॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
১৪৪ ধারা জারির পরও শান্ত হয়নি খাগড়াছড়ি। শনিবার জেলা সদরের পর এবার সংঘর্ষ ডানা মেলেছে গুইমারায়। রোববার ১৪৪ ধারার মধ্যেই সড়ক অবরোধ পালন করে পাহাড়িরা। সড়ক অবরোধের সমর্থনে পিকেটিং করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টায়ারে ও গাছের গুড়ি ফেলে সড়কে আগুন দেয় তারা। এদিকে পিকেটারদের আক্রমণের ভয়ে ইট পাটকেল যোগাড় করে আরেক পক্ষ, বেঁধে যায় সংঘর্ষ, রোববার দিনভর থেমে থেমে চলা এই সংঘর্ষ থামাতে কঠোর পরিশ্রম করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এসময় সেনা বাহিনীর মেজরসহ ১৩ সেনা সদস্য এবং গুইমরা থানার ওসিসহ অন্তত ১০ পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে স্থানীয়রা। সরকারি সূত্রগুলো আহত হওয়ার কথা স্বীকার করলেও তাৎক্ষণিকভাবে সংখ্যা জানাতে পারেনি। দিনের বিভিন্ন সময়ে দুই পক্ষের গোলাগোলির আওয়াজ পেয়েছে স্থানীয়রা। এলাকায় তিনজন নিহত হবার খবর চাউর হলেও কোনো দায়িত্বশীল সূত্র নিহতের খবর নিশ্চিত করতে পারেনি।
এক স্কুল শিক্ষার্থী ধর্ষণের স্বীকার হওয়ার অভিযোগে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গত তিনদিন উত্তপ্ত হয়ে আছে খাগড়াছড়ি। এর মধ্যেই শুক্রবার ইউপিডিএফ ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে বন্দুক যুদ্ধে ৪জন নিহত হবার খবর রয়েছে। বিবাদমান উপজাতীয় দুই পক্ষের বন্দুক যুদ্ধের কথা পুলিশ স্বীকার করলেও পক্ষগুলো দায় স্বীকার করেনি।
রোববার অবরোধকারীরা বিভিন্ন বাড়িঘরে ইটপাটকেল ছোঁড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনা সদস্যদের সাথে তারা বাকবিতন্ডায় জড়ায়, এক পর্যায়ে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া। এ সময় অবরোধকারীরা সেনাবাহিনীকে লক্ষ করে ইটপাটকেট নিক্ষেপ করতে থাকলে ১১ সেনা সদস্য আহত হয়। পরে সেনাবাহিনী অবরোধকারীদের ধাওয়া করলে গুইমারায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল এর মুঠোফোন কল দেয় হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
গুইমারার রামসু বাজারের আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকায় অগ্নিসংযোগসহ স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি মাঠে নামে। এদিকে পাহাড়িদের পক্ষ হতে অনবরত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানী ও গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বরে অভিযোগ করেছে স্থানীয় অধিবাসীরা।
এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ডিসি এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার এর সভাপতিত্বে বিশেষ আইন-শৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমাসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ চলাকালে খাগড়াছড়িতে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনার পর ওইদিন দুপুর ২টা থেকে জেলা সদর ও গুইমারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক।
শনিবারের সংঘর্ষে উপজেলা, স্বনির্ভর, চেঙ্গী এস্কায়ার, নারিকেল বাগান, মহাজনপাড়া এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালী দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে ব্যাাপক উত্তোজন আর ইটপাটকেলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আহত হয়েছে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জনেরও বেশি।
ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত চয়ন শীল নামে এক কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ। ওই কিশোর বর্তমানে ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। অজ্ঞাতনামা আরো ২ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের দাবিতে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে খাগড়াছড়িতে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ ছিল রোববার।