সকলে মিলে দেশ গড়ার প্রত্যাশা প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার: সংলাপে বইছে নির্বাচনী সুবাতাস

532

স্টাফরিপোর্ট- ১ নভেম্বর ২০১৮, দৈনিক রাঙামাটি (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি):

সবাই মিলে দেশ গড়তে হবে বলে প্রত্যশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ ১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার গণভবনে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনার সূচনা বক্তব্যে উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশে তিনি এ প্রত্যাশা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে গত ৯ বছওে দেশের যে উন্নয়ন করেছে সেটা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এখন সবাই মিলে দেশকে গড়তে হবে।

এরআগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সভায় উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সংলাপে যোগ দিতে গণভবনে পৌঁছান ১৪ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। বিকেলে সাড়ে ৫ টার দিকে তারা ড. কামাল হোসেন বাসা থেকে গণভবনের উদ্দেশে রওয়ানা হন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের ২১ প্রতিনিধি এবং গণফোরাম সভাপতি ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২১ জন প্রতিনিধি অংশ নেবেন। এতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে।

অবশেষে অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কোন নাটকীয়তা ছাড়াই সংলাপ আয়োজন সম্পন্ন হওয়ায় দেশবাসী মহা খুশি। সকলেই বলছেন, আর যাই হোক দেশে এবার নির্বাচনের সুবাতাশ বইছে। নির্বাচনের পরে কি আলাপ আলোচনা হবে সে কথা না ভেবে সকলে নির্বাচনে আসছে সেটাই প্রত্যশার।

বিশেষ কোনো সমাধান হয়নি: ড. কামাল

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন সংলাপের পর বলেছেন, তারা তিন ঘণ্টা গণভবনে ছিলেন। তাদের সঙ্গে অন্য যে নেতৃবৃন্দ গিয়েছিলেন তারা সকলে তাদের অভিযোগগুলো নিজের মতো তুলে ধরেছেন। সরকারের ব্যাপারে যে তারা উদ্বিগ্ন সে কথাগুলো তুলে ধরেছেন। সবার কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনান বেশ লম্বা বক্তৃতা করেন। তবে ওখানে কোনো বিশেষ সমাধান তারা পাননি বলে বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী সংলাপ শেষে বেইলি রোডের বাসায় এসে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেছেন ড. কামাল হোসেন। ড. কামাল বলেন, সভা-সমাবেশের ব্যাপারে একটা ভালো কথা বলেছেন। আমরা আমাদের কথাগুলো বলে এসেছি উনি জানতে পেরেছেন। উনি উনার কথাগুলো বলেছেন আমরা শুনে এসেছি। গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আজকে যে আলোচনা, আমরা মনে করি এটা দীর্ঘসময় ধরে হয়েছে। শুরুতেই ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ হিসেবে সূচনা বক্তব্য রেখেছেন। এরপর আমাদের অন্যতম শীর্ষ নেতা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি উত্থাপন করেছেন। প্রতিনিধিদলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে অন্যান্য নেতা ও আমাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ঢাকাসহ সারা দেশে সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর কোনো বাধা থাকবে না। রাজনৈতিক দলসমূহ যে যেখানে সভা করতে চাইবে তাদেও কোনো বাধা দেবে না এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতারা যে গণগ্রেফতার হচ্ছে বা গায়েবি মামলা হচ্ছে এগুলো আমরা তুলে ধরেছি। তিনি বলেছেন- মামলাগুলোর আপনারা তালিকা দেন আমরা অবশ্যই সেগুলো বিবেচনা করব এবং যাতে হয়রানি না হয় সেদিকেও আমরা বিবেচনা করব। উত্থাপিত দাবি-দাওয়া নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন।

৭ দফা সংবিধানসম্মত নয় : কাদের

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা সংবিধানের বাইরে যেতে পারব না।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে যে সাত দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে, তার অনেকগুলো সংবিধানসিদ্ধ নয়। তবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য ঐক্যফ্রন্টকে আহ্বান জানানো হয়েছে এবং আলোচনার পথ এখনও খোলা আছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সংলাপ শেষে বের হয়ে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধানের আলোকেই আমরা আলোচনার করা চেষ্টা করেছি। নির্বাচন হবে, আলোচনা হবে সংবিধান অনুযায়ী। নির্বাচনকালীন সরকার এবং সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতার ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা হলে কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা সংবিধানের বাইরে কোনো আলোচনা করতে পারি না।

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে মিডিয়া কর্মীরা প্রশ্ন করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- খালেদার মামলার বিষয়টি আদালতের ব্যাপার। তা আইনের মাধ্যমে সমাধান হবে। এদিকে আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিম বলেছেন, আমরা সংবিধানের বাইওে কোনো আলোচনা করতে পারিনা। ৭ দফা সংবিধানসিদ্ধ নয়।

এর আগে সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন ১৪ দল এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সংলাপ শুরু হয়। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে ছিলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস ও ড. মঈন খান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে সক্রিয় জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক দুই সংসদ সদস্য এসএম আকরাম ও সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী ও মোস্তফা মহসিন মন্টু, মোকাব্বির খান, জগলুল হায়দার আফ্রিক এবং শফিক উল্লাহ।

অন্যদিকে সংলাপে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন- ২৩ জন প্রতিনিধি, এর মধ্যে আওয়ামী লীগের জোট শরিক দলগুলোর নেতারাও ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, মো. আবদুর রাজ্জাক, কাজী জাফর উল্যাহ, আবদুল মতিন খসরু, রমেশ চন্দ্র সেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জাসদের একাংশের সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল।

আলোচনায় সন্তুষ্ট নন মির্জা ফখরুল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন জোটের নেতাদের সঙ্গে সংলাপে সন্তুষ্ট নন বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংলাপ শেষে গণভবন থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় সংলাপ সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি একথা জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, সংলাপে আমরা সন্তুষ্ট নই। এ মুহূর্তে আর কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। এর আগে সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেওয়া ড. কামাল গণভবন থেকে বেরিয়ে বলেন, আলোচনা ভালো হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার পর পরই গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন জোটের নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার সংলাপ শেষে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে গণভবন থেকে বেরিয়ে আসেন নেতারা।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান। সূত্র, অন্যমিডিয়া