বিশেষ প্রতিবেদন- ১০ এপ্রিল ২০১৭, দৈনিক রাঙামাটি: মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন-সার্বভৌম এ দেশ, সোনার বাংলা দেশ। কথাছিল ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময় অর্জিত এ দেশ পরিচালিত হবে- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে লালিত হয়ে। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে বাঙালির সে আশা ভূলুনঠিত হয়েছে। দীর্ঘ ২১শ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে সে ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে আসতে। তার পরও আশাহত হতে হচ্ছে জাতি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরে পেলেও গণতন্ত্র ভূলুনঠিত। এ আবস্থায় বাঙালি জাতিকে ঐক্য বদ্য করতে বঙ্গরতœ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন (আবু) গঠন করেছেন ‘বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি)’। তিনি এ সংগঠনের সভাপতি। তার সে ঐক্য প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলো।
মুক্তিযুদ্ধ- ১৯৭১: ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন-সার্বভৈৗম বাংলাদেশ পেয়েছি। এ যুদ্ধে আমরা হারিয়েছি ৩০ লক্ষের অধিক মা ও ভাই-বোনদের। সম্ভ্রম হারিয়েছেন ৩ লক্ষের অধিক মা ও বোন। জন্ম নিয়েছে ৫০ হাজার যুদ্ধ সন্তান, যাদেরকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ১ কোটিরও অধিক মানুষ দেশান্তরিত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। অভ্যন্তরীণভাবে ৫০ লক্ষেরও অধিক মানুষ গৃহহারা হয়েছিলেন। এ যুদ্ধে ৬ হাজার পাকসেনা, ৭ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও ৮ হাজার ভারতীয় সেনা নিহত হন। এমন টালমাটাল পরিবেশে জনগণ আংশিকভাবে সামাজিক ন্যায় বিচার ও রাজনৈতিক অধিকার লাভ করেছে বটে, কিন্তু অদ্যাবধি আমরা অর্থনৈতিক মুক্তি পাইনি।
আওয়ামী লীগের সাড়ে ৩ বছরের শাসন: আমরা আশা করেছিলাম স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে যে সরকার প্রতিষ্ঠা হবে তা হবে গণমানুষের সরকার, কিন্তু আমরা দেখলাম ১৯৭২ খ্রিঃ থেকেই যে সরকার গঠিত হলো তা সম্ভবত: গণমানুষের সরকার নয়। বুর্জোয়া অর্থনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী ধনী শ্রেণীর সরকার। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহযোগীদের মধ্যে মার্কসবাদে বিশ্বাসী সিরাজুল আলম খান; চার খলিফার ২ খলিফা খ্যাত আ.স.ম আব্দুর রব ও শাজাহান সিরাজসহ ছাত্রলীগের আপসহীন নেতা কর্মীদের অনেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সরকারের রূপরেখা ও কর্মকান্ড মেনে নিতে পারেননি। তারা গঠন করলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। আওয়ামী লীগ সরকারের রক্ষীবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের নির্যাতনে প্রাণ হারালেন জাসদের ১৬/১৭ হাজার উঠতি বয়সের তরুণ দেশপ্রেমিক কর্মী। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের দমন পীড়নকে রুখে দেয়ার জন্য জাসদ তৈরি করলো শুরুতে মেজর জলিলের ও পরবর্তীতে কর্ণেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা। রক্ষীবাহিনীর ও সরকারের অন্যান্য পেটোয়া বাহিনীর অত্যাচারে ১৯৭৪ সালে জাসদের প্রকাশ্য রাজনীতি কার্যতঃ বন্ধ হয়ে গেল। নেপথ্য থেকে ভেসে এলো এক বিপ্লবী অনুপ্রেরণার মন্ত্র। ‘দেশে এখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, এখানে সংগ্রাম অর্থ যুদ্ধ আর সংগঠন মানে সেনাবাহিনী’। এ শ্লোগানের রাজনৈতিকরূপ পরিগ্রহ করলো “বিপ্লবী গণবাহিনী”। গণবাহিনী, কমিউনিষ্ট ও সর্বহারা পার্টির সশস্ত্র পাল্টা প্রতিরোধে ১০/১২ হাজার আওয়ামী লীগের উঠতি বয়সের কর্মী প্রাণ হারালেন। প্রাণ হারালেন আওয়ামী লীগের ৬ জন সাংসদ। তদ্ব্যাতীত বিপ্লবী সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টি বাঙালী জাতীয় জীবনে এক কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। বিপ্লবী সিরাজ সিকদার, মাও সে তুং এর ষ্টাইলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে শ্রেণী শত্রু হিসেবে চিহ্নিত ধনীক শ্রেণীর দোসরদের ও সন্ত্রাসীদের খতম করা শুরু করলেন। এদেরকে দমনার্থে আওয়ামী লীগ সরকার রক্ষীবাহিনী নিয়োগ করলো। এতে প্রাণ হারালেন সর্বহারা পার্টির প্রায় ২/৩ হাজার উঠতি
বয়সের রাজনৈতিক কর্মী। জাসদও তার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ক্যাডারদের হত্যায় মেতে উঠলো। তেমনিভাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও রক্ষীবাহিনী তার প্রতিপক্ষ জাসদের রাজনৈতিক ক্যাডারদের হত্যায় মেতে উঠলো। অপরপক্ষে কমিউনিষ্ট পার্টির একাংশ (হক-তোয়াহা গ্রুপ) বাম রাজনীতির কণ্ঠস্বর নোয়াখালীর মোহাম্মদ তোয়াহা এবং পাবনার আব্দুল হক মার্কসবাদী সমাজতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণায় লেনিন-স্ট্যালিন স্টাইলে আন্ডার গ্রাউন্ড রাজনীতিতে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে শ্রেণী শত্রু খতমে মেতে উঠলেন, সাথে যোগ দিলেন দেবেন শিকদার ও ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন; তাদেরকেও দমনার্থে আওয়ামী লীগ সরকার রক্ষীবাহিনী নিয়োগ করলো। এতে প্রাণ হারালেন কমিউনিষ্ট পার্টির প্রায় ৩/৪ হাজার উঠতি বয়সের কর্মী। এভাবে রাজনীতির ঘাত-প্রতিঘাতে কালের ¯্রােতে হারিয়ে গেলেন বাংলাদেশের উঠতি বয়সী সম্ভাবনাময় ৩৩/৩৪ হাজার রাজনৈতিক কর্মী। যাদের মধ্যে সম্ভবতঃ ২০/২১ হাজারই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সূর্য্য সন্তান। আওয়ামী লীগ সরকার জাসদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে জেলখানা ভরে ফেললো। রক্ষীবাহিনী সর্বশক্তি নিয়োগ করলো এদের দমনার্থে। সর্বোপরি দেশের রাজনীতি এক কঠিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করলো। বিপ্লবী সিরাজ সিকদারকে বন্দী করে হত্যা করা হলো। রাজনীতির এমন কন্টকাকীর্ণ পরিস্থিতিতে ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২৯০টি আসনে জয়লাভ করলো। সম্ভবতঃ ফলাফল পাল্টিয়ে হারানো হল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী)-র সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. আলীম আল রাজী ও জাসদের সভাপতি মেজর এম.এ. জলিলসহ ১০/১২ জনকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সম্ভবতঃ এতদিনে বুঝতে পারলেন ‘দেশ বুর্জোয়াদের হাতে চলে গেছে, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা পাওয়ায় আংশিক সামাজিক ন্যায় বিচার ও রাজনৈতিক অধিকার আমরা পেয়েছি। কিন্তু জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি আজও আসেনি।’ জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করে গঠন করলেন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী পার্টি-বাকশাল। বাকশালের কার্যক্রম চালু করতে না করতেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঢাকা ব্রিগেডের ল্যান্সার রেজিমেন্টের লে. কর্ণেল ফারুক রহমান ও আর্টিলারী রেজিমেন্টের লে. কর্ণেল আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমদের নেপথ্যে পরিচালনায় সেনাবাহিনীর একটি অংশের আক্রমণে ১৫ আগষ্ট, ১৯৭৫ ভোররাতে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও শেখ মনিসহ সপরিবারে নিহত হলেন, প্রাণ হারালেন রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব কর্ণেল জামিল। এভাবে কালের ¯্রােতে ভেসে যায় জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির কর্মসূচি।
খন্দকার মোশতাক আহমদের সরকার গঠন: ঐ সময়ে আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলো। সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল শফিউল্যাকে সরিয়ে দিয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করা হলো। ইতোমধ্যে মোশতাক আহমদ তাঁর ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য ০৩ নভেম্বর ভোররাতে রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল সিপাহীকে পাঠালেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, মন্ত্রীপরিষদের সদস্য ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ.এইচ.এম কামরুজ্জামানকে হত্যা করার জন্য।
মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল: রাজনীতির এমন ঘাত-প্রতিঘাতে তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, কর্ণেল সাফায়াত জামিল, কর্ণেল নওয়াজীশ, কর্ণেল হায়দার, কর্ণেল হুদা প্রমুখের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ০৩ নভেম্বর, ১৯৭৫ ভোররাতে এক রক্তপাতহীন অভ্যূত্থান সংঘটিত হলো। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে সমর্থন দেয়ার জন্য কর্ণেল নওয়াজীশের নেতৃত্বে বগুড়া সেনানিবাস থেকে আগত সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট সংসদ ভবন সংলগ্ন এলাকায় ঘাটি স্থাপন করলো। মে. জে. জিয়াউর রহমানকে তাঁর বাসভবনে বন্দী করা হলো। বিমানবাহিনী প্রধান এম.জি তাওয়াব এবং নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল মোশাররফ হোসেন খান অভ্যূত্থানকে পূর্ণ সমর্থন দিলেন। ক্ষমতার দ্বন্দ্বের এমন চরম মুহুর্তে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীর আপোস রফায় ট্যাংক বাহিনী দ্বারা পরিবেষ্টিত বঙ্গভবনে অবস্থানকারী ১৫ আগষ্ট, ১৯৭৫ ক্যুতে অংশগ্রহণকারী লে. কর্ণেল ফারুক ও লে. কর্ণেল রশিদসহ তাদের অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তারা দেশ ত্যাগ করলেন। খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলো।
৭ নভেম্বর ১৯৭৫ জাসদের নেপথ্যে নেতৃত্বে সিপাহী বিপ্লব: বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক করা হলো। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে মে. জে. পদে পদোন্নতি দিয়ে সেনাপ্রধান করা হলো। মে. জে. খালেদ মোশাররফকে উপ-প্রধান সামরিক প্রশাসক করা হলো। এ সময় খালেদ মোশাররফের একজন অধঃস্তন সেনা কর্মকর্তা ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার জন্যে মে. জে. জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাক আহমদসহ আরও ৪ জন রাজনীতিক ও ১৩ জন সেনা কর্মকর্তা অর্থাৎ মোট ১৯ জনের একটি তালিকা মে. জে. খালেদ মোশাররফের হাতে দিয়ে এদেরকে হত্যা করার অনুমতি চাইলেন। খালেদ মোশাররফ বললেন, জিয়া আমার বন্ধু। তাঁকে হত্যা করা হলে তোদেরকে পাখির মত গুলি করে মারব। ঐ সেনা কর্মকর্তা খালেদ মোশাররফকে স্যালুট দিয়ে প্রস্থান করলেন। গৃহবন্দী জিয়াউর রহমানের অনুরোধে ৭ নভেম্বর, ১৯৭৫ ভোররাতে জাসদ তথা কর্ণেল তাহেরের নেতৃত্বে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সহযোগিতায় ১৬৫ জন সুবেদার মেজরের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে সেনাবাহিনীর সিপাহী বিপ্লবে মুক্তিযুদ্ধে ক ফোর্সেস এর অধিনায়ক খালেদ মোশাররফ ক্ষমতাচ্যুত হলেন। জিয়াউর রহমানকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে আনলেন সিপাহীরা। এহেন অবস্থায় মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ, কর্ণেল হায়দার ও কর্ণেল হুদা সংসদ ভবন সংলগ্ন কর্ণেল নওয়াজীশের নেতৃত্বে পরিচালিত তাদের বিশ্বস্ত সেনা ইউনিটে আশ্রয় নিলেন।
মে. জে. খালেদ মোশাররফের পতন; জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আরোহন ও সাড়ে ৪ বছরের সামরিক গণতন্ত্র: জাসদের ডাকসাইটের সামরিক নেতা জিয়াউর রহমান মুক্তি পেয়েই নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নেড়ে ব্রিগেডিয়ার পরবর্তীতে মে. জে. খালেদ মোশাররফ, কর্ণেল হায়দার ও কর্ণেল হুদাসহ অনেককে হত্যা করে সেনাবাহিনীতে ক্ষমতা সংহত করলেন এবং ডেপুটি চীফ মার্শাল ‘ল’ এডমিনিষ্ট্রেটর হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসলেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি রাষ্ট্রপতি ও চীফ মার্শাল “ল” এডমিনিষ্ট্রেটর বিচারপতি সায়েমকে সরিয়ে নিজে রাষ্ট্রপতি ও চীফ মার্শাল ল বনে গেলেন। সম্ভবতঃ জিয়াউর রহমানের বিশ্বাসঘাতকতায় জাসদের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে জাসদ ক্ষমতা নেয়ার জন্যে পুনরায় সিপাহী বিদ্রোহ করতে চেষ্টা চালায়। রাজনীতির এমন ঘাতপ্রতিঘাতে জিয়াউর রহমান কর্ণেল তাহেরকে কোর্ট মার্শাল করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করলেন। সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের মাধ্যমে জাসদের মেজর জলিল, আ.স.ম. আব্দুর রব, শাজাহান সিরাজসহ ৯ জন নেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করেন। সময়ের আবর্তনে অল্প সময়ের মধ্যে এ সকল নেতৃবৃন্দ মুক্তি পান। এ সময়ে বিমানবাহিনীর সদস্যরা মনে করলেন সিপাহী বিদ্রোহের মাধ্যমে তাঁরা যে আশার আলো দেখেছিলেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কর্মকান্ডে তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তাঁরা জিয়াকে হত্যা করার জন্য বিদ্রোহ করলেন। এ ঘটনার পূর্বেই জিয়া তা জানতে পেরে সেনাবাহিনীর মিরপুরস্থ ব্যাটালিয়নের একজন মেজরের নেতৃত্বে তাঁদেরকে দমনে পাঠালেন। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বহু সেনা প্র্ণা হারালেন। অবশেষে পরিস্থিতি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসে। বিমানবাহিনীর বহু সদস্য গ্রেফতার হলেন। জিয়া তাদেরকে কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করলেন।
মে. জে. আবুল মঞ্জুরের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ও জিয়াউর রহমানের পতন: ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরের কথিত পরিচালনায় কর্ণেল মতি, কর্ণেল মাহবুব ও কর্ণেল ফজলে এলাহীর নেতৃত্বে সংঘটিত সামরিক ক্যুর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হলেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঢাকা সেনানিবাস থেকে সমর্থন না পাওয়ায় মঞ্জুরের কথিত সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থতায় পর্যবুসিত হলো। পালিয়ে যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম সেনানিবাস এলাকায় কর্ণেল মতি ও কর্ণেল মাহবুব সেনা অফিসার/সদস্যদের পাল্টা আক্রমণে নিহত হলেন। ফটিকছড়িতে জে. মঞ্জুর গ্রেফতার হলেন। বন্দী অবস্থায় তাঁকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ফায়ারিং রেঞ্জ এলাকায় হত্যা করা হলো।
এ সামরিক ক্যুর ৪ দিন পূর্বে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে এক সামরিক কুঁচকাওয়াজে তৎকালীন সেনাপ্রধান হোসেইন মুহাম্মদ এরশাদ অংশগ্রহণ করেন। তিনি মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরের বাসায় সকালের নাস্তা খান। ঐ সময় জেনারেল মঞ্জুর আর এরশাদ ব্যতীত অন্য কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। সেনা অফিসার মেসে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন। এ সময়ও কর্ণেল মতি ব্যতীত অন্য কেউ উপস্থিত ছিলেন না। বাজারে গুঞ্জন আছে, এরশাদ ক্ষমতায় আসার জন্য সম্ভবতঃ এক ঢিলে ২ পাখি মেরেছেন। জিয়া হত্যার বিচারে কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে একজন ব্রিগেডিয়ারসহ কর্ণেল, মেজর, ক্যাপ্টেন ও লেফটেন্যান্ট লেভেলের ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হলো। মঞ্জুর হত্যা মামলা অদ্যাবধি আদালতে চলমান রয়েছে। এভাবে বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি কালের ¯্রােতে হারিয়ে গেল।
মে. জে. হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ক্ষমতায় আরোহন- এরশাদের ৯ বছরের অর্থাৎ সাড়ে ৪ বছরের সামরিক গণতান্ত্রিক শাসন ও জাতীয় পার্টির সাড়ে ৪ বছরের শাসন: সময় পেরিয়ে যায়, এক রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্ষমতায় আসেন মে. জে. হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এরশাদ সাহেবের ৯ বছরের শাসনামলের মধ্যে সাড়ে ৪ বছরের সামরিক শাসন ও সাড়ে ৪ বছর ছিল জাতীয় পার্টির শাসন। ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। আওয়ামী লীগ উক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও বিএনপি নির্বাচনে আসলো না। এ সময়ে বাংলাদেশে ভোট জালিয়াতির দ্বার উন্মুক্ত হয়। ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে পৌঁছানোর পূর্বেই অনেকের ভোট সীল মেরে তাঁর রাজনৈতিক ক্যাডাররা জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে ভোট বাক্স ভরে ফেলে। তাতেও আশানুরূপ আসন না পাওয়ায় জাতীয় সংসদের ৪৪ নির্বাচনী এলাকার ফলাফল পাল্টে দিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের জেতানো হয়। ড. কামাল হোসেনসহ এসব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতেছিল। সূত্র ঐ সময়ের সাপ্তাহিক পত্রিকা “যায় যায় দিন”। এ রিপোর্ট লেখায় যায় যায় দিন এর সম্পাদক সাংবাদিক শফিক রেহমানকে লন্ডনে পালিয়ে গিয়ে ৬ বছরের নির্বাসনে থাকতে হলো। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৮ দলীয় জোট, বিএনপি-র নেতৃত্বে ৭ দলীয় জোট এবং শ্রী নির্মল সেনের নেতৃত্বে বাম ৬ দলীয় জোটের আন্দোলনের মূখে এরশাদ সাহেব ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়লেন। ইতোমধ্যে এরশাদ সাহেব দেশ চালালেন প্রায় ৯ বছর। কিন্তু স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ও উদ্দেশ্য বাংলার জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি ধরাছোয়ার বাইরেই থেকে যায়।
আমরা স্বাধীনতাপূর্ব পাকিস্তানের ২২ পরিবারের শোষণের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতাম। এখন স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ৫/৬ হাজার পরিবার সৃষ্টি হয়েছে, যাদের নিকট দেশের সম্ভবতঃ প্রায় অর্ধেক অর্থ-সম্পদ চলে গেছে। ধনী-গরীবের ব্যবধান আকাশচুম্বী। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয় দেখানো হয় ৫/৬ হাজার পরিবারের আয়ের সাথে গড় করে ১৬ কোটি মানুষের আয়। অর্থাৎ একজন ধনী ব্যক্তি যদি বছরে ৩০ কোটি টাকা আয় করেন অন্য একজন গরীব মানুষ মাসে ৫ হাজার অর্থাৎ বছরে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন তবে সেক্ষেত্রে ২ জনের প্রত্যেকের গড় আয় দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৩০ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ঐ গরীব মানুষটিরও বছরে আয় দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৩০ হাজার টাকা। অথচ তিনি বছরে আয় করেন মাত্র ৬০ হাজার টাকা।
বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের আগমন; বিএনপি-র দ্বিতীয় বারের মত ৫ বছরের শাসন; ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম গঠন: ক্ষমতায় আসলেন মাননীয় প্রধান বিচারপতি সাহাবউদ্দিন। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ক্ষমতায় এলো বিএনপি, নির্বাচনে হেরে গেল আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা বললেন নির্বাচনে সুক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. কামাল হোসেন বললেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে সুষ্ঠু হয়েছে। এ নিয়ে ড. কামাল হোসেনের সাথে টানাপোড়েন হওয়ায় ড. কামাল হোসেন রাগ করে ১৯৯৩ সালের ২৯ আগষ্ট আওয়ামী লীগের একাংশ, পঙ্কজ ভট্টাচার্জের নেতৃত্বে ন্যাপের একাংশ, সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে কমিউনিষ্ট পার্টির একাংশ ও শাজাহান সিরাজের নেতৃত্বে জাসদ (সিরাজ) এর সমন্বয়ে গঠন করলেন গণফোরাম। আজকের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, ব্যারিষ্টার আমীরুল ইসলাম গণফোরামে ছিলেন, পরে আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। শেখ হাসিনার বক্তব্যও যেমন সত্য, ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যও তেমনি সত্য। কারণ আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি বেশী করে ধনী ব্যবসায়ীদের নির্বাচনে নমিনেশন দিয়েছিল। তাঁরা নির্বাচনে অনেক টাকা খরচ করেছেন। বিএনপি নির্বাচনে বেশী টাকা খরচ করতে পারায় তাঁরা জনগণকে বেশী করে প্রভাবিত করতে পেরেছিল, বিধায় বিএনপি জয়ী হয়েছিল। ড. কামাল হোসেন অত্যন্ত ভদ্রলোক। তিনি সম্ভবতঃ বিষয়টি বুঝতে পারেননি। তাই তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে। অন্যান্য দলের নেতারা অর্থাভাবে জনগণকে প্রভাবিত করতে পারেননি। তাই নির্বাচনে তাঁরা আশানুরূপ আসন পাননি। এবারো জিতে গেলো ধনীক শ্রেণীর ব্যবসায়ী রাজনীতিকরা, হেরে গেলেন জনগণ, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি ভূলুণ্ঠিত হলো। এভাবে বেগম খালেদা জিয়া গতানুগতিক রাষ্ট্র পরিচালনা করলেন ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় জাতীয় সম্পদ লুটপাটের সাধারণ ধারা অব্যাহত রলো। রাষ্ট্রে সুশাসন কায়েম করতে ব্যর্থ হলেন বেগম খালেদা জিয়া।
দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আরোহন ও তাদের ৫ বছরের শাসন: আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে মাঠে নামলো। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি এককভাবে নির্বাচন করে ৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলো। আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের মূখে বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন দিলেন। নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৪৪ আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলো। বিএনপি পেল ১১৬টি আসন। এবারো জনগণ হেরে গেলেন। জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য যে ধরণের সরকার দরকার তা বাংলাদেশে কায়েম হলোনা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চললো জাতীয় সম্পদ লুটপাট। ২০০১ সালে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো। জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি এবারেও ভূলুণ্ঠিত হলো।
বিএনপি-র তৃতীয় বারের মত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আরোহন ও তাদের ৫ বছরের শাসন: এমন অবস্থায় ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। নির্বাচনে বিএনপি ১৯৭ ও ৩৩ মহিলা আসনসহ ২৩০ আসন লাভ করতঃ নিরঙ্কুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলো। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চললো জনগণের সম্পদ লুটপাট করার মহোৎসব। বাজারে চাওর আছে, মন্ত্রী পরিষদের বেশীরভাগ সদস্যকে তারেক রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হাওয়া ভবনে নিয়মিত লুটপাটের ভাগ দিতে হতো। ২০০২ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত পরপর ৪ বার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো। এবারো জিতে গেল ধনীক শ্রেণীর ব্যবসায়িক রাজনীতিকরা, হেরে গেলেন জনগণ, এবারো জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি ধরা-ছোয়ার বাইরেই থেকে যায়। দিনে-দুপুরে হত্যা করা হলো সৎ সাংসদ আহসান উল্যা মাষ্টার ও অর্থমন্ত্রী এ.এম.এস. কিবরিয়াসহ আরও অনেককে। ২১ আগষ্ট, ২০০৪ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এ আওয়ামী লীগের জনসমাবেশে গ্রেণেড ও গুলি চালানো হলো। মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪জন নিহত হলেন। আহত হলেন আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ঢাকার ১ম মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ প্রায় দু’শতাধিক নেতা-কর্মী। পরবর্তী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের রাজপথে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট ও বিএনপির নেতৃত্বে ৪ দলীয় জোট সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে প্রায় ৭০ জন নিহত হন। এহেন অবস্থায় বিএনপি দলীয় রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এরশাদ, বদরুদ্দোজা চৌধুরীর উপস্থিতিতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল, জাতীয় পার্টি, এলডিপি, জাকের পার্টি ও খেলাফত আন্দোলনের একাংশকে নিয়ে গড়ে উঠা মহা-ঐক্যজোট পরবর্তীতে মহাজোট প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে এবং ইতোপূর্বে ঘোষিত ১২ জানুয়ারী, ২০০৭ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। এমতাবস্থায় ৪ দলীয় জোট ও মহাজোট সারাদেশে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়। দেশে গৃহযুদ্ধের দামামা বেঁজে উঠে।
দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা; ড. ফখরুদ্দিন ও মে. জে. মঈন-উ-আহমদের আগমন: জাতির এমন ক্রান্তিলগ্নে দেশের সশস্ত্র বাহিনী দেশকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাঁপের মূখে ১১ জানুয়ারী, ২০০৭ রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং জরুরী অবস্থা জারী করতঃ দেশের ৬৪ জেলায় সেনা মোতায়েন করেন।
রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ উভয় জোটের সমান সংখ্যক সদস্য নিয়ে ড. ফখরুদ্দিন আহমদকে প্রধান করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। এহেন পরিস্থিতিতে সেনা প্রধান দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তাঁদেরকে সংসদ ভবন সংলগ্ন পাশাপাশি বাসায় ভিভিআইপি মর্যাদায় সম্মানের সাথে আটক করে রাখেন। অসৎ রাজনীতিক, অসৎ ব্যবসায়ী রাজনীতিক, চোরাকারবারী ও অসৎ ব্যবসায়ীদের বেশীরভাগকে গ্রেফতার করা হলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেন। সশস্ত্র বাহিনীর শুদ্ধি অভিযানে জনগণ পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক স্থাপিত বিশেষ আদালতে এদের বিচারও শুরু হয়েছিল। কয়েকজনের বিভিন্ন মেয়াদে সাঁজাও হয়েছিল।
সেনাপ্রধান মঈন উ. আহমেদ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতায় ক্ষমতায় আসারও চেষ্টা করেছিলেন। আন্তর্জাতিক চাপের মূখে ও সশস্ত্র বাহিনীর কিছু সংখ্যক কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে তাঁর সে আশা ব্যর্থ হলো। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেন। সশস্ত্র বাহিনীর দুর্নীতি বিরোধী অভিযান বন্ধ হয়ে গেল। জনগণের কাঙ্খিত অর্থনৈতিক মুক্তি আলোর মুখ দেখলো না, হেরে গেলেন জনগণ।
আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় বারের মত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ ও তাঁদের ৫ বছরের শাসন: ২৯ ডিসেম্বর, ২০০৮ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলো। আওয়ামী লীগ পেলো ২৩০ আসন, বিএনপি ৩৫ আসন, জাতীয় পার্টি ৩০ আসন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সুবাদে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করলো। ৪ দলীয় জোট প্রথমে ১৮ দলীয় ও পরবর্তীতে ২০ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবীতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট সারাদেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুললো। শেখ হাসিনার সরকার ও ১৪ দলীয় জোট এ আন্দোলনকে দমনের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করলো। এতে কিছু সংখ্যক লোকের প্রাণহানি ঘটে ও বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষতিসাধিত হয়। গুম হলেন, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ আরও অনেকে। ঘুষ দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদ লুটপাট সম্ভবতঃ অব্যাহত থাকলো। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলোনা। জিতে গেলো ধনীক শ্রেণীর ব্যবসায়ী রাজনীতিকরা, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি ধরা-ছোয়ার বাইরেই থেকে যায়। এবারো হেরে গেলেন জনগণ।
৫ জানুয়ারী, ২০১৪ একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আরোহন: এমন অবস্থার প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার সরকার একতরফাভাবে ৫ জানুয়ারী, ২০১৪ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করেন। এ নির্বাচনে ১৫৪ জন সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন, যা নজিরবিহিন। শুরু হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকারের অগ্রযাত্রা।
ডিসেম্বর, ২০১৪ থেকে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ পর্যন্ত বিএনপি-র নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট সরকার পতনের দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন। এ আন্দোলনের সাথে যোগ হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতাকারী জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট ও অন্যান্য সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের বাঁচানোর জন্য তোড়জোড় কর্মকান্ড।
এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, অন্ততঃ ২০০ লোক প্রাণ হারায়। কয়েক হাজার গাড়ী পোঁড়ানো হয়। পোট্রোল বোমার আগুনে গাড়ীতে পুড়ে প্রাণ হারায় ১০০ জনেরও অধিক লোক, আহত হয় অন্ততঃ ৫০০ মানুষ। রাজনৈতিক সংঘর্ষে এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা ইতোপূর্বে আর কখনও দেখা যায়নি। কোন পক্ষই আপস করতে রাজী নয়। আওয়ামী লীগকে ছলে-বলে, কলে-কৌশলে ক্ষমতায় থাকতে হবে। বিএনপিকে ছলে-বলে, কলে-কৌশলে ক্ষমতায় যেতে হবে। তাঁরা জনগণের জন্য এমন দরদী নেতা হলেন যে, মানুষ হত্যা করে, মানুষের সম্পদ বিনষ্ট করে, মানুষকে আহত করে, হরতাল ও অবরোধের মাধ্যমে জনগণকে জিম্মি করে, জনগণের জীবনমান বিপন্ন করে ক্ষমতায় থাকতে হবে এবং ক্ষমতায় যেতে হবে। এরাতো জনগণের জীবনমান বাড়াতে, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যে রাজনীতি করেন না, রাজনীতি করেন ক্ষমতার সাধ গ্রহণ করার জন্যে।
পত্রিকায় চোখ রাখলেই এবং টেলিভিশন খুললেই দেখা যায়, অনেক রাজনীতিবিদ কবুতরের মত বলে যাচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা। সাবেক মাননীয় রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, প্রাক্তন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন। আমাদের প্রশ্ন উনারাতো মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের (আজকের বাংলাদেশ) সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। ওনারাতো মুক্তিযুদ্ধ করেননি। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ পশ্চিম পাকিস্তানে সম্ভবতঃ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোর্ট মার্শালের চেয়ারম্যান ছিলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালী কেউ ভারত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য এদেশে আসার চেষ্টা করলে তাঁকে শাস্তি দেয়া হতো ঐ কোর্ট মার্শালের রায়ে।
সাবেক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াতো শিশু সন্তানসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সুরক্ষিত বাসায় অবস্থান করেছিলেন। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাতো পরিবারসহ ধানমন্ডির একটি সুরক্ষিত বাসায় অবস্থান করেছিলেন। তাই মুক্তিযুদ্ধকালীন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাতো দেখেননি বা জানতেও পারেননি কিভাবে পাক সেনাবাহিনী এদেশীয় দালালদের (রাজাকার, আলবদর, আল শামস্্) সহযোগিতায় সেনা সদস্যদের, ইপিআর সদস্যদের, পুলিশ সদস্যদের, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষকদের, ছাত্র-ছাত্রীদেরসহ ৩০ লক্ষেরও অধিক মানুষকে হত্যা করেছেন। ৩ লক্ষের অধিক মা-বোনকে ধর্ষণ করেছেন, ১ কোটিরও অধিক লোককে দেশান্তারিত করেছেন, ৫০ লক্ষেরও অধিক লোককে অভ্যন্তরীণভাবে গৃহহীন করেছেন, ৫০ হাজারের অধিক যুদ্ধ সন্তান জন্ম নিয়েছেন, তাদেরকে লালন-পালনের জন্য বঙ্গবন্ধু বিদেশে পাঠিয়েছেন। উনারা কি জানেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি? যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তারা জানেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কাকে বলে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো- (১) সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও সামাজিক ন্যায় বিচার, (২) জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠাকরণ, (৩) জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়ন। এ ৩টির কোনটাই এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় নাই। স্বাধীনতার মূল মন্ত্রই ছিল জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, যা আজো আসেনি। আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ বস্তিতে বাস করেন, শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষের জীবনমান দারিদ্রের কষাঘাতে বিপর্যস্ত- নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। কিছু সংখ্যক লোক দেশের সিংহভাগ অর্থ-সম্পদের মালিক। ধনী-গরীবের ব্যবধান আকাশচুম্বী, এ অবস্থায় একটি দেশ চলতে পারেনা। তাই আগামীতে ভোট দেয়ার সময় ভেবে চিন্তে ভোট দেবেন, আপনারা কাকে ভোট দিচ্ছেন, কোন দলকে ভোট দিচ্ছেন। ৪৬ বছরের অধিকাংশ সময়ে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। তারাতো দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারেনি, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারেনি। লাঙ্গল, ধানের শীষ ও নৌকায় ভোট দিলে, তা আপনাদের বিরুদ্ধেই দেয়া হবে, তাই ভেবে-চিন্তে ভোট দেবেন। নির্বাচনের সময় এ সকল রাজনৈতিক দলের ধনী ব্যবসায়ী প্রার্থীরা অনেককে টাকা-কড়ি দেবেন, কাপড়-চোপড় দেবেন, বিড়ি-সিগারেট দেবেন। যাদেরকে দেবেন, তারা সাদরে তা গ্রহণ করবেন। কারণ তারাতো আপনাদেরই অর্থ সম্পদ লুটপাট করে রাতারাতি বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। আপনাদের টাকারই অংশ বিশেষ আপনাদেরকে দিচ্ছেন। কিন্তু তাদেরকে ভোট দেবেন না। ভোট আপনাদের পবিত্র আমানত। লাঙ্গলে ও ধানের শীষে কিংবা নৌকায় ভোট দিলে তা নিজের পায়ে কুড়াল মারার সামিল হবে। কারণ জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ আপনাদের প্রতিনিধিত্ব করেন না, উনারা কিছু সংখ্যক ধনী লোকের প্রতিনিধিত্ব করেন।
জীবনের শেষ প্রান্তে মুক্তিযোদ্ধারা: যে দু’লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের সে স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। তাদের বেশিরভাগ আজ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন; অনেকে রিক্সা চালিয়ে ও ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালিয়েছেন। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পার হওয়ার পর থেকে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তারা বর্তমানে মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন। এজন্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাধুবাদ জানাই। ইতোমধ্যে অনেকে মারা গিয়েছেন, যারা বেঁচে আছেন তাদেরও যাওয়ার পালা।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারে থাকাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরী করেছেন এবং করছেন। যাদের বয়স ৬০ এর উর্দ্ধে তারাই কেবল বলতে পারবেন, তাদের গ্রামের কে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। উপজেলা লেভেলে যাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যে মুক্তিযোদ্ধা যে গ্রামের ছিলেন সে গ্রামেরই ৬০ বছরের উর্দ্ধের বাসিন্দাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করতে হবে। দলীয় কারণে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরী করলে তা শুধু বাংলার মানুষের সাথেই বেঈমানী করা হবেনা, বরঞ্চ মহান সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান আল্লাহ্্ পাকের সাথেও বেয়াদবী করা হবে, কারণ মৃত্যুর পর লাশের কফিনে জাতীয় পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে তাদেরকে সম্মান প্রদর্শনপূর্বক দাফন করা হয়। টাকার লোভে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরীর মত পাপ কাজের সাথে জড়িত না হওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ভাইদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
জনগণের জীবন মানোন্নয়নে বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি) এর ২৫ বছরের ভিশন২০২৩: সালের মধ্যে নি¤œ মধ্য আয়ের দেশ, ২০২৮ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ, ২০৩৩ সালের মধ্যে উচ্চমধ্য আয়ের দেশ, ২০৩৮ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে “ভিলেজ সিটি” সমন্বিত শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করণ।
বেকারত্ব, ক্ষুধা ও দরিদ্রতা দূরীকরণে; নারী ও শিশু নির্যাতন, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্য, খুন ও ডাকাতি, গুম, বোমাবাজি, নির্বাচন বাণিজ্য, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে; যুগোপযোগী শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রবর্তনে; স্বল্প ব্যয়ে বাসস্থান ও যোগাযোগ উন্নয়নে; আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় তথা সামাজিক নিরাপত্তাবলয় তৈরীতে ০৮ (আট) দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যথাক্রমে ‘বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস’ (বিজেসি) ও ‘জাতীয় ছাত্র কংগ্রেস’ (এনএসসি) এর ব্যানারে স্ব-উদ্যোগে বাংলাদেশের প্রত্যেক গ্রাম/মহল্লায়, ইউনিয়ন/ওয়ার্ডে, উপজেলা/জেলা/বিভাগীয়/রাজধানী শহরে এবং প্রত্যেক স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐক্যবদ্ধ হোন। আহ্বায়ক কমিটি করুন, নিজেরা বাঁচুন এবং দেশ ও জাতিকে বাঁচানু
শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহ্্রাওয়ার্দী ও মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ৬ দফা কর্মসূচি দিয়েছিলেন বাংলার মানুষের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে; যা প্রকারান্তে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের তথা স্বাধীনতার চেতনার মূলমন্ত্র জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি আজো আসেনি। আমি মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন ১১ নভেম্বর- ২০১৬, বিজেসি’র জাতীয় সম্মেলনে দেশবাসীর উদ্দেশে সংশোধিত আকারে ৮ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। যাতে দেশের সাধারণ জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়।
বিজেসি’র আট দফা কর্মসূচি: ১.সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষায় এবং ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে তথা সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরীতে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করণ। ২. যুগোপযোগী বৈষম্যহীন শিক্ষা, চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রবর্তন করণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করণে ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধানের আলোকে জনসাধারণকে সতর্ক সচেতন করণ। ৩. রাষ্ট্র পরিচালনায় গতানুগতিক রাজনীতির বিপরীতে ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ রেখে “সমবাদ তত্ত্ব” (ঞযবড়ৎু ড়ভ ঊয়ঁধষরংস)- র ভিত্তিতে “গণতান্ত্রিক সমবাদ” (উবসড়পৎধঃরপ ঊয়ঁধষরংস) পদ্ধতি প্রবর্তন করণ। ৪. শ্রমিকের ন্যায্য মজুরী প্রদানসহ ধনী-গরীবের ব্যবধান কমাতে সম্পদের সুষম বন্টন ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করণে এবং নিঃস্ব থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শতকরা ৯৩ ভাগ জনগণের জীবনমান বাড়ানোর লক্ষ্যে এবং বেকার সমস্যার সমাধানসহ সকল মানুষের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান নিশ্চিত করণে হযরত ওমর (রা) শাসনামলের অনুকরণে রাষ্ট্র পরিচালনায় সমবাদ তত্ত্ব-র ভিত্তিতে ‘সামাজিক অর্থনীতি’ (ঝড়পরধষ ঊপড়হড়সু) প্রবর্তন করণ। ৫. মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বৃদ্ধিকরণসহ কোরআনে হাফেজ, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ বেকার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বেকার ভাতা প্রদান করণ। ৬. দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং অভ্যন্তরীণ আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় যুগোপযোগী সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবি; পুলিশবাহিনী, র্যাব ও আনসারবাহিনী গঠন করণ। ৭. খাদ্য নিরাপত্তা বলয় তৈরীতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, ভূমি সংস্কার আইন প্রণয়ন ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করণ। ৮. বাংলাদেশকে ৫টি প্রদেশ ও ১২টি বিভাগে বিভক্তি করণ এবং প্রত্যেক প্রদেশে ২৫টি করে শিল্পাঞ্চলসহ একটি করে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন করণ।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ: দীর্ঘ ৪৬ বছরে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ব্যালটের মাধ্যমে এদেরকে প্রতিহত করুন। এরশাদের লাঙ্গলে, বিএনপি’র ধানের শীষে এবং আওয়ামী লীগের নৌকায় আর ভোট দিয়ে ধোঁকাবাজিতে পড়বেন না। পরিশেষে দেশ ও জনগণের স্বার্থে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যে বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি)কে সমর্থন করবেন, ভোট দেবেন। দেশবাসীর প্রতি এ আহ্বান রইল।
লেখক- বঙ্গরত্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন (আবু)
সভাপতি- বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি)
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান, দৈনিক রাঙামাটি। তারিখ- ১০ এপ্রিল ২০১৭