পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনও কুষ্ঠরোগ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত

398

p..2

 
স্টাফ রিপোর্টার, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : পার্বত্য তিন জেলা এখনও কুষ্ঠ রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসাবে বিবেচিত এবং ২০১৫ সালে এই তিন জেলাতেই ১৬০ জন কুষ্ঠ রোগী চিহ্নিত করা হয়েছে যার মধ্যে ৯ জন শিশু রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সিএইচটি লেপ্রোসি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম চালু হওয়ার পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২৯৬২ জন কুষ্ঠরোগী চিহ্নিত করা হয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের সম্পূর্ণ বিনামুল্যে চিকিৎসা প্রদানসহ প্রয়োজনবোধে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নেও কাজ করা হচ্ছে। রোববার বিশ্ব কুষ্ঠ দিবসে রাঙামাটিতে আয়োজিত র‌্যালী পরবর্তী আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

এরআগে “আমাদের অঙ্গিকার, কুষ্ঠ প্রতিবন্ধী শিমু একটিও নয় আর” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রোববার সকালে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের করা হয়। রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা জামান এর নেতৃত্বে র‌্যালীটি রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে গিয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।

রাঙামাটি জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ ও সিএইচটি লেপ্রোসি কন্ট্রোল প্রজেক্ট এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ রূহি বনানীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা জামান। এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা স্কাউটস এর সম্পাদক মোঃ মোস্তফা কামাল, নির্মল বড়ুয়া, বিমল মিত্র ত্রিপুরা। সভায় পার্বত্য চট্টগ্রামে কুষ্ঠ রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএইচটি লেপ্রোসি মিশনের ব্যবস্থাপক ডাঃ জীবক চাকমা। অনুষ্ঠানে কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা বিদ্যাময় চাকমা এবং আলী ওসমান বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভায় জানানো হয়, কুষ্ঠ রোগে মূলত প্রান্তিক স্নায়ু আক্রান্ত হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চামড়ার মাধ্যমে এ রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। জীবাণু সাধারণত ত্বক এবং ত্বকের নিকটবর্তী স্নায়ুকলাকে আক্রান্ত করে। আক্রান্ত স্থান অপেক্ষাকৃত বিবর্ণ হয়ে থাকে। স্নায়ু আক্রান্ত হলে স্থানটি অবশ হয়ে থাকে। কুষ্ঠ হলে হাত, পা বিকলাঙ্গ হতে পারে। চোখ নাড়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। অনুভূতি কমে যাওয়ার কারণে আগুনে পোড়া বা অন্যান্য দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সব বয়সীরাই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে নারীদের চেয়ে পুরুষরা এ রোগে আক্রান্ত হয় বেশি।

রোগী ও সমাজকে সচেতন করার মাধ্যমে অনেকাংশেই এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। আমাদের দেশে বিনামূল্যে কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের কারণে অনেকেই আক্রান্ত হওয়ার পরও চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে চায় না। এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। সময়মতো ওষুধ গ্রহণ করলে কোনো জটিলতা হয় না। তবে জটিলতার কারণে শল্য চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। কুষ্ঠ জীবাণুঘটিত রোগ। এটি অভিশাপের ফল নয়। এজন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। এসময় সাংবাদিক, স্বাস্থ্যকর্মী, এনজিওকর্মী, স্কাউটসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন আলোচনা সভায় অংশ নেন। পরে কুষ্ঠ রোগ এর উপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত  হয়।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান