॥ সুপ্রিয় চাকমা শুভ ॥
পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ এখন রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের অডিটোরিয়াম। সাংস্কৃতিক অডিটোরিয়াম নাকি পরিত্যক্ত ভবন তা দূর থেকে বোঝা যায় না। অডিটোরিয়ামের ভেতর ময়লা আবর্জনায় আর নড়বড়ে অবস্থায় ছাদের সিলিং ভেঙ্গে হেলে পড়েছে। পরিত্যক্ত এ অডিটোরিয়ামটি সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। পরিত্যক্ত হয়েও ভাড়ায় অনুষ্ঠান চলছে অডিটোরিয়ামের ভেতর। যদিওবা রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রুনেল চাকমা বলছেন,ভবনটি ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের চারপাশ ঝোপ-ঝাড়ে পরিপূর্ণ। কয়েকটি জাতি সম্প্রদায়ের নির্মিত ভাষ্কর্যগুলোও রং না করায় জং ধরেছে। সংস্কারের অভাবে এভাবে পড়ে আছে বহুবছর। অডিটোরিয়ামের ছাদের সিলিং ভেঙে হেলে পড়েছে। হেলে পড়া সিলিংয়ে চলছে ফ্যান। টয়লেটের অবস্থাও নাজুক। অডিটোরিয়ামের ছাদের বিভিন্ন স্থানে সিলিং ভেঙ্গে পড়েছে। অন্যদিকে অডিটোরিয়ামের ভেতর চলছে অনুষ্ঠান। দেয়ালে ধরেছে জং। ছাদের উপরের রদে ধরেছে মরিচা। যেকোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। অডিটোরিয়ামের ভেতর ভাড়ায় চলছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদযাপন। দুর্ঘটনা ঘটলে এ দ্বায় কে নিবে এমন প্রশ্নে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রুনেল চাকমা বলেন, ‘অডিটোরিয়াম ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আমরা ভাড়া দিইনি। জোর করে অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়ে থাকে’।
এদিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় ভিডিও নির্মাণে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারলেও তা দৃশ্যমান নয় বলে মন্তব্য করেছেন, রাঙামাটি জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক লতিত সি চাকমা। তিনি বলেন, ভারতের মিজোরামে চাকমা অটোনোমাস কাউন্সিল(সিএডিসি) যে পরিমাণে ভিডিও নির্মাণে স্পন্সর করে সে অনুযায়ী রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের কর্মকান্ড অত্যান্ত নাজুক অবস্থা। তিনি আরো বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট হচ্ছে জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান। তাদের কাজই হচ্ছে জাতি ও জনস্বার্থ রক্ষা করা। কিন্তু তাদের মধ্যে যদি দুর্বল নেতৃত্ব ও দায়িত্বশীলতার হীনতা থাকে তাহলে সেসব রক্ষা কখনো সম্ভব নয়। অডিটোরিয়ামে যে কেউ ভাড়ায় অনুষ্ঠান করবে। সে অনুসারে প্রতিষ্ঠানে সব ধরনের প্রস্তুত হয়ে থাকতে হবে। পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হওয়া অত্যান্ত দূঃখজনক।
রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন,‘ অনেকদিন হলো সিলিং হেলে পড়ে আছে। যে কেউ এখানে মারা গেলে তারপরে তো কর্তৃপক্ষ এটির ব্যবস্থা নিবে’।
এবিষয়ে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের পরিচালক ( ভারপ্রাপ্ত) রুনেল চাকমা বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রনালয়ে সাথে কথা বলেছি। মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধানুযায়ি এ মাসের শেষের দিকে মন্ত্রী সচিব আসার কথা। তিনি আরো বলেন, ‘অডিটোরিয়াম পরিত্যক্ত হওয়াতে এক সংস্কার করতে হবে নয়তো একেবারে ভেঙে নতুন করে তুলতে হবে।তবে অডিটোরিয়ামটি পরিত্যক্ত ও খারাপ অবস্থা হওয়াতে এখন ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান রুনেল চাকমা। অপরদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১০ সেপ্তেম্বর রাঙামাটির স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে ৪ হাজার ৬শ টাকা দিয়ে ভাড়া দেয় কর্তৃপক্ষ।
ভাষ্কর্যগুলো বহুবছর ধরে রং করা হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বর্ষাকাল চলছে। বর্ষাকাল শেষ হলেই ইন্সটিটিউটের সব ভাষ্কর্যগুলো রং করা হবে।
রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য ও রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের আহ্বায়ক রেমলিয়ানা পাংখোয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অডিটোরিয়ামটি ভেঙে নতুন করে সেখানে ‘অফিস কাম মাল্টিফাংসনাল ভবন’ নির্মাণ করা হবে। সেকারণে অডিটোরিয়াম ভবনটি সংস্কার না করে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মন্ত্রনালয় থেকে সচিব আসার কথা। করোনার কারণে আসতে পারছেন না।’