বান্দরবানের প্রাকৃতিক বন থেকে অবাধে কেটে ফেলা হচ্ছে নিষিদ্ধ চাম্পাফুল গাছ

628

॥ নুরুল কবির-বান্দরবান ॥

পাচারকারী চক্রের লোভি থাবায় বান্দরবানের বন থেকে ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে মুল্যবান প্রজাতির চাম্পাফুল গাছ। একশ্রেণির অতিলোভি বন কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় গভির বন থেকে কেটে আনা মূল্যবান চম্পাফুল গাছগুলো প্রতিদিন ট্রাকে ভরে পাচার হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়, মজুদ করা হচ্ছে জেলা সদরে। এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও পদক্ষেপ কামনা করেছেন বান্দরবানের সচেতন মহল।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি এবং দুর্গম থানচি উপজেলার দুর্গম প্রাকৃতিক বনের কর্তন নিষিদ্ধ শতবর্ষী চাম্পাফুল গাছ (মাদার ট্রি হিসেবে স্বীকৃত) বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট রেন্জের অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় প্রকাশ্যেই কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। গত একমাস ধরে প্রতিদিনই কর্তন করা হচ্ছে ৪/৫টি করে আস্ত চাম্পাফুল গাছ। কর্তিত গাছ থেকে রদ্দা করে ১৫০ থেকে ২০০ ঘনফুট কাঠ পাচ্ছে তারা। রদ্দা তৈরি করার করছে রোহিঙ্গাসহ শতাধিক শ্রমিক।

জেলার রুমা উপজেলার সাইজাম এলাকার  পাইক্ষ্যং বন রেঞ্জভূক্ত খুমক্ষ্যং মৌজাসহ দুর্গম বনাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে সৃজিত শতবর্ষী চাম্পাফুল গাছ নিধনযজ্ঞ চলছেই। একইভাবে রোয়াংছড়ি এবং দুর্গম থানচি উপজেলার বন রেনজ্ গুলোর আওতাভুক্ত থাকা শতবর্ষী বৃক্ষ চাম্পাফুল গাছও কর্তনযজ্ঞ চলছে।

এসব এলাকার সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে রোববার সকালে অভিযোগ করা হয়- দুই শতাধিক বড় আকারের করাত ব্যবহার করেই দুর্গম বনের কর্তন নিষিদ্ধ চাম্পাফুল গাছ কেটে রদ্দা তৈরি করে চোরাই পথে পাচারের জন্যে নানাস্থানে মজুদ করা হচ্ছে।

বিশেষ করে পাইন্দু ইউনিয়নের সাইজাম এলাকার আর্তাহা পাড়া মাঠের আশেপাশেই বিপুল পরিমাণ কর্তন নিষিদ্ধ চাম্পাফুল কাঠের মজুদ গড়ে তোলা হয়েছে। রাতের আধাঁরে এসব কাঠ পাহাড়ি চোরাই পথে নিয়ে আসা হয় সাংগু নদীর তীরে। সেখান থেকেই নদী ও সড়কপথে নানাকুশলে অন্য বৈধকাঠের সাথে জেলা সদরে নিয়ে আসা হয়।

সেইসব অবৈধ ও কর্তন নিষিদ্ধ চাম্পাফুল গাছের রাদ্দাসমুহ ক্যচিংঘাটা ও কালাঘাটা ‘স’মিলগুলোতে গোপনে মজুদ রাখা হয় এবং সুযোগ বুঝেই এসব কাঠ নানাভাবে জেলার বাইরে পাচার করা হয়।

এসব চাম্পাফুল গাছের রদ্দা জেলার বাইরে পাচার কাজে পরোক্ষ সহায়তা রয়েছে থানচি,রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সাংগু নদীর তীরে স্থাপিত থনাচি, বলিপাড়া, গালেংগ্যা, কৈক্ষ্যংঝিরি, মুরুংগু বাজার, ঘেরাও, বেতছড়া ও তারাছা, সাইজাম বনজদ্রব্য পরীক্ষণ ফাঁড়ির কর্মকর্তাদের। ঘনফুটভিত্তিক মোটা অংকের চাঁদা প্রদান করেই অবৈধ কাঠের সাথে নিষিদ্ধ চাম্পাফুল গাছ পাচার হয়ে আসে জেলা সদরের ওইসব ‘স’ মিলে।

এ ব্যাপারে রোববার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ক্যাচিং ঘাটার কাঠ ব্যবসায়ী সালাহউদ্দিন সাংবাদকিদের জানান, রুমার আর্থাহা পাড়া এলাকায় তাদের জোত রয়েছে, জোতের ভিতরেই কিছু চাম্পাফুল গাছ আছে।

সেগুলোই কর্তন করে জেলায় নিয়ে আসা হচ্ছে। অপর দিকে ক্যাচিং ঘাটার কাঠ ব্যবসায়ী মহিউদ্দীন এর সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাম্পাফুল গাছ বিষয়ে অসীক্বার করেন। বান্দরবান সদর এবং চেমিং রেঞ্জ এলাকা থেকেই কোন প্রকার বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই প্রকাশ্যে বনজ সম্পদ কর্তন করে পাচার কাজ অব্যাহত রয়েছে। সংঘবদ্ধ গাছ পাচারকারী চক্র বন বিভাগের সহায়তায় এসব চোরাই কাজ চালাচ্ছে।

পাইক্ষ্যং, সদর এবং চেমি  বন রেন্জ সমুহের দায়িত্বপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের সাথে রোববার সকালে অফিসে গিয়ে না পেয়ে টিেলফোনে যোগাযোগ করে এসব বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার চেষ্টা করা হলে তিনি কেবল জবাব দিয়ে বলেন অফিসের কাজে ব্যস্ত আছেন,পাইক্ষ্যং রেন্জের দায়িত্বভার অন্যজনের কাছে দেয়ার প্রস্তুতি চলছে, এখন কিছু বলা যাবে না।

এদিকে বন বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা জানান, জেলার দুর্গম ও প্রাকৃতিক বনে সৃজিত চাম্পাফুল গাছ কর্তন, পরিবহণ ও ব্যবহারের ওপর সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সে কারণে ব্যক্তি মালিকানার জোতেও চাম্পাফুল গাছের কোন প্রকার পারমিট ইস্যু করা বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় এই প্রজাতির গাছ কর্তন পরিবহণ সম্পুর্ণভাবে নিষিদ্ধ।

বন কর্মকর্তারা বলেন, সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে ক্যচিংঘাটা এলাকার একটি স মিল থেকে বিপুল পরিমাণ কর্তন ও পরিবহণ নিষিদ্ধ চাম্পাফুল কাঠ জব্দ করা হয়।