প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় রাঙামাটিকে ব্র্যান্ডিং করতে আসুন সকলে কাজ করি>>লোগো ও শ্লোগান জমা দেওয়ার সময় বাড়লো

662

॥ আনোয়ার আল হক ॥

বৈচিত্রময় সংস্কৃতি, অপরূপ পাহাড়ি প্রকৃতি এবং হ্রদ পাহাড়ের মিতালীর দেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় রাঙামাটি। এ জেলার নৈসির্গিক সৌন্দর্য বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে ব্র্যান্ডিং প্রক্রিয়ার মেয়দ বাড়লো। দেশ বিদেশের মানুষের কাছে রাঙামাটি’র প্রকাশ আরো সাবলীল এবং আবেগময় করতে ব্র্যান্ডিং বা শ্লোগানসহ এ জেলার স্বতন্ত্র লোগো তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত এক মতবিনিময় থেকে এই কাজের সাথে সকল নাগরিককে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান। তিনি বলেন, সবাই এগিয়ে এলে আমার বিশ্বাস আমরা একটি চমকপ্রদ ও গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারবো। তিনি এই জেলার সম্ভাবনা, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও আগামী স্বপ্নকে সামনে রেখে লোগোসহ থীম তৈরি ও শ্লোগান রচনায় সকল বয়সী নাগরিকদের অংশ গ্রহণের আহ্বান জানান। যার লোগো বা শ্লোগান নির্বাচিত হবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে।

মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, শিক্ষক, নারী নেত্রী, এনজিও কর্মী, উদ্যোক্তাসহ জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মুলত: দেশের সকল জেলাকেই ব্র্যান্ডিংয়ের আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগ সরকারি নির্দেশনার আলোকেই। গত কিছুদিন যাবত লোগো শ্লোগান তৈরি আহ্বান জানিয়ে প্রচারণা চালিয়ে আসছিল জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি লোগো এবং শেলাগান জমাও পড়েছে। তবে মত বিনিময় সভায় সেসব উপস্থাপনের পর আরো ভালো কিছু পাওয়া যায় কিনা সে লক্ষ্যে সময় বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করে সুশীল সমাজ। এই প্রস্তাবের আলোকেই সময় বাড়ানো হয়েছে। লোগো জেলা প্রশাসনের সরাসরি অথবা ফেসবুক পেইজে জমা দেওয়া যাবে।

সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, একটি জেলার চলমান উদ্যোগ এবং সম্ভাবনাসমূহকে বিকশিত করার মাধ্যমে জেলার সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। পর্যটন সম্ভাবনাময় এই জেলাকে ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট রূপকল্পে দাঁড় করিয়ে গৃহীত কর্মপরিকল্পনার সুসংগঠিত বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা একটি কাঙ্খীত গন্তব্যে পৌঁছতে সক্ষম হবো বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে জেলার সর্বস্তরের মানুষের আশা আকাঙ্খা, ঐতিহ্য, গৌরব ও কৃষ্টি মাথায় রেখেই কাজ করা হবে।

জেলা-ব্র্যান্ডিং কী?

বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলার কোনো না কোনো বিশেষত্ব রয়েছে। কোনো জেলা পর্যটনের জন্যে, কোনো জেলা কোনো পণ্যের জন্যে, আবার অন্য কোনো জেলা হয়তো কোনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্যে বিখ্যাত। কাজেই একটি জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বিবেচনায় রেখে জেলার সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করে তার স্বাতন্ত্রকে বিকশিত করার লক্ষ্যে গৃহীত সার্বিক কর্ম-পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের যে কর্মযজ্ঞ তা-ই মূলত জেলা-ব্র্যান্ডিং। একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কিছু মূল্যবোধ চর্চার মাধ্যমে একটি জেলার নাগরিক সেবাসহ সার্বিক কল্যাণ সাধন জেলা-ব্র্যান্ডিংয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য।

জেলা-ব্র্যান্ডিং কেন?

একটি জেলার চলমান উদ্যোগ এবং সম্ভাবনাসমূহকে বিকশিত করার মাধ্যমে জেলার সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। ব্র্যান্ডিং প্রতিটি জেলাকে একটি সুনির্দিষ্ট রূপকল্প দেবে, যা গৃহীত কর্মপরিকল্পনার সুসংগঠিত বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেই জেলাকে একটি গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। একটি জেলার সর্বস্তরের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, ঐতিহ্য, গৌরবকে দেশে-বিদেশে ভাস্বর করে তোলার লক্ষ্যে সকলের একাত্ম হয়ে কাজ করার জন্য জেলা-ব্র্যান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

জেলা- ব্র্যান্ডিংয়ে যে সব ধারণা প্রাধান্য পাবে

জেলা সম্ভাবনা, কৃষ্টি ও ঐতিহ্য, জেলার উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন (যেমন : বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কৃষি, শিক্ষা, নাগরিক সেবা ইত্যাদি ক্ষেত্রে)। জেলার হস্তশিল্প ও প্রসিদ্ধ খাবারসমূহ যেমন: পাহাড়ি পিঠা, ব্যাম্বো চিকেন, বস্ত্র শিল্প ও কুটির শিল্প, থামি খাড়াং ইত্যাদি। অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রে কুমিল্লার রসমালাই, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের চমচম, চাঁদপুরের ইলিশ প্রভৃতি। জেলার বিশেষ সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক ও লোকজ ঐতিহ্য (উৎসব, মেলা, নাচ, গান ইত্যাদি); জনকল্যাণের জন্য গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ (যেমন : মাদকমুক্তকরণ, বাল্যবিবাহ মুক্তকরণ ইত্যাদি); জেলার উল্লেখযোগ্য পর্যটক-আকর্ষণসমূহ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা; জেলার অধিবাসীদের বিশেষ দক্ষতা, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে জেলার বর্তমান সুবিধা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা; জেলার উল্লেখযোগ্য পণ্য ইত্যাদি। বলা বাহুল্য যে, এই সকল ক্ষেত্রেই রাঙামাটি জেলার বিশেষ অবস্থান রয়েছে।

প্রসঙ্গত, এককালের জেলে পল্লী সিঙ্গাপুর শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে যেভাবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে তা খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। রাঙামাটির যতটা সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে সিঙ্গাপুরের ততোটা প্রাকৃতিক সম্পদ ছিলনা। সিঙ্গাপুরের আয়তন মাত্র ৬৮৩ বর্গ কিলোমিটার। আর কাপ্তাই হ্রদের আয়তন হচ্ছে ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার। এই জেলায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ, কুটির শিল্পের প্রসার ও বাজারজাতকরণসহ প্রাকৃতিক ক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কাজেই সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে যেমন সকলের এগিয়ে আসা উচিৎ তেমনি শ্লোগান ও লোগো তৈরিতে সকলের চিন্তা-ভাবনা যুক্ত হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ সবার আগে ব্র্যান্ডিংটি মনপুত হলে বাকি কাজ সহজ ও গতিশীল হবে।