রাজবন বিহারে দু’দিন ব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু

342

 

OLYMPUS DIGITAL CAMERA
॥স্টাফ রিপোর্টার ॥

বৌদ্ধধর্মীয় সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় তীর্থস্থান রাঙামাটি রাজবন বিহারে বেইনঘর ও সুতা কাটা উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মহামতি বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে বৃহস্পতিবার  দুপুর থেকে শুরু হয়েছে দু’দিনব্যাপী ৪৩তম কঠিন চীবর দানোৎসব।
রাতব্যাপী চলবে তুলা থেকে সুতা কেটে রং করণ, বেইন বুনন। তাছাড়া উৎসবে ফানুস উড়ানো, হাজার প্রদীপ প্রজ্জলন ও ধর্মীয় সংস্কৃতি অনুষ্ঠান। উৎসবকে ঘিরে মুখর হয়ে উঠেছে রাজবন বিহারসহ রাঙামাটি শহর। শহরে পুণ্যার্থীদের ভিড় বেড়েছে।

এবারের দানোৎসবে রাঙামাটির পূর্ণাথীদের পাশাপাশি খাগড়াছড়ি,বান্দরবান,চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যোগ দিতে এসেছে অগণিত পুণ্যার্থী। কানায় কানায় ভরে গেছে রাঙামাটি রাজবন বিহার এলাকা। চারদিক ধর্মপ্রাণ মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে পুরো রাজবন বিহার এলাকা।

রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় পঞ্চশীল গ্রহণের মধ্য দিয়ে রাঙামাটি রাজবন বিহারে শুরু হয় দু’দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব। বেলা আড়াইটায় বেইনঘর পরির্দশন ও উদ্বোধন শেষে সূত্রপাঠ করেন মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের শিষ্যমন্ডলী।

বিকাল তিনটায় ফিতা কেটে চরকায় সুতাকাটা বেইন বুনন উদ্বোধন করেন চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান, এডভোকেট সুষ্মিতা চাকমাসহ পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রশিদ জানান, এ কঠিন চিবর দানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোর করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় মহাউপাসিকা বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রং করণ, বয়ন ও সেলাই শেষে চীবর (বিশেষ পরিধেয় বস্ত্র) দানকার্য সম্পাদন করেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মহাদানযজ্ঞ সম্পাদন করার কারণে বৌদ্ধরা এই ধর্মীয় উৎসবকে ‘দানোত্তম কঠিন চীবর দান’ বলে।

রাঙামাটি রাজবন বিহারে এ মহাদানযজ্ঞ সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে। তার আগেও ১৯৭৪ সালে শ্রাবকবুদ্ধ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তে রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার তিনটিলা বৌদ্ধ বিহারে বিশাখার ঐতিহ্যবাহী নিয়মে এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান পুনঃ প্রবর্তন করেন। সেই থেকে প্রত্যেক বছর রাঙামাটি রাজবন বিহারসহ পার্বত্য তিন জেলার রাজবন বিহারের শাখাসমূহে বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পাদন করা হয়ে থাকে।