বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাঙামাটি গার্লস হাইস্কুলটি সরকারি করেছিলেন

440

॥ বিহারী চাকমা ॥

স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাঙামাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টিকে সরকারিকরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালের ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের রমণীয় উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, আগামী ১-১-১৯৭৪ থেকে রাঙামাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হবে।

জাতির জনকের ঘোষণার মধ্যে দিয়ে রাঙামাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি রাঙামাটি সরকারি বালিকা বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করার ইতিহাস তুলে ধরেন রাঙামাটির বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকার কর্মী মিজ নিরূপা দেওয়ান।

সম্প্রতি রাঙামাটি শহরের নিজ বাসভবনে প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় একথা জানান তিনি। নারী জাগরণ ও শিক্ষায়-দীক্ষায় নারীদের এগিয়ে নিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কতটা যতœশীল ছিলেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাঙামাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে এক আদেশেই সরকারি করে দেয়ায় জাতির জনককে এখনো শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন নিরূপা দেওয়ান।

নিরূপা দেওয়ান বলেন,  ১৯৭৩ সালের ২২ ডিসেম্বরের সন্ধ্যাটা অন্যরকম এক আনন্দময় মুহুর্ত ছিল আমার কাছে। আনন্দ শিহরণ জাগানো সেই সন্ধ্যাটি আজো স্মৃতির পাতায় অম্লান রয়ে গেছে। স্বপ্নের মতো সুন্দর সেদিনের স্মৃতিগুলো, বঙ্গ ভবনের রমণীয় উদ্যানে সেদিনের সন্ধ্যার স্মৃতিটুকু এখনও আমাকে  আবেগাপ্লুত করে দেয়।

বঙ্গ ভবনের রমণীয় উদ্যানে ১৯৭৩ সালের ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন- আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলছি- আগামী ১-১-১৯৭৪ সাল থেকে রাঙামাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হবে।

তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলীকে আমাদের গার্লস স্কুলটি সরকারি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন জাতীয় চার নেতা, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং পার্লামেন্টের সদস্যরাও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

রাঙামাটির তৎকালীন সমাজসেবা অফিসার বিমলেন্দু দেওয়ানের সহযোগিতায় আমরা রাঙামাটি থেকে ২০-২৫ জনের একটি টিম পার্বত্য চট্টগ্রামের তৎকালীন মহিলা সাংসদ সুদীপ্তা দেওয়ানের নেতৃত্বে বিজয় দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যোগদান করতে ঢাকায় গিয়েছিলাম ।

১৯৭২ সালে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম বিজয় দিবস পালন করা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেই অনুষ্ঠানেও আমরা অংশ গ্রহণ করেছিলাম। আদিবাসীদের জুম নৃত্য, পাংখোয়া নাচ, খুমি নৃত্য, গড়াইয়া নৃত্য, বাঁশ নৃত্য, বোতল নাচ ও গান পরিবেশন করেছিলাম। বিশ্বকির্ত্তি ত্রিপুরার বোতল নাচ দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৩ সালে আবার বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে মনে মনে চিন্তা করেছিলাম এবার গেলে আমাদের গার্লস স্কুলটির কথা সরকারের কাছে জানাতে হবে।

বিষয়টি আমাদের তৎকালীন মহিলা সাংসদ সুদীপ্তা দেওয়ানকে বলতেই তিনি স্কুলের সব কাগজপত্র ঠিকঠাক করে গুছিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেন এবং যথাসাধ্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

আমাদের প্রধান শিক্ষিকা কাশ্মীরি বেগমকে বলতেই তিনি খুবই খুশি হলেন। আমার মাথায় এই আইডিয়া আসায় তিনি আমাকে ধন্যবাদ দেন। গার্লস স্কুলটি নিয়ে আমি যা স্বপ্ন দেখেছিলাম, যা আশা করেছিলাম ১৯৭৩ সালের ২২ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় আমার সেই স্বপ্ন ও আশা পুরণ করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

নিরূপা দেওয়ান বলেন, ১৯৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর  বিজয় দিবসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আমরা ঢাকায় গিয়েছিলাম। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আসেননি। সেদিন তার সাথে আমাদের দেখা হয়নি। ১৭ ডিসেম্বর আমাদের মহিলা সাংসদ সুদীপ্তা দেওয়ান জাতির জনকের সাথে দেখা করে কথা প্রসঙ্গে তিনি নাকি বলেছিলেন, স্যার- রাঙামাটি থেকে আমাদের নাচ-গানের শিল্পীরা এসেছে, তারা তো আপনাকে নাচ, গান কিছুই দেখাতে পারলো না।

সুদীপ্তা দেওয়ানের কথা শুনে জাতির জনক নাকি বলছিলেন- কেন দেখাতে পারবে না? ওরা এখানে আসবে, বঙ্গভবনে এসে নাচ-গান করবে। তারপর তার সেক্রেটারিকে নাকি জিজ্ঞেস করেছিলেন,  দেখো তো কবে ফ্রি আছি।

ডায়েরী দেখে নাকি সেক্রেটারি বলেন, ২২ তারিখ ফ্রি থাকবেন স্যার। সুদীপ্তা দেওয়ান  বললেন, স্যার তারা তো ২২ তারিখ পর্যন্ত থাকতে পারবে না। আজই রাঙামাটি চলে যাবে। বাস ভাড়া করে এসেছে, চলে যেতে হবে।

তারা এখানে কোথায় থাকবে?  জাতির জনক নাকি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন- ওরা আমার অতিথি হয়ে থাকবে ২২ তারিখ পর্যন্ত। আমরা প্রথমে উঠেছিলাম শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে। সেখান থেকে সেদিনই অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর আমাদেরকে নাখাল পাড়া এমপি হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। জাতির জনকের অতিথি হিসেবে ১৭ থেকে ২২ ডিসেম্বর আমরা নাখাল পাড়ার এমপি হোস্টেলে ছিলাম।

২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নির্ধারিত সময়ে আমরা বঙ্গভবনে গিয়েছিলাম। বঙ্গভবনের উদ্যানে প্রোগ্রামের মঞ্চ বানানো হয়েছিলো। মঞ্চের সামনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, মন্ত্রী পরিষদের মাননীয় সদস্যবৃন্দ অনেকেই ছিলেন। আমরা জুম নৃত্য দিয়ে নাচ গান শুরু করেছিলাম। অনেক্ষণ ধরে চলে অনুষ্ঠান।

সবশেষে আমি বাঁশ নৃত্য পরিবেশন করি। বাঁশ নৃত্য শেষে আমি মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলাম। যেভাবে সুদীপ্তা দেওয়ান ও আমি দুজনে প্লান করেছিলাম। যাতে কিছু বলার সুযোগ হয়। সে অনুসারে আমি নাচ শেষে মঞ্চে দাড়িয়ে পড়ি।

জাতির জনকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমাকে দেখিয়ে দিয়ে সুদীপ্তা দেওয়ান বলেন, স্যার ওই শিল্পীর আপনার কাছে একটা আর্জি আছে। জাতির জনক বললেন, তাই নাকি? এদিকে এসো মা; কি নাম তোমার মা? আমি বললাম নিরূপা দেওয়ান। দেওয়ান শব্দটা শুনে তিনি সুদীপ্তা দেওয়ানের দিকে তাকালেন।

সুদীপ্তা দেওয়ান বললেন, নিরূপা আমার ভাশুড়ের মেয়ে স্যার। এরপর বঙ্গবন্ধু বলেন, তুমি কোন ক্লাসে পড়ো মা? আমি বললাম, স্যার আমি পড়ি না, পড়াই। বঙ্গবন্ধু হাসলেন, বললেন, এই সুদীপ্তা- নিরূপা কি বলে, ও নাকি পড়ায় ? আমি তো মনে করেছিলাম সে নাইন-টেনের ছাত্রী।

সুদীপ্তা দেওয়ান বললেন, এই তো গত নভেম্বরে নিরূপা গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে স্যার। আমি গ্র্যাজুয়েট শুনে তিনি খুবই খুশি হন। ও তুমি আবার গ্র্যাজুয়েটও? বেশ বেশ ! ঠিক আছে তোমার কি আর্জি বলো? আমি বললাম, স্যার, রাঙামাটিতে আমাদের একটিমাত্র গার্লস স্কুল। সারা পার্বত্য চট্টগ্রামের মেয়েদের জন্য একমাত্র স্কুলটি সরকারি না হওয়ায় আমরা কষ্ট করে চলছি। খুবই অসুবিধায় আছি।

তা যেন সরকারি করা হয় স্যার। আমার কথা শোনার সাথে সাথেই বঙ্গবন্ধু তার শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলীকে বললেন, ইউসুফ, রাঙামাটির নিরূপা দেওয়ান কি বলছে ? স্কুলটি নাকি সরকারি হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রী ইউসুফ আলী বললেন, জ্বি স্যার হয়ে যাবে, স্যার প্রসেস হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বললেন, কি প্রসেস হচ্ছে ? হতে হবে।

  আমি বলছি, রাঙামাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি সরকারি হবে। ঠিক আছে নিরূপা? তুমি কি আমার মুখের কথা বিশ্বাস কর? আমি বললাম ১০০বার করি স্যার। কি যেন তোমাদের স্কুলের নাম? স্যার রাঙামাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

বঙ্গবন্ধুু বললেন,  রাঙামাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ১- ১-১৯৭৪ সাল থেকে  রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হবে। ঠিক আছে নিরূপা! আমি তো খুশিতে নাচবার মত অবস্থায়, বললাম, স্যার এই সুখবরটা কি আমি আমাদের প্রধান শিক্ষিকাকে জানাতে পারি? বঙ্গবন্ধু  বললেন ১০০ বার পারবে।

২৪ ডিসেম্বর আমাদের স্কুলটি সরকারি করণের আদেশ জারি হয়েছিলো। অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র বালিকা বিদ্যালয়টির সরকারিকরণের চিঠি আমরা ঢাকা থেকে রাঙামাটি পৌঁছার আগে এসে গিয়েছিলো।

রাঙামাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলতে গিয়ে নিরূপা দেওয়ান বলেন, সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে তখন কোন গালর্স স্কুল ছিল না। অভিভাবকরা সচেতন ছিলেন না। রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয় বড় অবদান ছিলো রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক জনাব মুজিবুল হকের।

তিনি সর্বপ্রথম রাঙামাটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করেন। মুজিবুল হক হলেন ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর একমাত্র মেয়ের জামাতা। আমার এখনো মনে আছে খাগড়াছড়ি, রামগড়, বান্দরবান থেকে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রাঙামাটি আসতে হতো। তখন সারা পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ছিল একমাত্র পরীক্ষা কেন্দ্র।

মুজিবুল হক স্যার ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখনকার সময় সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকরা অনেক প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান ছিলেন।

সম্মানও যথেষ্ট ছিল।  রাঙামাটিতে কিভাবে একটা বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং  মেয়েদের জন্য একটা আলাদা বিদ্যালয়ের প্রয়োজন সেটা অনেকদিন ধরে চিন্তা করছিলেন তিনি। ১৯৬৩-৬৪ সালের দিকে ডেপুটি কমিশনার সিদ্দিকুর রহমান ও রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুল হক রাঙামাটিত বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।

বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য তৎকালীন সময়ের আর্ট কাউন্সিলের দিকে জায়গা নির্বাচন করা হয় (বর্তমানে যেখানে বিদ্যালয়টি রয়েছে)। সেই জায়গাটির একপাশে ছিল জ্যোতি প্রকাশ তালুকদারের বাসা। তিনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে কর্মরত ছিলেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় জ্যোতি প্রকাশ তালুকদারের জায়গাটি নিয়ে তার পরিবর্তে বিদ্যালয়টির পশ্চিম  দিকে একটি ভালো জায়গা দেখে তাকে দেয়া হয়।

১৫ জানুয়ারি ১৯৬৬ সালে রাঙামাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। মুজিবুল হক স্যার রাঙামাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন। রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি আবার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। ১৯৬৮ সালে এই বিদ্যালয় থেকে প্রথম ব্যাচ এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ১২ জন ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। সেখান থেকে ৮ জন এসএসসি পাশ করেন।

আগামী ১০-১১ মার্চ  দু’দিন ব্যাপী রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত হবে। ১০ মার্চ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী মিঞা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

১১ মার্চ সুবর্ণ জয়ন্তীর সমাপনী অনুষ্ঠানে  পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এতে বিশেষ অতিথি থাকবেন দেশের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষকগণ ও সহ¯্রাধিক প্রাক্তন ছাত্রীর অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। বর্তমানে রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৪’শ ছাত্রী অধ্যয়নরত আছে।

পুনশ্চঃ জাতির জনকের সাথে সামনাসামনি কথা বলার সুযোগ পাওয়া এবং তাঁর কাছ থেকে রাঙামাটি বালিকা বিদ্যালয়টিকে রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা আদায় করে নেয়ার কথা তিনি কোথাও বলেননি। বলার সুযোগও হয়নি বলে জানান  নিরূপা দেওয়ান। এই স্মৃতিমধুর ঘটনা, নিজের জীবনে লুকিয়ে থাকা না বলা কথাগুলো তুলে ধরার কথা শুনে প্রতিবেদক ধন্যবাদ জানান নিরূপা দেওয়ান।

তিনি বলেন, আমাদের গার্লস স্কুলটি সরকারি হওয়ার ২ বছর পরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার মধ্যে দিয়ে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়। এছাড়া সরকারি চাকুরিজীবি হিসেবে নানা সীমাবদ্ধতাও ছিল। ।

১৯৫২ সালে রাঙামাটির পুরাতন পাথরঘাটায় জন্ম গ্রহণ করেন শিক্ষাবিদ নিরূপা দেওয়ান। তিনি রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে ৩০ বছর শিক্ষকতা করেন। মাঝখানে সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার তাইতং পাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন প্রায় ১১ মাস।

শিক্ষকতা জীবনে বহু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বহু স্মরণীয় ঘটনার সাক্ষীও হয়েছেন। ২০০৫ সালে তিনি রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৫ সালের ৭ জুলাই থেকে ২০০৯ সালের ২৯ মার্চ পর্যন্ত রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সুনামের সাথে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন এবং সেখান থেকেই অবসরে যান।

অবসরের পর বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে ২৩ জুন ২০১০ খ্রিঃ যোগদান করে ২২ জুন ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে সদস্য হিসেবে  দায়িত্ব পালন করেন।