর বিএফডিসিতে এটিএন বাংলার নিজস্ব ইস্টুডিওতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট’ অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন, টিআবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এ সবুর। ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্টের গ্রান্ডফাইনালে দুর্নীতি বিরোধী এ ছায়া সংসদে রাজনৈতিক সচেতনতা নাকি জনসচেতনতা দুর্নীতি রোধ করতে পারে- এনিয়ে বিতার্কিকরা তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোর-তরুণ বিতার্কিকদের নিয়ে সাজানো অনুষ্ঠনটি সকাল ১১টা থেকে বেসরকারী টিভি চ্যনেল এটিএন বাংলায় সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
দুদক কমিশনার এএফএম আমিনুলইসলাম তাদের বিভিন্ন কর্মকা- তুলে ধরে বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক সার্বিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দুদক দুর্নীতি প্রতিরোধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পাশা পাশি জনসচেতনতার উপরও জোর দিচ্ছে। তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধকে দ্বিতীয়যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করেন। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সবাই মিলেযুদ্ধ ঘোষণা করলে দুর্নীতিবাজরা পালিয়ে যাবে। তিনি ঘুষদাতা ও গ্রহীতাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদানের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জনসচেতনতা দুুটোই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া পৃথিবীর কোন দেশেই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের নজির নেই। দুর্নীতি দমনে কঠিন আইন প্রণয়নসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনের সর্বত্র দুর্নীতি বিরোধী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তিনি আরো বলেন, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তাদের যদি শাস্তি দেওয়ানা যায় তাহলে দুর্নীতি দমন কার্যক্রম সফল হবেনা। দুর্নীতিকে জীবন যাত্রার অংশ হিসেবে গ্রহণ করা যাবেনা। সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সম্মিলিত ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাংলাদেশের প্রথম এবং প্রধান সমস্যা হলো দুর্নীতি। এই দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব হলে গণতন্ত্র বজায় রেখে সুশাসন ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা সম্ভব। প্রচুর সম্ভাবনার এ দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সরকারসহ সকল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ঠিকই কিন্তু দুর্নীতির দুষ্টচক্র থেকে এখনও বেরিয়ে আসতে পারছিনা। তাই ভবিষ্যতে যারা দেশের নেতৃত্ব দেবে তাদের সচেতন করা এবং সৎ ও সুনাগরিক হিসেবে তৈরী করার জন্যই আমরা এ ধরনের আয়োজন করে থাকি। বিশেষট্রাইবুনালের আওতায় এনে দুর্নীতিবাজদের বিচারের দাবি করেন তিনি।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এ সবুর বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং জনসচেতনতা একটি অপরটির পরিপূরক। রাজনীতি বিদরাই দেশ গঠনে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা জনগণের প্রতিনিধি। তাই তাদের জনগণের কথা বলা উচিত। কিন্তু আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি ব্যাংকিং সেক্টরে বড় বড় দুর্নীতির সঠিক কোন বিচার হয় নি।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব আবু মো: মোস্তফা কামাল ও এটিএন বাংলার উপদেষ্টা নওয়াজীশ আলী খান।
বাছাইয়ের মাধ্যমে দেশের স্বনামধন্য ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয় বছরব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, রানার আপ ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে যথাক্রমে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। অনুষ্ঠান শেষে বিতার্কিকদের ট্রফি, ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও নগদ অর্থ পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়। এতে চ্যাম্পিয়ন, রানার আপ ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দলকে যথাক্রমে ১০০,০০০/-, ৫০,০০০/- এবং ২৫,০০০/- টাকা দেয়া হয়। চ্যাম্পিয়ন দল প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির বক্তারা হলেন- হাফিজ উদ্দিন মুন্না, জহিরুল হক, জোবায়ের সর্দার মার্জান। এবং রানার আপ দল ইবাইস ইউনিভার্সিটির বক্তারা হলেন- রিয়াজুল ইসলাম, অনিতা ইসলাম, এবং মাসুদ সিকদার।
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।